মালিকানা নিয়ে সু চির সঙ্গে ভাইয়ের দ্বন্দ্ব, হুমকিতে সেই ঐতিহাসিক বাড়ি

এ বাড়িতে ১৫ বছর গৃহবন্দী ছিলেন সু চি
ছবি: রয়টার্স ফাইল ছবি

মিয়ানমারের ইয়াঙ্গুন শহরে ইনিয়া লেকের পাশে ৫৪ থেকে ৫৬ ইউনিভার্সিটি অ্যাভিনিউতে দাঁড়িয়ে আছে উপনিবেশিক নির্মাণশৈলীতে তৈরি একটি বাড়ি। মিয়ানমারের অনেক বাসিন্দার কাছে এটি দেশের গণতান্ত্রিক লড়াইয়ের প্রতীক হিসেবে পরিচিত।

এ বাড়িতেই ১৫ বছর গৃহবন্দী অবস্থায় কাটিয়েছেন দেশটির গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী অং সান সু চি। তবে ঐতিহাসিক বাড়িটি এখন হুমকির মুখে। সম্প্রতি বাড়িটির মালিকানা প্রশ্নে লড়াইয়ে সু চির ভাইয়ের পক্ষে রায় দিয়েছেন মিয়ানমারের আদালত। খবর দ্য গার্ডিয়ানের।

কয়েক দশক ধরেই বাড়িটির মালিকানা নিয়ে অং সান সু চি এবং তাঁর বড় ভাই অং সান ও-এর মধ্যে আইনি লড়াই চলছিল। অং সান ও যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী একজন প্রকৌশলী। ২০০০ সালে তিনি প্রথম বাড়িটির মালিকানা প্রশ্নে মামলা করেন।

অং সান সু চি
ছবি: রয়টার্স ফাইল ছবি

এর পর থেকে বেশ কয়েকবারই এ মামলার শুনানি হয়েছে। সম্প্রতি অং সান ও-এর পক্ষেই রায় দিয়েছেন আদালত। এর মধ্য দিয়ে বাড়িটি বিক্রিরও সুযোগ থাকছে তাঁর।

সবশেষ শুনানি যখন হয়, তখন ৭৭ বছর বয়সী সু চি কারাবন্দী। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে সেনা অভ্যুত্থানের পর থেকেই বন্দী আছেন তিনি।

আদালতের রায় নিয়ে সু চির ভাই যা বলছেন

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ানকে সু চির ভাই অং সান ও বলেন, ২০১২ সালে দেওয়া এক রুলের পক্ষেই সম্প্রতি নেপিডোর সুপ্রিম কোর্ট রায় দিয়েছেন। ২০১২ সালের ওই রুলে অং সান ও-কে ওই বাড়ির সমমালিকানা দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল।

তাঁর ভাষ্য অনুযায়ী, ‘২০১২ সালের রুলে বলা হয়েছিল আমরা যদি বাড়িটিকে ভাগ করার ব্যাপারে সম্মত হতে না পারি, তবে যেন এটি নিলামে তুলে যে অর্থ পাওয়া যাবে, তা ভাগ করে নিই। কয়েক সপ্তাহ আগে আদালতের সবশেষ শুনানিতেও সে সিদ্ধান্ত বহাল রাখা হয়েছে।’

অং সান ও বাড়িটি বিক্রি করে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছেন কি না, সে ব্যাপারে কিছু বলতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন তিনি। বলেছেন, এটি ব্যক্তিগত বিষয়। তবে বাড়িটিকে ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ বলতে রাজি নন অং সান ও।

সরকারের কাছ থেকে বাড়িটি পেয়েছিল সু চির পরিবার

দুই একর (শূন্য দশমিক ৮ হেক্টর) জায়গায় নির্মিত বাড়িটি সু চির মা খিন কিয়িকে দিয়েছিল মিয়ানমার সরকার। ১৯৪৭ সালে সু চির বাবা মিয়ানমারের স্বাধীনতার নায়ক জেনারেল অং সান হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়ার পর সরকারিভাবে বাড়িটি তাঁকে দেওয়া হয়েছিল। ১৯৮৮ সালে গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলনে সামরিক ধরপাকড় শুরু হওয়ার কিছুদিনের মধ্যে খিন কিয়ি মারা যান। ওই গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন সু চি।

অং সান সু চিকে প্রথমবার গৃহবন্দী করা হয় ১৯৮৯ সালে। এভাবে ২০১০ সাল পর্যন্ত ১৫ বছর ওই বাড়িতে বন্দী থেকেছেন তিনি।

গৃহবন্দী সু চি যেভাবে ওই বাড়িতে সময় কাটিয়েছেন

প্রতিদিন কয়েক ঘণ্টা করে রেডিও শুনতেন, বই পড়তেন এবং ধ্যান করতেন তিনি। সপ্তাহ শেষে ওই ভিলা থেকে গণতন্ত্রপন্থী ভাষণ দিতেন সু চি। বাড়ির ফটকে উপস্থিত থাকা জনসমাগমের উদ্দেশে একটি টেবিলের ওপর দাঁড়িয়ে বক্তব্য দিতেন তিনি। হাজারো মানুষ তাঁর কথা শোনার জন্য সেখানে জড়ো হতেন।

পরবর্তীকালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন সু চির সঙ্গে দেখা করতে ওই বাড়িতে যান।

২০১২ সালে ছাড়া পাওয়ার পর সু চি আর ওই বাড়িতে থাকেননি। এখন জীর্ণশীর্ণ অবস্থায় থাকলেও অং সান ওর আইনজীবীর হিসাব অনুযায়ী, বাড়িটির মূল্য ৯ কোটি ডলার। তবে অং সান ও আদালতের নথিগুলো দেখাতে পারেননি।

স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনেও বলা হয়েছে, আদালত সু চির ভাই অং সান ও-এর পক্ষে রায় দিয়েছেন।

অভ্যুত্থানবিরোধী এবং নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা ২০২১ সালে ১৬ এপ্রিল সু চিকে স্টেট কাউন্সেলর করে জাতীয় ঐক্যের সরকার (এনইউজি) গঠন করেন। এই সরকার মূলত দেশের সীমান্তবর্তী এলাকায় এবং নির্বাসিত থেকে কাজ করছে। গত সপ্তাহে জাতীয় ঐক্যের সরকার বাড়িটিকে জাতীয় ঐতিহ্যের এলাকা হিসেবে ঘোষণা করে।

এর আওতায় বাড়িটি বিক্রি কিংবা ধ্বংস করাকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। যদিও সামরিক জান্তা ক্ষমতাচ্যুত না হওয়া পর্যন্ত এ ঘোষণা কার্যকরের সুযোগ নেই।

জাতীয় ঐক্যের সরকারের মুখপাত্র সাসা বলেন, এটি কেবল এক বাড়ি কিংবা সম্পত্তি নয়, এটি এমন এক স্থান, যেখানে তাঁকে (সু চিকে) ১৫ বছরের বেশি সময় আটকে রাখা হয়েছিল। এটি মিয়ানমারের জনগণের জন্য আশার এক শক্তিশালী প্রতীক।

এ বাড়ি নিয়ে আদালতের সবশেষ শুনানি চলার সময় সু চির প্রতিনিধিত্বকারী কেউ ছিলেন না বলেও উল্লেখ করেন তিনি।