বিদ্যুতের অভাবে শ্রীলঙ্কায় নিভল সড়কবাতি, পরিবহনসংকটে বাসায় অফিসের কাজ
বিদ্যুতের অভাবে সব সড়কবাতি নিভিয়ে দিচ্ছে শ্রীলঙ্কা। আজ বৃহস্পতিবার শ্রীলঙ্কার এক মন্ত্রী এ কথা জানিয়েছেন। কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অর্থনৈতিক সংকটের কবলে পড়েছে দেশটি। বিদ্যুৎ–সংকটে পড়ে দেশটির প্রধান শেয়ারবাজারে লেনদেনও বন্ধ হয়ে গেছে। খবর এএফপি ও এনডিটিভির
শ্রীলঙ্কার বিদ্যুৎমন্ত্রী পবিত্র ওয়ানিয়ারাচ্চি বলেছেন, ‘বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে ইতিমধ্যে কর্মকর্তাদের দেশের রাস্তার সব আলো বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছি।’
চরম অর্থনৈতিক সংকটে ডুবতে থাকা শ্রীলঙ্কায় জ্বালানির মারাত্মক ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে দেশটির পরিবহন খাত থেকে শুরু করে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিপণনে। জ্বালানিসংকটে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় শ্রীলঙ্কাজুড়ে গতকাল টানা ১৩ ঘণ্টা বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল। দেশটিতে এর আগে কখনোই এত বেশি সময় বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকার ঘটনা ঘটেনি।
শ্রীলঙ্কায় বিদ্যুৎ খাতে একচেটিয়া আধিপত্য থাকা রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার থেকে দিনে ১৩ ঘণ্টা দেশজুড়ে বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকবে। বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে জেনারেটর চালানোর মতো ডিজেল নেই। সরবরাহকারীরা নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহের নিশ্চিয়তাও দিতে পারছেন না। তাই প্রতিদিন ১৩ ঘণ্টা বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকবে।
চলতি মাসের শুরু থেকেই শ্রীলঙ্কায় দিনে ৭ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকছে না। এর ধারাবাহিকতায় গতকাল বুধবার জানানো হয়, দিনে ১০ ঘণ্টা দেশজুড়ে বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকবে। এক দিনের মাথায় এ সময়সীমা আরও বাড়ানো হয়েছে।
এ বিষয়ে দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত প্রধান জ্বালানি কোম্পানি সিলন ইলেকট্রিসিটি বোর্ডের চেয়ারম্যান এম এম সি ফার্দিনান্দো বলেন, পরবর্তী দুই দিনের মধ্যে প্রয়োজনীয় জ্বালানি তেল সরবরাহ করা সম্ভব হতে পারে বলে জানিয়েছেন সরবরাহকারীরা। সরবরাহ বাড়লে বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকার সময় কমিয়ে আনা হবে।
শ্রীলঙ্কার বেশির ভাগ বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয় কয়লা ও তেল থেকে। দুটিই আমদানি করতে হয়। কিন্তু দেশটিতে এখন তেল ও কয়লার মারাত্মক ঘাটতি দেখা দিয়েছে। তেল ও কয়লা আমদানি করতে পারছে না সরকার। কারণ, তেল ও কয়লা আমদানির জন্য যে বৈদেশিক মুদ্রা প্রয়োজন, তা সরকারের হাতে নেই।
এদিকে শ্রীলঙ্কাজুড়ে ডিজেলের মারাত্মক সংকট দেখা দিয়েছে। পাম্পগুলোয় কিছু পেট্রল পাওয়া গেলেও মিলছে না ডিজেল। পাম্পগুলোর সামনে যানবাহনের লম্বা লাইন তৈরি হয়েছে। বন্ধ হয়ে গেছে বাস চলাচল। জ্বালানিসংকটে অনেকেই ব্যক্তিগত গাড়ি রাস্তায় বের করছেন না।
শ্রীলঙ্কার পরিবহনমন্ত্রী দিলুম আমুনুগামা বলেন, ‘আমরা মেরামতের জন্য গ্যারেজে থাকা যানবাহনে তেল সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছি। আপাতত জরুরি পরিষেবায় নিয়োজিত যানবাহনকে তেল সরবরাহ করা হচ্ছে।’
শ্রীলঙ্কাজুড়ে চলাচল করা বাসের দুই-তৃতীয়াংশই বেসরকারি খাতের আওতাধীন। দেশটির বেসরকারি খাতের বাস অপারেটরদের অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান জেমুনু উইজারত্ন জানান, আপাতত মজুত করা ডিজেল দিয়ে কিছু বাস চলছে। কিন্তু বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর থেকে তেল সরবরাহ করা না হলে দেশজুড়ে বাস চালানো সম্ভব হবে না। পরিবহন খাতে চরম সংকট দেখা দেবে।
টানা বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকার ঘোষণায় কলম্বো স্টক এক্সচেঞ্জ দৈনিক লেনদেনের সময় আগে আড়াই ঘণ্টা কমিয়ে আনার কথা জানিয়েছিল। পরে স্টক একচেঞ্জে লেনদেনই বন্ধ হয়ে যায়। আবার পরিবহনসংকটের কারণে শ্রীলঙ্কার বিভিন্ন অফিস তাদের কর্মীদের জরুরি প্রয়োজন ছাড়া অফিসে আসতে মানা করেছে। তাঁদের বাড়িতে অবস্থান করে দাপ্তরিক কাজ করতে বলা হয়েছে।
প্রায় ২ কোটি ২০ লাখ মানুষের দেশ শ্রীলঙ্কায় মারাত্মক আর্থিক সংকট দেখা দিয়েছে। সরকারের কাছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নেই। এ কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় জ্বালানি আমদানি করতে পারছে না সরকার।
১৯৪৮ সালে স্বাধীন হওয়ার পর ৭৪ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় সংকটে পড়েছে দক্ষিণ এশিয়ার এই দ্বীপরাষ্ট্রটি। দেশটিতে হু হু করে বেড়ে গেছে নিত্যপণ্যের দাম। কাগজের সংকটে অনুষ্ঠিত হয়নি পাবলিক পরীক্ষা। বন্ধ হয়ে গেছে দৈনিক পত্রিকার ছাপা সংস্করণ।