পেতংতার্ন ৩৭ বছরে, কম বয়সে আরও যাঁরা দেশ চালানোর ভার নিয়েছিলেন

থাইল্যান্ডের নতুন প্রধানমন্ত্রী পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রা
ফাইল ছবি: রয়টার্স

পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রা, থাইল্যান্ডের নতুন ও সর্বকনিষ্ঠ প্রধানমন্ত্রী। তাঁর বয়স মাত্র ৩৭ বছর। দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও ধনকুবের থাকসিন সিনাওয়াত্রার মেয়ে এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইংলাক সিনাওয়াত্রার ভাতিজি তিনি। গত রোববার থাইল্যান্ডের সরকারপ্রধানের দায়িত্ব নিয়েছেন পেতংতার্ন।

তবে শুধু পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রা নন, বিশ্বের এমন কিছু রাষ্ট্রনেতা ছিলেন বা আছেন, যাঁরা অল্প বয়সে রাষ্ট্র ও সরকার পরিচালনার মতো গুরুদায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন। কেউ প্রেসিডেন্ট, কেউ–বা প্রধানমন্ত্রী, আবার কেউ রাজা-যুবরাজ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন, করছেন।

আসুন, একনজরে এমন কম বয়সী কয়েকজন রাষ্ট্রনেতার কথা জেনে নিই—

নায়িব বুকেলে

জাতীয় নির্বাচনে জিতে ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে এল সালভাদরের প্রেসিডেন্ট হন নায়িব বুকেলে। তখন তাঁর বয়স ছিল ৩৮ বছর। রাষ্ট্রপ্রধান হওয়ার আগে দেশটির সান সালভাদর শহরের মেয়র ছিলেন তিনি। একসময় তিনি ব্যবসার সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন।

লিও এরিক ভারাদকার

আয়ারল্যান্ডের প্রথম সমকামী ও ভারতীয় বংশোদ্ভূত সরকারপ্রধান তিনি। ২০১৭ সালে দায়িত্ব নেওয়ার সময় তাঁর বয়স ছিল ৩৮ বছর। ২০১৭ থেকে ২০২০ সাল এবং ২০২২ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত দুই মেয়াদে তিনি সরকারপ্রধানের দায়িত্ব পালন করেছেন।

জিগমে খেসার নামগুয়েল ওয়াংচুক

ভুটানের রাজা জিগমে খেসার নামগিয়েল ওয়াংচুক ও রানি জেতসুন ফেমা
ছবি: জিগমে খেসারের ফেসবুক থেকে নেওয়া

ভুটানের বর্তমান রাজা জিগমে খেসার নামগুয়েল ওয়াংচুক। দেশটিতে চতুর্থ ‘ড্রাগন কিং’ নামে পরিচিত তিনি। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে পড়াশোনা শেষে দেশে ফিরে জিগমে খেসার নামগুয়েল ওয়াংচুক যখন সিংহাসনে বসেন, তখন তাঁর বয়স মাত্র ২৬ বছর। ভুটানের গণতন্ত্রকে সুসংহত করতে চান তিনি।

ভিসোজা ওসমানি

কসোভোর দ্বিতীয় নারী প্রেসিডেন্ট ভিসোজা ওসমানি। ২০২১ সালের এপ্রিলে ৩৯ বছর বয়সে ক্ষমতায় বসেন। এখনো দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ঘোষণা দিয়ে আলোচনায় এসেছেন তিনি।

তামিম বিন হামাদ আল থানি

কাতারের বর্তমান আমির তামিম বিন হামাদ আল থানি। ২০১৩ সালে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নেন তিনি। তখন তাঁর বয়স ছিল ৩৩ বছর। এর আগে যুক্তরাজ্যে পড়াশোনা করেছেন আল থানি।

কিম জং-উন

উত্তর কোরিয়ার শাসক কিম জং-উন
ফাইল ছবি: রয়টার্স

উত্তর কোরিয়ার বর্তমান শাসক কিম জং-উন। সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, তাঁর বয়স ৪০ বছর। ২০১১ সাল থেকে কিম জং-উন দেশ শাসন করছেন। সেই হিসাবে, মাত্র ২৯ বছর বয়সে রাষ্ট্রপ্রধানের গুরুদায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন কিম জং-উন। পশ্চিমাদের সঙ্গে বিরোধ, বিতর্কিত পারমাণবিক-ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি, রহস্যময় জীবনযাপনের জন্য বেশ আলোচিত কিম জং-উন ও তাঁর উত্তর কোরিয়া।

মোহাম্মদ ডেবি

আফ্রিকার দেশ চাদে সাবেক প্রেসিডেন্ট ইদ্রিস ডেবির মৃত্যুর পর রাজনৈতিক অচলাবস্থা দেখা দেয়। অবশেষে জাতীয় নির্বাচনে জিতে ৩৮ বছর বয়সে দেশের প্রেসিডেন্ট হন মোহাম্মদ ডেবি। তিনি সাবেক প্রেসিডেন্ট ইদ্রিস ডেবির ছেলে। দেশটির সেনাবাহিনীর চার তারকা জেনারেল তিনি।

