সোমালিয়ার জলদস্যুরা আবার সক্রিয়, সংকটে জাহাজ মালিকেরা
পশ্চিম ভারত মহাসাগরে এক ডজনের বেশি সোমালীয় জলদস্যু বহনকারী একটি স্পিডবোট বাংলাদেশি মালিকানাধীন জাহাজটির (বাল্ক ক্যারিয়ার) গতিরোধের চেষ্টা করছিল। জাহাজের নাবিকেরা সাহায্য চেয়ে বিপৎসংকেত পাঠালেন এবং একটি জরুরি হটলাইনে কল করলেন।
কিন্তু কেউই সময়মতো পৌঁছাতে পারল না। জলদস্যুরা বাংলাদেশি জাহাজ এম ভি আবদু্ল্লাহতে চড়ে বসেন এবং ভয় দেখাতে গুলি ছোড়েন। একপর্যায়ে জাহাজের ক্যাপ্টেন ও সেকেন্ড অফিসারকে জিম্মি করে ফেলেন তাঁরা। চিফ অফিসার আতিক উল্লাহ খান অডিও বার্তায় জাহাজের মালিককে এভাবে ঘটনার বর্ণনা দেন।
নাবিকদের ফোন কেড়ে নেওয়ার আগে দেওয়া বার্তায় আতিক উল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা যে এখন পর্যন্ত আমাদের কারও ক্ষতি হয়নি।’ অডিও বার্তাটি বার্তা সংস্থা রয়টার্সকেও দিয়েছে জাহাজ কোম্পানটি।
এক সপ্তাহ পরে সোমালিয়ার উপকূলে ছিনতাই হওয়া জাহাজ আবদুল্লাহ নোঙর করে। জলদস্যুরা নতুন করে সক্রিয় হওয়ার পর এ জাহাজটি সর্বশেষ দস্যুতার শিকার হলো। যদিও আন্তর্জাতিক নৌবাহিনী জোট মনে করছিল, তারা দস্যুতা নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছে।
দস্যুতার এসব ঘটনা জাহাজ কোম্পানিগুলোর ঝুঁকি ও ব্যয় বহুগুণ বাড়িয়ে দিচ্ছে। এ ছাড়া লোহিত সাগর এবং অন্যান্য নিকটবর্তী সমুদ্রসীমায় ইয়েমেনের হুতি মিলিশিয়াদের দফায় দফায় ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার সঙ্গেও কোম্পানিগুলোকে লড়তে হচ্ছে।
গত নভেম্বরের পর থেকে ২০টি দস্যুতার চেষ্টা হয়েছিল। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সশস্ত্র নিরাপত্তারক্ষী রাখা, বিমা ব্যয় এবং সম্ভাব্য মুক্তিপণ পরিশোধের পরিস্থিতি তৈরি হওয়ায় খরচ বেড়ে গেছে বলে পাঁচটি কোম্পানির প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন।
প্রায় এক দশক ধরে অনেকটা নিষ্ক্রিয় ছিল সোমালীয় জলদস্যুরা। তাদের দুটি গোষ্ঠীর সদস্যরা বলেন, কয়েক শ কিলোমিটার উত্তরে হুতিদের হামলার দিকে মনোযোগ সরে যাওয়ার সুযোগে তাঁরা দস্যুতায় ফিরেছেন।
দস্যুতার কাজে আর্থিক জোগানদাতাদের একজন ইসমাইল ইসা নামে পরিচিত। তিনি বলেন, ‘তাঁরা এ সুযোগটি নিয়েছেন। কারণ, যেসব আন্তর্জাতিক নৌবাহিনী সোমালিয়ার উপকূলে কাজ করত, সেসব বাহিনী তাদের তৎপরতা কমিয়ে দিয়েছে।’ ইসমাইল ডিসেম্বরে অন্য একটি বাল্ক ক্যারিয়ার ছিনতাইয়ে অর্থ দিয়ে দস্যুদের সহায়তা করেছিলেন।
সোমালিয়ার আধা স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল পান্টল্যান্ডের উপকূলীয় এলাকা হুল আনোদ থেকে ফোনে রয়টার্সের সঙ্গে কথা বলেন ইসমাইল। ওই উপকূলে রুয়েন নামের জাহাজটি কয়েক সপ্তাহ আটকা ছিল। পরে সেটি ভারতীয় নৌবাহিনী উদ্ধার করে।
যদিও দস্যুতার হুমকি ২০০৮ থেকে ২০১৪ সালের সময়ের মতো এতটা মারাত্মক নয়, তবে সমস্যাটি আরও বাড়তে পারে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন আঞ্চলিক কর্মকর্তা ও জাহাজে পণ্য পরিবহনে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলো।
দস্যুতা বন্ধে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার ওপর জোর দিয়ে গত মাসে সোমালিয়ার প্রেসিডেন্ট হাসান শেখ বলেছিলেন, ‘যদি আমরা শুরুর দিকেই এটা থামাতে না পারি, তাহলে এটি আগের পর্যায়ে পৌঁছে যাবে।’
বিশ্বের ব্যস্ততম জাহাজ চলাচলকারী জলপথগুলোর একটি সোমালিয়া উপকূল। প্রতিবছর ২০ হাজারের মতো জাহাজ বিভিন্ন ধরনের পণ্য নিয়ে এ পথে চলাচল করে। লোহিত সাগর ও সুয়েজ খাল হয়ে যাতায়াতের সময় এডেন উপসাগর হয়ে এসব জাহাজ চলাচল করে থাকে। এটি এশিয়া ও ইউরোপের মধ্যে সবচেয়ে কম দূরত্বের সমুদ্রপথ। এই এডেন উপসাগরেই সোমালীয় জলদস্যুরা বেশি সক্রিয় থাকে।