পুলিশি হেফাজতে কুর্দি তরুণী মাসা আমিনির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ইরানে সৃষ্ট বিক্ষোভ নিয়ে মন্তব্য করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তিনি ইরানের বিক্ষোভে সহিংস দমন–পীড়নের বিষয়ে সতর্ক করে বলেন, এ ধরনের কর্মকাণ্ডের জন্য যুক্তরাষ্ট্র এমন কিছু ব্যবস্থা নেবে, যাতে ইরানকে মূল্য চুকাতে হবে। বাইডেনের কথার পাল্টা জবাব দিয়েছে ইরান। মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রকে মানবাধিকার নিয়ে ‘ভন্ডামি’ করার কথা বলেছে তেহরান।
ইরানের হিজাব নীতি ভঙ্গ করায় নৈতিকতা পুলিশের হেফাজতে থাকা কুর্দি তরুণী মাসার মৃত্যু হয় গত ১৬ সেপ্টেম্বর। এর পর থেকে দেশটিতে নারীরা বিক্ষোভ শুরু করেন। বিক্ষোভ তৃতীয় সপ্তাহে গড়িয়েছে। এ সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি স্কুলশিক্ষার্থীরাও এখন যুক্ত হয়েছে। দেশটির অধিকাংশ শহরেই ছড়িয়ে পড়েছে বিক্ষোভ। নরওয়েভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন ইরান হিউম্যান রাইটস গতকাল বলেছে, বিক্ষোভে দমন–পীড়নের ঘটনায় এ পর্যন্ত ১৩৩ জনের মৃত্যু হয়েছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেন, ‘এ সপ্তাহে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে সহিংস আচরণ করা অপরাধীদের আরও মূল্য চুকাতে হবে। আমরা ইরানি কর্মকর্তাদের দায়বদ্ধতা অব্যাহত রাখব এবং ইরানিদের স্বাধীনভাবে প্রতিবাদ করার অধিকারকে সমর্থন করব।’ বাইডেন আরও বলেন, তিনি প্রতিবাদকারীদের ওপর তীব্র দমন-পীড়নের খবরে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। ওয়াশিংটন ইরানের জনগণের পাশে থাকবে।
ইরানের ওপর আগে থেকে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তবে নতুন করে কী ধরনের নিষেধাজ্ঞার কথা বিবেচনা করা হচ্ছে, তার ইঙ্গিত দেননি বাইডেন।
পুলিশি হেফাজতে মাসা আমিনির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন শহরে ছড়িয়ে পড়া বিক্ষোভের জন্য ‘বিদেশি শত্রু’দের দায়ী করে আসছে ইরান সরকার। ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি বলেছেন, দেশের শত্রুদের ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হয়েছে। ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি গত সোমবার দেশটিতে অস্থিরতা সৃষ্টির জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলকে দায়ী করেছেন।
এদিকে গতকাল বাইডেনের মন্তব্যের পর ইরানের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র নাসের কানানি বলেন, মানবাধিকার নিয়ে কথা বলার আগে বাইডেনের উচিত তাঁর নিজের দেশের মানবাধিকার রেকর্ড সম্পর্কে চিন্তা করা। যদিও ভন্ডামির জন্য চিন্তার দরকার হয় না। যুক্তরাষ্ট্র ইরানের ওপর যে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রেখেছে, তা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের স্পষ্ট উদাহরণ।
গত ১৬ সেপ্টেম্বর পুলিশি হেফাজতে কুর্দি মাসা আমিনির মৃত্যুর পর সৃষ্ট বিক্ষোভের তিন সপ্তাহ পর তিনি এ বিষয়ে প্রথম মন্তব্য করেন। ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা বলেন, ‘আমি স্পষ্টভাবে বলছি, এই দাঙ্গা এবং নিরাপত্তাহীনতা যুক্তরাষ্ট্র এবং দখলদার মিথ্যা ইহুদি শাসকের কূটচাল। এ ছাড়া বিদেশে থাকা কিছু ইরানি দেশদ্রোহীর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের পালিত এজেন্ট এতে যুক্ত রয়েছে।’
আয়াতুল্লাহ আলী খোমেনি আরও বলেন, ‘তরুণীর মৃত্যু আমাদের সবার হৃদয়ে আঘাত করেছে। কিন্তু এটা স্বাভাবিক নয় যে কিছু মানুষ তদন্ত বা প্রমাণ ছাড়াই সড়ককে বিপজ্জনক করে তুলবে, কোরআন শরিফ পোড়াবে, পর্দানশীন নারীদের হিজাব তুলে দেবে, গাড়ি ও মসজিদে আগুন দেবে।’
সামরিক গ্র্যাজুয়েশন অনুষ্ঠানে বক্তৃতায় খামেনি বলেন, পুলিশ অপরাধীদের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে এবং সমাজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাধ্য। তাদের দুর্বল করা মানে অপরাধীদের শক্তিশালী করা। যারা পুলিশকে আক্রমণ করে তাঁরা অপরাধী, ঠগ ও অপরাধীদের সামনে মানুষকে নিরীহ করে তোলে।