হংকংয়ে বিতর্কিত জাতীয় নিরাপত্তা বিল পাস
হংকংয়ের আইনপ্রণেতারা গতকাল মঙ্গলবার সর্বসম্মতিক্রমে নতুন একটি জাতীয় নিরাপত্তা বিল পাস করেছেন। অঞ্চলটির আইন পরিষদে উত্থাপনের দুই সপ্তাহের মধ্যে বিলটি পাস হলো। সমালোচকেরা বলছেন, আইনটি চীনশাসিত হংকংয়ের স্বাধীনতাকে আরও হুমকিতে ফেলবে।
আর্টিকেল ২৩ নামের আইনটির আওতায় বিশ্বাসঘাতকতা, নাশকতা, রাষ্ট্রদ্রোহ, রাষ্ট্রের গোপন তথ্য চুরি, বহিরাগত হস্তক্ষেপ ও গুপ্তচরবৃত্তির মতো অপরাধের ক্ষেত্রে কয়েক বছর থেকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।
হংকংয়ের নেতা জন লি বলেছেন, আগামী শনিবার থেকে আইনটি কার্যকর হবে। একে ‘ঐতিহাসিক মুহূর্ত’ বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।
২০২০ সালে হংকংয়ে চীনের চাপিয়ে দেওয়া জাতীয় নিরাপত্তা আইন থাকা সত্ত্বেও এই নতুন আইন পাস হলো। ২০১৯ সালে হংকংয়ে সংঘটিত সহিংস বিক্ষোভে অংশ নেওয়া গণতন্ত্রপন্থীদের বন্দী করতে ২০২০ সালে চীন ওই আইন ব্যবহার করেছিল। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে তখন চীনের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছিল হংকংয়ের নেতা লির বিরুদ্ধেও।
গতকাল জাতীয় নিরাপত্তা আইন পাসের ক্ষেত্রে হংকংয়ের কিছু আইনপ্রণেতা আরও নিষেধাজ্ঞার সম্মুখীন হওয়া ও সম্ভাব্য ‘ক্রেডিট রেটিং’ অবনমনের ঝুঁকি এড়িয়ে গেছেন। পরিষদের প্রধান অ্যান্ড্রু লিউং বলেন, ‘দেশের নিরাপত্তার জন্য আমাদের আইনটি পাস করতে হবে। যা হওয়ার হবে। আমাদের কিছু আসে যায় না।’
হংকংয়ের বেইজিংপন্থী আইন পরিষদের সদস্যরা গত ৮ মার্চ এ–সংক্রান্ত বিল উত্থাপন করেন। এর আগে এক মাস ধরে জনসাধারণের পরামর্শ নেওয়া হয়। হংকংয়ের আইন পরিষদ চীনের তাবেদারে ভর্তি। গতকাল আইন পরিষদের ৮৯ সদস্যের সবাই বিলটি পাসের পক্ষে ভোট দিয়েছেন।
হংকংয়ের আইন পরিষদ একসময় গণতন্ত্রপন্থীদের জোরালো উপস্থিতি ছিল। তবে ২০২১ সালে আইন পরিষদে চীনপন্থীদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা পায়।
যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের সমালোচকেরা বলছেন, আইনটি কার্যকর হলে হংকংয়ের স্বাধীনতা আরও সংকুচিত হয়ে পড়বে। তাঁদের আশঙ্কা, গ্রেপ্তার ও আটকের ভয় দেখিয়ে ভিন্নমত দমনে আইনটি ব্যবহার করা হতে পারে।
তবে হংকংয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও সিঙ্গাপুরসহ অন্য দেশগুলোয় যে ধরনের নিরাপত্তা আইন কার্যকর আছে, তার চেয়ে এ আইন বেশি কঠোর নয়। এটি দেশের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করবে ও ২০১৯ সালের বিক্ষোভের মতো ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকাবে।
হংকং এককালে যুক্তরাজ্যের উপনিবেশ ছিল। ১৯৯৭ সালে অঞ্চলটি চীনের কাছে ফেরত দেওয়া হয়। তবে শর্ত ছিল ‘এক দেশ, দুই ব্যবস্থা’ নীতির আওতায় সেখানে মুক্তমতের চর্চাসহ বিভিন্ন স্বাধীনতা থাকবে। ২০২০ সালে জাতীয় নিরাপত্তা আইনের সমালোচকেরা বলছেন, এমন স্বাধীনতা দ্রুতই উবে গেছে।