২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

জি-৭ থেকে সহায়তার আশ্বাস, বাখমুত নিয়ে জেলেনস্কির ভাষ্য

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি
ফাইল ছবি: এএফপি

জাপানের ঐতিহাসিক হিরোশিমা শহরে অনুষ্ঠিত হলো এবারের জি–৭ সম্মেলন। এবারের সম্মেলনে রুশ বাহিনীর আগ্রাসনের বিরুদ্ধে জি–৭ নেতাদের সমর্থন পেতে হাজির হন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি।

সম্মেলনের এক ফাঁকে জেলেনস্কি সাংবাদিকদের বলেন, সাম্প্রতিক মাসগুলো যুদ্ধের কেন্দ্রে থাকা বিধ্বস্ত বাখমুত শহর পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। জেলেনস্কি বলেন, ‘এটা বেদনাদায়ক ঘটনা। সেখানে আর কিছু্ই অবশিষ্ট নেই।’ তবে তিনি বলেন, সেখানে অনেক রুশ সেনার মৃতদেহ রয়েছে।

জেলেনস্কির এমন জবাবের পর রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, বাখমুত পতনের বিষয়টি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট নিশ্চিত করেছেন বলে প্রতীয়মান হয়। জেলেনস্কির মন্তব্যে বাখমুত শহরের পতন হয়েছে কি না, তা নিয়ে এখনো ধোঁয়াশা থেকে গেছে।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের বক্তব্যের একটা ব্যাখ্যা দেন তাঁর মুখপাত্র সের্গেই নিকিফোরভ। তিনি বলেন, রুশ বাহিনীর কাছে বাখমুত শহরের পতন হওয়ার বিষয়টি জেলেনস্কি নিশ্চিত করেননি।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধবিমান থেকে ফেলা পারমাণবিক বোমার ভয়াবহতার শিকার হয়েছিল জাপানের হিরোশিমা শহর। সেই শহরে গত শুক্রবার সকালে শুরু হয় বিশ্বের ধনী দেশগুলোর জোট জি-৭-এর শীর্ষ সম্মেলন। জেলেনস্কি সম্মেলনের শেষ দিনে হিরোশিমায় শান্তিস্তম্ভে ফুল দিয়ে বোমা হামলায় নিহত ব্যক্তিদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।

সম্মেলনের শেষ দিনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইউক্রেনের জন্য সাড়ে ৩৭ কোটি মার্কিন ডলারের সামরিক সহায়তার ঘোষণা দেন। তিনি জেলেনস্কিকে বলেন, রাশিয়ার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়তে ইউক্রেনকে যতটা শক্তিশালী করার প্রয়োজন, ওয়াশিংটন তা করবে। বাইডেন বলেন, ‘পুরো জি–৭ ইউক্রেনের সঙ্গে থাকবে। আমরা কথা দিচ্ছি, আমরা ইউক্রেনকে ছেড়ে যাব না।’

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বাখমুতকে জয় হিসেবে বর্ণনা করে রুশ সেনা ও ভাড়াটে ভাগনার বাহিনীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। ক্রেমলিনের ওয়েবসাইটে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, পুতিন বাখমুতকে স্বাধীন করার কথা বলেছেন।

বাখমুতের লড়াইয়ে নেতৃত্ব দিয়েছে রাশিয়ার ভাড়াটে সেনাদল ভাগনার গ্রুপ। এ গ্রুপের নেতা ইয়েভজেনি প্রিগোশিন বলেছেন, শহরের শেষ সীমা পর্যন্ত ইউক্রেনের সেনাদের হটিয়েছে তাঁর বাহিনী।

জি–৭ জোটভুক্ত দেশ যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, জার্মানি, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, ইতালি ও কানাডা বাইডেনের সুরে কথা বলেছেন। কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো বলেছেন, যত দিন প্রয়োজন ইউক্রেনকে সহায়তা দেবে তাঁর দেশ।

বাইডেন আরও বলেছেন, ইউক্রেনের পাইলটদের এফ–১৬ যুদ্ধবিমান প্রশিক্ষণ দেওয়ার বিষয়টি সমর্থন দেবে ওয়াশিংটন। তবে কিয়েভকে এখনো কোনো দেশ যুদ্ধবিমান দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়নি। জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ বলেছেন, প্রশিক্ষণের বিষয়টি রাশিয়ার জন্য বার্তা। কারণ, রাশিয়া দ্রুত এই যুদ্ধ শেষ করতে পারবে না। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক বলেছেন, এবারের গ্রীষ্ম থেকেই প্রশিক্ষণ শুরু হবে।

জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা বলেন, আন্তর্জাতিক আইন রক্ষায় জি–৭ নেতারা ঐক্য দেখিয়েছেন, এটা গুরুত্বপূর্ণ।

এবারের হিরোশিমা সম্মেলন জেলেনস্কিকে সেখানে আসা অন্য দেশগুলোর নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করার সুযোগ করে দিয়েছে। এ সম্মেলনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভার সঙ্গে বৈঠক করেছেন জেলেনস্কি।

এবারের সম্মেলনে ইউক্রেনকে সহায়তা করা ছাড়াও বাণিজ্য অংশীদার হিসেবে চীনের প্রতি অবিশ্বাসের একটি বার্তা দিয়েছে জি–৭। যুক্তরাষ্ট্রের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট গত জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার নেতাদের সঙ্গে চীন বিষয়ে আলোচনা করেছেন।

জি–৭–এর এক বিবৃতিতে গত শনিবার বলা হয়, চীনের সঙ্গে স্থিতিশীল সম্পর্ক চায় জি–৭। তাইওয়ান নিয়ে উদ্বেগের কথাও জানানো হয় তাতে।

এদিকে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জি–৭–এর বিবৃতির বিরোধিতা করে জাপানের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছে। তাদের অভিযোগ, চীনের উদ্বেগকে উপেক্ষা করা হয়েছে। এ ছাড়া চীনের ওপর আক্রমণ ও অভ্যন্তরীণ হিসেবে হস্তক্ষেপের অভিযোগ করেছে বেইজিং।