ইরাকলি গারিবাশাভিলি

জর্জিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইরাকলি গারিবাশাভিলি। ২০১৩ থেকে ২০১৫ সাল এবং ২০২১ থেকে ২০২৪ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত দুই দফায় দেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তিনি। যখন প্রথম সরকারপ্রধানের দায়িত্ব নেন, তখন এই রাষ্ট্রনেতার বয়স ছিল মাত্র ৩১ বছর।

মোহাম্মদ বিন সালমান

সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান
ফাইল ছবি: এএফপি

সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। দেশটির প্রধানমন্ত্রীও তিনি। আরব বিশ্বের শক্তিশালী এই দেশের হবু বাদশাহ ভাবা হয় বিন সালমানকে। সংক্ষেপে তিনি ‘এমবিএস’ নামে পরিচিত। মাত্র ৩২ বছর বয়সে সৌদি আরবের যুবরাজ হন বিন সালমান।

গাব্রিয়েল বরিচ

চিলির প্রেসিডেন্ট গাব্রিয়েল বরিচ। ৩৫ বছর বয়সে দেশের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়ে ইতিহাস গড়েছেন সাবেক বামপন্থী এই ছাত্রনেতা। ইউরোপের দেশগুলোর মতো চিলিকে ‘কল্যাণমূলক রাষ্ট্র’ হিসেবে গড়ে তুলতে চান তরুণ এ রাজনীতিক।

মিলোজকো স্পাজি

মন্টিনিগ্রোর বর্তমান প্রধানমন্ত্রী তিনি। ২০২৩ সালে সরকারপ্রধানের দায়িত্বে আসেন তিনি। তাঁর বর্তমান বয়স ৩৬ বছর।

গ্যাব্রিয়েল আতাল

গ্যাব্রিয়েল আতাল
ছবি: এএফপি

এ বছর জানুয়ারিতে ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে ইতিহাস গড়েন গ্যাব্রিয়েল আতাল। তাঁর বয়স ৩৪ বছর। তিনি ফ্রান্সের ইতিহাসে সবচেয়ে কম বয়সী সরকারপ্রধান। সেই সঙ্গে দেশটির প্রথম সমকামী প্রধানমন্ত্রীও তিনি।

সানা মারিন

স্বামী মার্কাস রাইকোনেনের সঙ্গে সানা মারিন
ছবি: ফিনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের ওয়েবসাইট থেকে।

সময়টা ২০১৯ সালের ডিসেম্বর। ফিনল্যান্ডের ৪৬তম প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেন সানা মারিন। তিনি দেশটির চতুর্থ নারী প্রধানমন্ত্রী। এ পদে ছিলেন ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত। সরকারপ্রধানের দায়িত্ব নেওয়ার সময় সানা মারিনের বয়স ছিল মাত্র ৩৪ বছর। তাঁকে বিশ্বের সবচেয়ে কম বয়সী সরকারপ্রধান বলা হয়।

৩০ বছর বয়সে আইন পরিষদ সদস্য নির্বাচিত হন সানা মারিন। দুই বছর পর সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টির উপনেতা নির্বাচিত হন তিনি। এ সময় প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তাঁরই দলের নেতা আন্তি রিননে। রাজনৈতিক অসন্তোষে আন্তি পদত্যাগ করলে প্রধানমন্ত্রী হন সানা। বন্ধুদের সঙ্গে পার্টিতে নাচের ভিডিও ভাইরাল হলে সানা তুমুল সমালোচিত হন।

ড্যানিয়েল নোবোয়া

ইকুয়েডরে প্রেসিডেন্ট ড্যানিয়েল নোবোয়া
ফাইল ছবি: এএফপি

দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ইকুয়েডরের প্রেসিডেন্ট ড্যানিয়েল নোবোয়া। গত বছর মাত্র ৩৫ বছর বয়সে নোবোয়া দেশটির ইতিহাসে সবচেয়ে কম বয়সী প্রেসিডেন্ট হন।

জেসিন্ডা আরডার্ন

নিউজিল্যান্ডের সাবেক প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডার্ন
ফাইল ছবি: রয়টার্স

২০১৭ সালে নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী হন জেসিন্ডা আরডার্ন। তখন তাঁর বয়স ছিল মাত্র ৩৭ বছর। ওই সময় জেসিন্ডা বিশ্বের সবচেয়ে কম বয়সী নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিউজিল্যান্ডের দায়িত্ব নেন। প্রায় ছয় বছর প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব সামলেছেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে ২০১৮ সালে মেয়েশিশুর জন্ম দিয়ে আলোচনায় আসেন জেসিন্ডা। শিশুসন্তান কোলে নিয়ে তিনি জাতিসংঘের অধিবেশনে যোগ দিয়েছিলেন। ২০১৯ সালের মার্চে নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চ শহরের মসজিদে হামলার ঘটনা পুরো নিউজিল্যান্ডকে বদলে দেয়। জেসিন্ডা শক্ত হাতে পরিস্থিতি সামাল দেন।

তথ্যসূত্র: বিজনেস ইনসাইডার, রয়টার্স ও এএফপি।

আরও পড়ুন