ভূমিকম্পের পর চারদিকে চিৎকার ‘আমাকে সাহায্য করুন’

মিয়ানমারের দ্বিতীয় বৃহৎ নগরী মান্দালয়ে ভূমিকম্পে ধসে পড়া একটি ভবনের ধ্বংসস্তূপে উদ্ধারকাজ চলছে। ২৯ মার্চ ২০২৫ছবি: এএফপি

মিয়ানমারে গতকাল শুক্রবার ৭ দশমিক ৭ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্পের পর চারদিকে শুধু সাহায্য চেয়ে মানুষের চিৎকার শোনা যাচ্ছিল। এমনটাই বলেছেন মান্দালয় শহরের এক উদ্ধারকর্মী। তিনি বলেছেন, ভূমিকম্পের পরপরই তিনি লোকজনকে সাহায্য করতে খালি হাতে ধ্বংসস্তূপ সরানো শুরু করেছিলেন।

ভূমিকম্পের পরপরই স্থানীয় যেসব বাসিন্দা দুর্গত ব্যক্তিদের সাহায্য করতে এগিয়ে এসেছিলেন, ওই ব্যক্তি তাঁদেরই একজন। তিনি বলেন, ‘আমাকে সাহায্য করুন’, ‘আমাকে সাহায্য করুন’ বলে লোকজন চিৎকার করছিলেন। তখন তাঁর নিজের কাছে নিজেকে খুব অসহায় লাগছিল।

একটি ধসে পড়া হোটেল থেকে বেঁচে বের হতে পারা আরেক নারী বলেন, তিনি ভেতরে আটকা পড়া লোকজনের চিৎকার শুনেছেন।

পেশায় শিক্ষক ওই নারী বলেন, ‘আমি শুনতে পাচ্ছিলাম মায়েরা কাঁদছেন। কারণ, তাঁদের সন্তানেরা তখনো ভবনের ভেতরে আটকা পড়ে আছে। এটা দেখাও ভয়ানক অভিজ্ঞতা। এই ভূমিকম্প সম্পূর্ণ বিপর্যয়কর ছিল। আমাদের সাহায্যের প্রয়োজন।’

সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, মিয়ানমারে ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা হাজার ছাড়িয়েছে।

যদিও সেখানে ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতির প্রকৃত চিত্র পাওয়া বেশ কঠিন। ২০২১ সালে সেনা অভ্যুত্থানের পর থেকে মিয়ানমারে সাংবাদিক ও সংবাদমাধ্যমের প্রবেশ নিয়ে নানা বিধিনিষেধ আরোপ করা আছে।

মান্দালয়ে ভূমিকম্পে ধসে পড়া একটি ভবনের ধ্বংসস্তূপে উদ্ধারকাজ চলছে। ২৯ মার্চ ২০২৫
ছবি: এএফপি

দেশটিতে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা প্রায় নেই বললেই চলে। সরকার থেকে বিদেশি সাংবাদিকদের মিয়ানমারে প্রবেশের অনুমতি পাওয়াও বেশ বিরল। ভূমিকম্পের পর বিবিসি ও অন্যান্য সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে যাঁরা কথা বলেছেন, তাঁরা নিরাপত্তার ভয় থেকে নিজেদের নাম প্রকাশ করেননি।

ভূমিকম্পের পর লোকজনকে সড়কে দৌড়াতে, চিৎকার করতে ও কাঁদতে দেখা গেছে। ওই দলে আহত ব্যক্তিরাও ছিলেন।

এক উদ্ধারকর্মী বলেছেন, মান্দালয় শহরের জেনারেল হাসপাতাল রোগী দিয়ে ভর্তি হয়ে গেছে।

মিয়ানমারের দ্বিতীয় বৃহৎ শহর মান্দালয়। গতকালের ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল মান্দালয় থেকে প্রায় ১৭ কিলোমিটার দূরে ভূপৃষ্ঠের ১০ কিলোমিটার গভীরে। ভূমিকম্পের ১২ মিনিট পর ৬ দশমিক ৪ মাত্রার একটি পরাঘাত (আফটার শক) হয়।

মান্দালয়ে প্রাণে বেঁচে যাওয়া একজন বলেছেন, ‘এটা যেন এখন ধ্বংসের নগরী। কেউ কেউ এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে আছেন। এটা খুবই মারাত্মক ছিল। এতটাই মারাত্মক, আমি আগে কখনো এমন ঝাঁকুনি হতে দেখিনি।’

স্থানীয় বাসিন্দারাও ভূমিকম্পে ধসে পড়া ভবনের ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়া ব্যক্তিদের সাহায্য করতে এগিয়ে আসেন। মান্দালয়, মিয়ানমার, ২৯ মার্চ ২০২৫
ছবি: এএফপি
আরও পড়ুন

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মান্দালয়ে ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতির কিছু ভিডিও ও ছবি দেখা যাচ্ছে। সেগুলোয় ধসে পড়া ভবন দেখা যাচ্ছে, যার মধ্যে ঐতিহাসিক রাজকীয় স্থান ও প্যাগোডা রয়েছে।

সেখানে ৯০ বছরের পুরোনো একটি সেতু ধসে পড়েছে। মিয়ানমারের সর্ববৃহৎ শহর ইয়াঙ্গুনের সঙ্গে মান্দালয়ের যোগাযোগের প্রধান সড়কের বিভিন্ন জায়গা ধসে পড়েছে।

ইয়াঙ্গুনের এক বাসিন্দা বলেছেন, ঝাঁকুনি খুবই তীব্র ছিল এবং প্রায় চার মিনিট ধরে স্থায়ী হয়।

ভয়াবহ এই ভূমিকম্পের পর বাকি বিশ্ব থেকে একরকম বিচ্ছিন্ন মিয়ানমারের জান্তা সরকার আন্তর্জাতিক সহায়তা কামনা করেছে। ছয়টি অঞ্চলজুড়ে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে।

জান্তাপ্রধান মিন অং হ্লাইং বলেছেন, ‘আমরা চাই, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যত দ্রুত সম্ভব আমাদের মানবিক সহায়তা পাঠাক।’

আরও পড়ুন