শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের জন্য মিয়ানমারের মানবাধিকারকর্মী জারনির নাম প্রস্তাব
২০২৪ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মিয়ানমারের নাগরিক ড. মং জারনির নাম প্রস্তাব করেছেন উত্তর আয়ারল্যান্ডের প্রখ্যাত শান্তিবাদী নেতা মাইরেড করিগান ম্যাগুইয়ার। তিনি নিজেই ১৯৭৬ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার পেয়েছিলেন। ড. মং জারনি মিয়ানমারের মানবাধিকারকর্মী। তিনি গণহত্যা বিষয়ে বিশেষজ্ঞ। বর্তমানে তিনি যুক্তরাজ্যে নির্বাসিত জীবন যাপন করছেন।
চলতি সপ্তাহে বার্মিজ ঐতিহ্যবাহী নতুন বছরের প্রাক্কালে দ্য ফোর্সেস অব রিনিউয়াল সাউথ ইস্ট এশিয়া (এফওআরএসইএ) এবং দ্য ফ্রি রোহিঙ্গা কোয়ালিশন (এফআরসি) যৌথভাবে মং জারনিকে ম্যাগুইয়ারের মনোনয়ন দেওয়ার বিষয়টি জানায়। তিন দশক ধরে জারনির ‘বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে শান্তি ও সম্প্রীতির জন্য সক্রিয় এবং অক্লান্তভাবে কাজ করার’ কাজের ওপর ভিত্তি করে তাঁকে এ মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।
নোবেল কমিটির কাছে ম্যাগুইয়ারের দেওয়া চিঠিতে মিয়ানমারে গণতন্ত্রের জন্য জারনির অবদান এবং তিব্বত, পূর্ব তিমুর, নাইজেরিয়া, ভারত, থাইল্যান্ড, ফিলিস্তিন ও ইহুদি প্রবাসীদের শান্তি ও স্বাধীনতার জন্য যারা অহিংস প্রচার চালিয়েছেন, তাদের প্রতি জারনির সক্রিয় সমর্থনকে বিশেষভাবে তুলে ধরা হয়েছে।
জারনি বলেন, কিছু পুরস্কারের কারণে নোবেল পুরস্কার ‘বেশ কলঙ্কিত’ হয়েছে। এর মধ্যে প্রয়াত হেনরি কিসিঞ্জারই ছিলেন সবচেয়ে কুখ্যাত। জারনি আরও বলেন, ‘একজন উগ্র সাম্রাজ্যবাদবিরোধী হিসেবে আমি ম্যাগুইয়ারের পছন্দ হতে পেরে অনেক গর্বিত।’
মাইরেড করিগান ম্যাগুইয়ার দীর্ঘ সময় ধরে সাম্রাজ্যবাদবিরোধী আন্দোলন করে গেছেন। তিনি ইসরায়েলের পারমাণবিক তথ্য ফাঁসকারী মোরদেচাই ভানুনু, নিপীড়িত ফিলিস্তিনি এবং উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের পক্ষে দাঁড়িয়েছেন। অতীতে তিনি এডওয়ার্ড স্নোডেন, চেলসি ম্যানিং ও জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জকে মনোনয়ন দিয়েছিলেন।
৬০ বছর বয়সী মং জারনি ফ্রি বার্মা কোয়ালিশন (১৯৯৫-২০০৪), এফওআরএসইএসহ বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক ও প্ল্যাটফর্মের সহপ্রতিষ্ঠাতা ও সমন্বয়ক। জারনি বর্তমানে মিয়ানমারের সবচেয়ে পুরোনো জাতিগত প্রতিরোধ সংগঠন দ্য কারেন ন্যাশনাল ইউনিয়নের (প্রতিষ্ঠা ১৯৪৭) উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করছেন।
মিয়ানমারের জেনারেল নে উইনের ‘সমাজতান্ত্রিক’ সামরিক একনায়কতন্ত্রের শাসনকালে এক সেনা পরিবারে জারনির জন্ম ও বেড়ে ওঠা । তাঁর মা ছিলেন শিক্ষাবিদ আর বাবা ছিলেন ব্যবসায়ী। কিশোর বয়সে তিনি মা-বাবার কাছ থেকে সম্প্রদায়কে সংগঠিত করতে শিখেছেন। তাঁর মা-বাবাও তাঁদের এলাকার মানুষদের আত্মনির্ভরশীল করে তোলার উদ্যোগে নেতৃত্ব দিয়েছেন। ১৯৮৮ সালের ৮ আগস্ট মিয়ানমার জুড়ে বিক্ষোভের আগে আগে জুলাই মাসে পড়াশোনা করতে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া পাড়ি দেন।
দীর্ঘ ১৭ বছর যুক্তরাষ্ট্রে থাকার সময় তিনি শিকাগোতে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কাজ করেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রেই প্রখ্যাত পরিবেশবিদ অ্যানি লিওনার্ডকে বিয়ে করেন। তাদের এক মেয়ে রয়েছে।
২০০৫ সালে জারনি যুক্তরাজ্যে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিজিটিং রিসার্চ ফেলো হিসেবে আসেন। পরবর্তীকালে তিনি ইউনিভার্সিটি ব্রুনাই দারুসসালামে এশিয়ান স্টাডিজের সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কাজ করেন, কিন্তু মিয়ানমারে রোহিঙ্গা গণহত্যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদীদের সঙ্গে তাঁর সম্পৃক্ততার ওপর বিশ্ববিদ্যালয় বিধিনিষেধ আরোপ করায় তিনি বিশ্ববিদ্যালয়টি ছেড়ে দেন। এরপর ২০১৪ সালে লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকস থেকে ফেলোশিপের প্রস্তাব পেয়েছিলেন। কিন্তু গণহত্যাবিরোধী কর্মকাণ্ডে সক্রিয় থাকার স্বার্থে তিনি সেই প্রস্তাব গ্রহণ করেননি।
জারনি যুক্তরাজ্যে আবারও একটি বিয়ে করেন। তাঁর এই স্ত্রী একজন জ্যেষ্ঠ গবেষণা সহকারী। তারা কেন্টে থাকেন। তাদের ১৪ বছরের এক মেয়ে রয়েছে।