আদালতের হস্তক্ষেপে ক্ষমতাচ্যুত হলেন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন

দক্ষিণ কোরিয়ার অভিশংসিত প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইওল। সিউলে সাংবিধানিক আদালতে, ২৩ জানুয়ারি ২০২৫ফাইল ছবি : রয়টার্স

দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন সুক–ইওল শেষমেশ ক্ষমতাচ্যুতই হলেন। এর আগে তাঁকে অভিশংসিত করে পার্লামেন্টের নেওয়া পদক্ষেপকে দেশটির সাংবিধানিক আদালত আজ শুক্রবার দেওয়া রায়ে বহাল রাখেন।

গত বছর প্রেসিডেন্ট ইউন স্বল্প সময়ের জন্য দেশে সামরিক আইন জারি করেছিলেন। এর মধ্য দিয়ে তিনি বিদ্রোহ করেছেন, এমন অভিযোগ আনেন রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলিরা। এ ছাড়া তাঁর এমন পদক্ষেপে বিক্ষোভ শুরু হলে কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক সংকটে পতিত হয় দেশটি।

বিক্ষোভের জেরে একপর্যায়ে পার্লামেন্ট প্রেসিডেন্টকে অভিশংসিত করে। এখন আদালতের এ রায়ের ফলে দেশটির ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ক্ষমতাসীন কোনো প্রেসিডেন্ট দোষী সাব্যস্ত হলেন।

প্রেসিডেন্ট ইউন সুক–ইওলকে অভিশংসিত করা নিয়ে সাংবিধানিক আদালতের রায়কে সামনে রেখে প্রেসিডেনশিয়াল বাসভবনের সামনে সমবেত বিক্ষোভকারীদের কারও কারও হাতে তাঁর ছবিসংবলিত পতাকা শোভা পায়। সিউল, দক্ষিণ কোরিয়া, ৪ এপ্রিল ২০২৫
ছবি: রয়টার্স

দক্ষিণ কোরিয়ার সংবিধান অনুযায়ী, ইউন সুক–ইওল ক্ষমতাচ্যুত হওয়ায় ৬০ দিনের মধ্যে দেশে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নতুন প্রেসিডেন্ট দায়িত্ব গ্রহণ না করা পর্যন্ত বর্তমান প্রধানমন্ত্রী হান ডাক–সু ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করবেন।

দক্ষিণ কোরিয়ার সংবিধান অনুযায়ী, ইউন সুক-ইওল ক্ষমতাচ্যুত হওয়ায় ৬০ দিনের মধ্যে দেশে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নতুন প্রেসিডেন্ট দায়িত্ব গ্রহণ না করা পর্যন্ত বর্তমান প্রধানমন্ত্রী হান ডাক-সু ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করবেন।

ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি মুন হিয়ুং–বে তাঁর রায়ে বলেন, সংবিধান অনুযায়ী প্রেসিডেন্টের যে ক্ষমতা ছিল, তিনি তার বাইরে গিয়ে এমন কাজ করেছেন, যা তাঁর দায়িত্ব ও কর্তৃত্বের লঙ্ঘন ঘটিয়েছে। একই সঙ্গে তাঁর ওই পদক্ষেপ গণতন্ত্রের জন্য এক গুরুতর চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে।

ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, ‘(ইউন) জনগণের আস্থার সঙ্গে ঘোর বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রে তাঁরাই হলেন সার্বভৌম সদস্য।’ সামরিক শাসন জারি করে ইউন সমাজের সর্বক্ষেত্রে—অর্থনীতি ও পররাষ্ট্রনীতিতে বিশৃঙ্খলা তৈরি করেছেন বলেও পর্যবেক্ষণ দেন তিনি।

সাংবিধানিক আদালতের আটজন বিচারপতির সর্বসম্মতিক্রমে এ রায় দেওয়া হয়।
এর আগে ইউনকে ক্ষমতাচ্যুত করার দাবিতে আদালতের বাইরে বিক্ষোভ যোগ দেন হাজার হাজার মানুষ। রায়কে সামনে রেখে এই বিক্ষোভকারীদের অনেকেই গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে শিবির গেঁড়ে সেখানে অপেক্ষা করেন। রায় শোনার পর উল্লাসে ফেটে পড়েন তাঁরা। স্লোগান দেন, ‘আমরা জিতেছি।’

