মরক্কোয় ভয়াবহ ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত পাহাড়ি গ্রামগুলোয় ত্রাণসহায়তা পৌঁছে দিতে উদ্ধারকর্মীরা ব্যাপক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কারণ, যতই সময় যাচ্ছে, ততই ক্ষীণ হয়ে আসছে ধ্বংসস্তূপে আটকে পড়া মানুষদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা। এরই মধ্যে শক্তিশালী ওই ভূমিকম্পে ২ হাজার ৯০০ মানুষ মারা গেছেন। আহত হয়েছেন ৫ হাজার ৫৩০ জন। লাখো মানুষ গৃহহীন হয়েছেন।
গত শুক্রবার মাঝরাতে (স্থানীয় সময় ১১টা ১১ মিনিট) মরক্কোয় শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে। মরক্কোয় এযাবৎকালের সবচেয়ে ভয়াবহ ভূমিকম্প ছিল এটি। ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল রিখটার স্কেলে ৬ দশমিক ৮। শক্তিশালী এই ভূমিকম্পে মারাকেশসহ মরক্কোর বিস্তীর্ণ জনপদ একরকম ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।
ত্রাণসামগ্রী নিয়ে ভর্তি গাড়িগুলোর পাহাড়ি পথে এগিয়ে যেতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে। ভূমিকম্পের পর এরই মধ্যে ৭২ ঘণ্টা সময় কেটে গেছে। তারপরও উদ্ধারকর্মীরা জীবিত মানুষদের সন্ধানে এখনো ধ্বংসস্তূপ খুঁড়ছেন।
মারাকেশের দক্ষিণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলে গৃহহীন মানুষদের আশ্রয়ের জন্য তাঁবু টানানো হয়েছে। অস্থায়ী আশ্রয়শিবিরগুলোর জন্য স্থাপিত একটি বিতরণ কেন্দ্রের পাশেই ছিলেন ফাতিমা বেনহামুদ নামের এক নারী। তিনি বলেন, ভূমিকম্পের পর এখন আর কিছু নেই, শুধু গ্রামগুলোর নামই আছে।
ফাতিমা তাঁর পরিবার নিয়ে আমিজমিজ এলাকার পার্কে একটি তাঁবুতে আছেন। কারণ, বাড়িতে থাকা তাঁদের জন্য নিরাপদ নয়।
ইউনেসকোর তালিকাভুক্ত ঐতিহাসিক পর্যটনকেন্দ্র মারাকেশ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বড় ভূমিকম্পের পর পরাঘাতের আশঙ্কায় সেখানকার অনেক পরিবার কম্বল জড়িয়ে খোলা আকাশের নিচে থাকছেন।
মরক্কোর রাজা ষষ্ঠ কিং মোহাম্মদ গত মঙ্গলবার ভূমিকম্পে আহত চিকিৎসাধীন মানুষদের দেখতে মারাকেশ ইউনিভার্সিটি হাসপাতালে যান। মরক্কোর অনেক মানুষ ভূমিকম্পদুর্গত লোকেদের খাবার, পানি, কম্বল, ওষুধ, প্রয়োজনে রক্ত দিয়েও সাহায্য করছেন। সহায়তায় এগিয়ে এসেছে দেশটির জাতীয় ফুটবল দলও। এদিকে স্পেন, কাতার, যুক্তরাজ্য ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের কাছ থেকে ত্রাণসহায়তা নিচ্ছে মরক্কো। তবে যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েলসহ বেশ কয়েকটি দেশের কাছ থেকে পাওয়া সহায়তার প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছে।
মরক্কো ১৯৬০ সালের পর এই প্রথম বড় ধরনের ভূমিকম্পে কেঁপে উঠল। সে সময় ভূমিকম্পে আটলান্টিক উপকূলে আগাদির ধ্বংসম্তূপে পরিণত হয়েছিল। মারা গিয়েছিল ১২ হাজার থেকে ১৫ হাজার মানুষ। জাতিসংঘের হিসাবে, ওই ভূমিকম্পে তিন লাখের বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। এদের এক–তৃতীয়াংশই ছিল শিশু।
অর্থনৈতিক দুর্দশা ও খরায় ভোগা উত্তর আফ্রিকার দেশটির পুনর্গঠনে বেশ কঠিন হবে বলে মনে করা হচ্ছে। একই সঙ্গে এখন গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন খাতে মন্দার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।