২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

আফ্রিকায় কাশির সিরাপ খেয়ে ৬৯ শিশুর মৃত্যু, ভারতীয় ওষুধ কোম্পানির উৎপাদন স্থগিত

মেডেন ফার্মাসিউটিক্যালসের সব ওষুধ উৎপাদন বন্ধ করেছে ভারত
ফাইল ছবি: রয়টার্স

ভারতীয় ওষুধ কোম্পানির কাশির সিরাপ খাওয়ার পর পশ্চিম আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়ায় ৬৯ শিশুর মৃত্যু হতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এমন প্রতিবেদন প্রকাশের পর গতকাল বুধবার ভারতীয় মেডেন ফার্মাসিউটিক্যালসের সব উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। সম্প্রতি ভারতের হরিয়ানায় ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানটির কারখানা পরিদর্শন করে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ। এ সময় নীতিমালা লঙ্ঘনের কিছু প্রমাণ পাওয়া যায়। অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানটি বলছে, কী কারণে শিশুদের মৃত্যু হয়েছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। 

রয়টার্সের খবরে বলা হয়, ভারত বিশ্বের ফার্মেসি হিসেবে পরিচিত। আফ্রিকার মোট চাহিদার ৪৫ শতাংশ ওষুধই সরবরাহ করে ভারত। কিন্তু সম্প্রতি কাশির সিরাপ খাওয়ার পর গাম্বিয়ার ৬৯ শিশুর মৃত্যুর ঘটনা ভারতীয় ওষুধ কোম্পানিগুলোর জন্য খারাপ উদাহরণ। এটি ভারতীয় ওষুধশিল্পের ক্ষেত্রে বড় একটি ধাক্কাও। গত এক দশকে আফ্রিকায় ভারতীয় ওষুধ রপ্তানি দ্বিগুণ বেড়েছে। গত অর্থবছরে আফ্রিকায় ২৪ দশমিক ৫ বিলিয়ন ওষুধ রপ্তানি করেছে ভারত। 

ভারতীয় কর্তৃপক্ষ চলতি মাসে চারবার হরিয়ানায় মেডেনের প্রধান কারখানা পরিদর্শন করেছে। তারা বলছে, প্রতিষ্ঠানটি নিয়ম লঙ্ঘন করে ওষুধ তৈরি ও পরীক্ষা করছে, এমন সত্যতা খুঁজে পাওয়ার পর মঙ্গলবার তাদের সব উৎপাদন কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। 

এক আদেশে হরিয়ানার ওষুধ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বলেছে, তদন্তে গুরুতর নিয়ম লঙ্ঘনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। উৎপাদিত ওষুধের সুরক্ষা, কার্যকারিতা ও মানের ক্ষেত্রে সম্ভাব্য ঝুঁকি পাওয়ায় প্রতিষ্ঠানটির ওষুধ উৎপাদন তাৎক্ষণিকভাবে বন্ধ করা হয়েছে। 

ভারত বিশ্বের ফার্মেসি হিসেবে পরিচিত। আফ্রিকার মোট চাহিদার ৪৫ শতাংশ ওষুধই সরবরাহ করে ভারত। কিন্তু সম্প্রতি কাশির সিরাপ খাওয়ার পর গাম্বিয়ার ৬৯ শিশুর মৃত্যুর ঘটনা ভারতীয় ওষুধ কোম্পানিগুলোর জন্য খারাপ উদাহরণ।

এ বিষয়ে মেডেনের নির্বাহী নরেশ কুমার গয়াল কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে গত সপ্তাহে তিনি বলেছেন, গাম্বিয়ায় কী ঘটেছে, তা জানতে সেখানকার ক্রেতাদের সঙ্গে কথা হয়েছে। দুই পক্ষ মিলে প্রকৃত ঘটনা খুঁজে বের করার চেষ্টা করা হচ্ছে। 

কাশির সিরাপগুলো গত বছরের ডিসেম্বরে গাম্বিয়ায় রপ্তানি করা হয়। হরিয়ানায় মেডেনের কারখানায় এ ওষুধ উৎপাদন করা হয়েছিল। ২০২৪ সালের নভেম্বর পর্যন্ত ওষুধের মেয়াদ আছে। 

ভারতীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, সরকার কোনো ধরনের অনিয়ম মেনে নেবে না। তবে গাম্বিয়ায় কী ঘটেছিল, সেটা খুঁজে বের করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ ঘটনায় ভারতের ওষুধ নিয়ন্ত্রক সংস্থার গাফিলতি আছে, এমন অভিযোগ উঠলেও সেটা অস্বীকার করেছেন তিনি। 