এদিকে বিদ্রোহের অভিযোগে ৬৪ বছর বয়সী এই প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলাও বিচারাধীন। দক্ষিণ কোরিয়ার ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনিই প্রথম গত ১৫ জানুয়ারি গ্রেপ্তার হন। তবে একটি আদালত তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা তুলে নিলে গত মার্চে মুক্তি পান তিনি।

আরও পড়ুন

স্বল্পস্থায়ী ওই সামরিক আইন জারির জেরে গত ১৪ ডিসেম্বর ইউন সুককে পার্লামেন্টে অভিশংসিত করা হয়। প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব থেকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয় তাঁকে।

দক্ষিণ কোরিয়ার সাম্প্রতিকতম এ সংকটের শুরু ৩ ডিসেম্বর। ওই দিন হঠাৎ দেশে সামরিক আইন জারি করেন তিনি। এ পদক্ষেপ গ্রহণের পেছনে তিনি যুক্তি দেন, ‘রাষ্ট্রবিরোধী’ শক্তিকে নির্মূল করতে এটি প্রয়োজন। এ ছাড়া তিনি অভিযোগ করেন, বিরোধী ডেমোক্রেটিক পার্টি পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতার অপব্যবহার করছে, যা তাঁর কথায় দেশকে ধ্বংস করছে।

(ইউন) জনগণের আস্থার সঙ্গে ঘোর বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রে তাঁরাই হলেন সার্বভৌম সদস্য। সামরিক শাসন জারি করে তিনি সমাজের সর্বক্ষেত্রে, অর্থনীতি ও পররাষ্ট্রনীতিতে বিশৃঙ্খলা তৈরি করেছেন।
মুন হিয়ুং-বে, ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি  

প্রেসিডেন্টের এ পদক্ষেপের বিরুদ্ধে পার্লামেন্ট সদস্যরা সোচ্চার হলে মাত্র ছয় ঘণ্টা পরই তিনি তাঁর ডিক্রি তুলে নেন। ইউন অবশ্য বলেছিলেন, তিনি সর্বোতভাবে সামরিক শাসন জারি কখনোই চাননি।

আরও পড়ুন

এরপর কয়েক মাস ধরে দক্ষিণ কোরিয়ায় বিক্ষোভ শুরু হয়। দেশটিতে চলা রাজনৈতিক সংকটের সুরাহা হবে কি না, আজকের রায় প্রদানের আগপর্যন্ত তা নিয়ে অনিশ্চয়তা ছিল।

প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইওলকে অভিশংসিত করা নিয়ে সাংবিধানিক আদালতের রায় শোনার অপেক্ষায় এ আদালতের কাছে সমবেত হন বিপুলসংখ্যক মানুষ। সিউল, দক্ষিণ কোরিয়া, ৪ এপ্রিল ২০২৫
ছবি: রয়টার্স

উল্লেখ্য, ইউনকে গ্রেপ্তারে তদন্তকারী কর্মকর্তাদের প্রচেষ্টা প্রাথমিকভাবে রুখে দিয়েছিলেন তাঁর নিরাপত্তা বাহিনীর (প্রেসিডেনশিয়াল সিকিউরিটি সার্ভিস-পিএসএস) সদস্যরা। পরে তাঁকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হন তদন্তকারী কর্মকর্তারা। যদিও ইউন দাবি করেছেন, তিনি কোনো ভুল করেননি।

বিদ্রোহের অভিযোগে ইউনের বিরুদ্ধে যে মামলা চলমান, তাতে দোষী সাব্যস্ত হলে তাঁর আজীবন কারাদণ্ড বা মৃত্যুদণ্ড হতে পারে। তবে গত কয়েক দশকে দক্ষিণ কোরিয়ায় কোনো মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়নি।

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন