স্ত্রীর গাড়িতে গাঁজা রেখে ফেঁসে গেলেন তিনি
সিঙ্গাপুরে স্ত্রীকে ফাঁসানোর চেষ্টায় তাঁর গাড়িতে গাঁজা রেখে দিয়েছিলেন স্বামী তান জিয়াংলং। তবে শেষ পর্যন্ত তাঁর সে প্রচেষ্টা সফল হয়নি। উল্টা স্বামী নিজেই ফেঁসে গেছেন। তাঁর প্রায় চার বছরের কারাদণ্ড হয়েছে।
২০২১ সালে তান জিয়াংলং এবং তাঁর স্ত্রীর বিয়ে হয়। ২০২১ সালেই তাঁরা একে অপরের থেকে আলাদা হয়ে যান। তাঁরা আনুষ্ঠানিকভাবে বিচ্ছেদের আবেদন করতে পারছিলেন না। কারণ, সিঙ্গাপুরের নিয়ম অনুযায়ী কোনো দম্পতির বিয়ের বয়স অন্তত তিন বছর না হলে তাঁরা বিচ্ছেদের আবেদন করতে পারেন না। তান এ জন্য স্ত্রীকে ফাঁসিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করেন।
তান ভেবেছিলেন, স্ত্রীর বিরুদ্ধে যদি অপরাধের অভিযোগ থাকে, তবে হয়তো আনুষ্ঠানিকভাবে তিনি বিচ্ছেদের সুযোগ পাবেন।
যেই ভাবা, সেই কাজ। ৩৭ বছর বয়সী তান জিয়াংলং আধা কেজির বেশি গাঁজা স্ত্রীর গাড়ির পেছনে যাত্রীর আসনের মাঝখানে রেখে দেন। কারণ, তান জানতেন মাদক চোরাচালানের দায়ে স্ত্রীকে ফাঁসাতে এবং তাঁর মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিত করতে এ পরিমাণ মাদকই যথেষ্ট। গত বছর বার্তা আদান-প্রদানের অ্যাপ টেলিগ্রামে প্রেমিকাকে তান লিখেছিলেন, স্ত্রীকে ফাঁসাতে তিনি ‘নিখুঁত অপরাধ’ করেছেন।
বিশ্বে যে কয়েকটি দেশে মাদকবিরোধী কঠোর আইন বিদ্যমান, তার একটি সিঙ্গাপুর। দেশটির সরকারের দাবি, মাদকসংশ্লিষ্ট অপরাধ ঠেকাতে এ ধরনের আইনগুলো জরুরি। সিঙ্গাপুরে কার কাছ থেকে কী পরিমাণ মাদক জব্দ করা হলো, তার ভিত্তিতে সাজার ধরন নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। মাদক বহনকারীকে সাধারণত কারাদণ্ড দেওয়া হয়। তবে দেশটিতে মাদক চোরাচালানকারীদের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত হতে পারে।
গত ১৬ অক্টোবর টেলিগ্রামের মাধ্যমে একটি গাঁজা ব্যবসায়ী চক্রের সঙ্গে যোগাযোগ করে গাঁজা কেনেন তান। গাঁজা যেন ৫০০ গ্রামের বেশি হয়, তা নিশ্চিত করতে তা মেপেও দেখেন তিনি। এর পরদিন স্ত্রীর গাড়িতে গাঁজা রেখে দেন তান।
তবে তান জানতেন না যে তাঁর স্ত্রীর গাড়িতে একটি নজরদারি ক্যামেরা লাগানো আছে। পার্কিংয়ে রাখা গাড়িটিতে কী হচ্ছে, তা তাঁর স্ত্রী ফোনে নোটিফিকেশনের মাধ্যমে জানতে পারেন। নজরদারি ক্যামেরার ফুটেজ পরীক্ষা করে স্ত্রী দেখেন, তান তাঁর গাড়ির আশপাশে ঘোরাফেরা করছেন। পরে স্ত্রী পুলিশকে তানের ব্যাপারে জানান এবং বলেন তান তাঁকে হয়রানি করছেন।
তদন্ত চলাকালে পুলিশ গাড়িতে তল্লাশি চালায়। গাড়িতে মাদক পাওয়ায় তারা তানের স্ত্রীকে গ্রেপ্তার করে। তবে তানের স্ত্রীর বিরুদ্ধে কোনো অপরাধের প্রমাণ না পাওয়ায় পুলিশ তানের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে এবং তাঁকে গ্রেপ্তার করে।
তানের আইনজীবী আদালতে যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের সময় বলেছিলেন, অপরাধটি করার সময় তাঁর মক্কেল হতাশায় ভুগছিলেন। তবে আদালত তা প্রত্যাখ্যান করেন। চিকিৎসকের দেওয়া তথ্য উদ্ধৃত করে আদালত জানায়, ঘটনার সময় তান কোনো মানসিক সমস্যায় ভুগছিলেন না।
নিজের কাছে গাঁজা রাখার অভিযোগে গতকাল বৃহস্পতিবার তানের তিন বছর ১০ মাসের কারাদণ্ড হয়েছে। যদিও তান যে অপরাধ করেছেন, তাতে তাঁর পাঁচ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারত। তবে আদালতের নথিতে বলা হয়েছে, বিচার প্রক্রিয়ায় সহযোগিতা করায় এবং বিচারের আগেই দোষ স্বীকার করায় তানের অপেক্ষাকৃত কম সাজা দেওয়া হয়েছে।
গত বছর দোষী সাব্যস্ত দুই মাদক চোরাচালানকারীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছে সিঙ্গাপুর। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো এর বিরোধিতা করেছিল।