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রাথমিক প্রতিবেদনে শিশুমৃত্যুর কারণ উঠে আসে
ফাইল ছবি: রয়টার্স

ওই কর্মকর্তা আরও বলেছেন, এ ঘটনায় সরকার চার সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করেছে। যারা প্রতিকূল প্রতিবেদনগুলো পরীক্ষা–নিরীক্ষা ও বিশ্লেষণ করে এর সঙ্গে ঘটনার সম্পর্ক খুঁজে বের করবে। এ ছাড়া বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সরবরাহ করা যাবতীয় তথ্যও যাচাই–বাছাই করে পরবর্তী পদক্ষেপের বিষয়ে পরামর্শ দেবেন কমিটির সদস্যরা।

ভারতীয় আইনে ভেজাল ওষুধ বিক্রির জন্য কারাদণ্ড ও জরিমানা করার বিধান আছে। তবে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ভারতের তৈরি ওষুধে শিশুমৃত্যুর সরাসরি সংশ্লিষ্টতার কোনো প্রমাণ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এখনো প্রকাশ করেনি। 

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সহকারী মহাপরিচালক মারিয়াঞ্জেলা সিমাও এক ভার্চ্যুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, তাঁরা মেডেনের কাশির সিরাপ নিয়ে তদন্ত করতে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছেন। 

মারিয়াঞ্জেলা সিমাও আরও বলেছেন, হাসপাতালে ভর্তি হওয়া যেসব শিশুকে মেডেনের ওষুধ খাওয়ানো হয়েছে, তার বেশ কয়েকটি নমুনা বিশ্লেষণ করে ডব্লিউএইচও একটি প্রাথমিক ধারণায় পৌঁছেছে। 

ভারতীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, সরকার কোনো ধরনের অনিয়ম মেনে নেবে না। তবে গাম্বিয়ায় কী ঘটেছিল, সেটা খুঁজে বের করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

মেডেনের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য বলছে, হরিয়ানার প্রধান কারখানা বছরে ২২ লাখ সিরাপ, ৬০ কোটি ক্যাপসুল, ১ কোটি ৮০ লাখ ইনজেকশন, ৩ লাখ মলম ও ১২০ কোটি ট্যাবলেট উৎপাদন করতে সক্ষম। প্রধান কারখানা ছাড়াও রাজ্যে মেডেনের আরও দুটি কারখানা আছে। 

মেডেনের মেডিকেল পণ্য নিয়ে গত সপ্তাহে একটি সতর্কতা জারি করে ডব্লিউএইচও। এ সময় বাজার থেকে মেডেনের সব ধরনের পণ্য সরাতে বলে জাতিসংঘের সংস্থাটি। 

ল্যাবরেটরিতে মেডেনের চারটি কাশির সিরাপ বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এগুলোতে নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে অনেক বেশি ডায়েথেলিন গ্লাইকোল ও ইথালিন গ্লাইকোলের মতো উপাদান ব্যবহার করা হয়েছিল বলে জানা গেছে। এসব উপাদান মানবদেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এতে বিভিন্ন সমস্যার পাশাপাশি কিডনির সমস্যা দেখা দিতে পারে। গ্লিসারিনের তুলনায় সস্তা হওয়ায় অনেক ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি কাশির সিরাপ তৈরিতে ডায়েথেলিন গ্লাইকোল ও ইথালিন গ্লাইকোল ব্যবহার করে। 

গাম্বিয়ার পুলিশও শিশুদের মৃত্যুর ঘটনা তদন্ত করছে। মঙ্গলবার পুলিশের একটি প্রাথমিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কিডনিতে মারাত্মক প্রভাবের কারণে ৬৯ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। ভারতে তৈরি এসব কাশির সিরাপ আমদানি করেছিল আটলান্টাভিত্তিক আটলান্টিক ফার্মাসিউটিক্যালস। তবে এ বিষয়ে আটলান্টিক ফার্মাসিউটিক্যালসের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাদের সঙ্গে কথা বলা যায়নি। 

ভারতের দাবি, কাশির সিরাপগুলো শুধু গাম্বিয়াতে রপ্তানির জন্য অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, গাম্বিয়া ছাড়াও অন্যান্য বাজারেও সিরাপটি পাওয়া যেতে পারে।