ভারতের আপত্তি সত্ত্বেও শ্রীলঙ্কার বন্দরে ভিড়ছে বিতর্কিত চীনা জাহাজ
চীনের একটি বিতর্কিত গবেষণা জাহাজের শ্রীলঙ্কায় প্রবেশ নিয়ে ভারত উদ্বেগ জানিয়ে আসছিল। এ নিয়ে কলম্বোর কাছে অভিযোগও দিয়েছিল নয়াদিল্লি। তবে দিল্লির উদ্বেগ সত্ত্বেও জাহাজটি শ্রীলঙ্কায় প্রবেশের অনুমতি দিয়েছে দেশটির সরকার। আজ শনিবার কলম্বোর পক্ষ থেকে এ অনুমতি দেওয়া হয়েছে। দিল্লির উদ্বেগ ছিল, জাহাজটি দিয়ে তাদের সামরিক অবকাঠামোতে নজরদারি চালাবে চীন। শ্রীলঙ্কার সরকারি কর্মকর্তাদের বরাতে আজ শনিবার এ খবর জানিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি।
আন্তর্জাতিক রুটে জাহাজ চলাচল এবং এ বিষয়ে বিশ্লেষণের কাজ করে এমন একাধিক ওয়েবসাইটের বিবরণ অনুযায়ী, দ্য ইউয়ান ওয়াং ৫ নামের ওই চীনা জাহাজ গবেষণা ও জরিপ করার কাজে নিয়োজিত। কিন্তু ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদনে দাবি করা হচ্ছে, চীনের ওই জাহাজ গুপ্তচরবৃত্তির কাজও করে থাকে।
এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শ্রীলঙ্কা হচ্ছে ভারত মহাসাগরে অবস্থিত একটি দ্বীপরাষ্ট্র। ভারতীয় মহাসাগরে বেইজিংয়ের ক্রমবর্ধমান আধিপত্য বিস্তার এবং শ্রীলঙ্কার ওপর চীনের প্রভাব জোরদার করার বিষয়টি নিয়ে নয়াদিল্লি বেশ উদ্বিগ্ন। নিজেদের প্রভাব বলয়ের মধ্যে চীনকে অন্যতম প্রতিপক্ষ মনে করে থাকে ভারত।
শ্রীলঙ্কার হাম্বানটোটা সমুদ্রবন্দরের নিয়ন্ত্রণ এখন চীনের একটি কোম্পানির হাতে। চীনা ওই জাহাজ হাম্বানটোটা বন্দরে প্রবেশের কথা ছিল ১১ আগস্ট। তবে ভারত তাতে আপত্তি জানায়। দিল্লির পক্ষ থেকে কলম্বোকে তখন বলা হয়, অনির্দিষ্টকালের জন্য জাহাজটির শ্রীলঙ্কার বন্দরে প্রবেশ পিছিয়ে দেওয়ার বিষয়টি তারা যেন বেইজিংকে জানিয়ে দেয়।
কিন্তু শ্রীলঙ্কার হারবর মাস্টার নির্মল পি সিলভা জানিয়েছেন, শ্রীলঙ্কার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে চীনের ওই জাহাজের হাম্বানটোটা বন্দরে প্রবেশ করার অনুমতিপত্র ইতিমধ্যে তিনি পেয়েছেন। যাতে বলা হয়েছে, ১৬ থেকে ২২ আগস্টের মধ্যে হাম্বানটোটা সমুদ্রবন্দরে জাহাজটির প্রবেশের ব্যাপারে অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
বন্দর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সিলভা এএফপিকে বলেন, ‘জাহাজটি বন্দরে প্রবেশ করার অনুমতিপত্র আজ (শনিবার) আমার হাতে এসে পৌঁছেছে। বন্দরে সব ধরনের সহযোগিতা করার জন্য জাহাজটি কর্তৃপক্ষ স্থানীয় যে প্রতিনিধি (এজেন্ট) নিয়োগ দিয়েছে, তাঁদের সঙ্গে আমরা ব্যাপারটি নিয়ে কাজ শুরু করব।’
শ্রীলঙ্কার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, জাহাজটি বন্দরে নোঙর করার ব্যাপারে দেওয়া অনুমোদনের নবায়ন করেছে কলম্বো। প্রাথমিকভাবে গত ১২ জুলাই জাহাজটির শ্রীলঙ্কার বন্দরে প্রবেশের অনুমতি দিয়েছিল।
হাম্বানটোটা বন্দরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চীনের ওই জাহাজ সর্বশেষ গতকাল শুক্রবার দিবাগত রাতে শ্রীলঙ্কার দক্ষিণ–পূর্ব উপকূল থেকে প্রায় এক হাজার কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছিল। তবে সেখান থেকে জাহাজটি ধীরে ধীরে হাম্বানটোটা গভীর সমুদ্রবন্দরের দিকে অগ্রসর হচ্ছিল বলেও জানান ওই কর্মকর্তারা।
১১২ কোটি মার্কিন ডলারের বিনিময়ে শ্রীলঙ্কা চীনের কাছে ৯৯ বছরের জন্য হাম্বানটোটা গভীর সমুদ্রবন্দর লিজ দিয়েছে। বন্দরটি নির্মাণ করার জন্য চীনা একটি কোম্পানিকে ১৪০ কোটি ডলারের কিছু কম পরিশোধ করতে হয়েছিল শ্রীলঙ্কার সরকারকে। ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ার পরপরই বন্দরটি লিজ দিয়ে দেয় শ্রীলঙ্কা।
এদিকে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীনের দ্য ইউয়ান ওয়াং ৫ মহাকাশ ও কৃত্রিম উপগ্রহ নজরদারি করার কাজে নিয়োজিত। এ ছাড়া বিশেষ করে আন্তমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের কাজে জাহাজটি ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
ভারত সরকার চীনের জাহাজটির শ্রীলঙ্কার বন্দরে প্রবেশ করার বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। ভারতের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, জাহাজটি দিয়ে নয়াদিল্লির সামরিক অবকাঠামোগুলোয় নজরদারি চালানো হতে পারে। শুধু উদ্বেগ নয়, ভারত সরকার এ নিয়ে কলম্বোর কাছে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দিয়েছে।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, দিল্লির নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক স্বার্থের ওপর এ ধরনের যেকোনো নজরদারির বিষয়টি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করবে তারা এবং নিজেদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেবে।