কলকাতায় বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রা

কলকাতায় মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশ নেন সব শ্রেণি–পেশার মানুষছবি: প্রথম আলো

কলকাতাসহ গোটা পশ্চিমবঙ্গে মঙ্গলবার উদ্‌যাপিত হয়েছে বাংলা নববর্ষ ১৪৩২। তীব্র দাবদাহের মধ্যেও শহরজুড়ে সকাল থেকে বের হয়েছে বিভিন্ন সংগঠনের মঙ্গল শোভাযাত্রা। এবারের আয়োজনে পহেলা বৈশাখকে ‘বাঙালির জাতীয় উৎসব’ হিসেবে ঘোষণার দাবিও উঠেছে।

এর আগে সোমবার কলকাতার বাংলাদেশের উপ–হাইকমিশনে ঘরোয়া পরিবেশে বাংলা নববর্ষ উৎসব উদ্‌যাপিত হয়। এ অনুষ্ঠানে দূতাবাসের কর্মকর্তা–কর্মচারী, তাঁদের পরিবারের সদস্যরা এবং কলকাতার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বাংলাদেশের পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা অংশ নেন। এ ছাড়া এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কলকাতার সোনালী ব্যাংক, বিমান বাংলাদেশ ও বেসরকারি বিমান সংস্থার কর্মকর্তারা।

অন্যদিকে পশ্চিমবঙ্গ সরকার মঙ্গলবারকে পালন করছে ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’ হিসেবে। পয়লা বৈশাখকে ‘বাঙালির জাতীয় উৎসব’ হিসেবে ঘোষণার দাবিও উঠে এসেছে বিভিন্ন মহল থেকে। এদিন মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রধান আয়োজক সংগঠনটির প্রতিপাদ্য ছিল, ‘নতুন বছর হোক ধর্মের নয় মানুষের, বিচ্ছেদের নয় মিলনের।’

কলকাতার ভাষা ও চেতনা সমিতির উদ্যোগে নববর্ষ উপলক্ষে দিনব্যাপী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। একাডেমি অব ফাইন আর্টস চত্বরের রাণুছায়া মঞ্চে নাচ–গান, কবিতা পাঠ ও নাটক প্রদর্শিত হয়। এর আগে সোমবার বিকেল থেকেই কলকাতার একাডেমি অব ফাইন আর্টস চত্বরের সড়কে আলপনা আঁকে ভাষা ও চেতনা সমিতি। মঙ্গলবার সকালে অতিথিদের জন্য পরিবেশিত হয় পান্তাভাত-শুঁটকি, আমপোড়া শরবত, মাছ-ভাত, ডাল ও পোস্ত।

নববর্ষের মঙ্গল শোভাযাত্রায় আকর্ষণীয় নানা বেশে অংশ নেন মানুষ
ছবি: প্রথম আলো

সকাল আটটায় পার্ক স্ট্রিটের সরকারি আর্ট কলেজের সামনে থেকে বের হয় বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা। একাডেমি চত্বরে গিয়ে এই শোভাযাত্রা শেষ হয়। এ শোভাযাত্রায় অংশ নেন বিশিষ্টজনসহ সাধারণ মানুষ। প্রায় ১২ ঘণ্টা ধরে চলা বাংলা নববর্ষের এ অনুষ্ঠানে কলকাতার বিশিষ্ট শিল্পীরা অংশ নেন এবং সাংস্কৃতিক পরিবেশনা করেন। এ অনুষ্ঠানেই আয়োজক ও অংশগ্রহণকারীদের পক্ষ থেকে জোরালোভাবে দাবি তোলা হয়, বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনকে যেন বাঙালির জাতীয় উৎসব হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

মঙ্গল শোভাযাত্রায় বর্ণিল কলকাতা, ১৩ জেলায় একযোগে আয়োজন

বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ উপলক্ষে মঙ্গলবার কলকাতাসহ ভারতের বাংলাভাষী অঞ্চলগুলোতে মঙ্গল শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। ঢাকার মঙ্গল শোভাযাত্রা থেকে অনুপ্রাণিত কলকাতার বাংলা বর্ষবরণ আয়োজনেও শোভাযাত্রা যুক্ত হয় ২০১৭ সাল থেকে। এর পর থেকে টানা আট বছর কলকাতাবাসী এ আয়োজনে অংশ নিচ্ছেন। তবে ২০২০ সালে কোভিড-১৯ মহামারির কারণে শোভাযাত্রা বন্ধ রাখা হয়েছিল। এবারও রাজধানী কলকাতায় একাধিক রুটে বর্ণাঢ্য এ শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। এ ছাড়া রাজ্যের ১৩ জেলাতেও একই সঙ্গে মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হয়। আয়োজকেরা জানান, আগামী বছর রাজ্যের ২৩টি জেলা থেকেই একযোগে এ শোভাযাত্রা বের হবে।

সবচেয়ে বড় মঙ্গল শোভাযাত্রাটি কলকাতার গাঙ্গুলীবাগান থেকে শুরু হয়ে যাদবপুরের সুকান্ত সেতু পর্যন্ত যায়। এ শোভাযাত্রার উদ্বোধন করেন বারইপুরের সবজি বিক্রেতা ও কোলাজ শিল্পী সাকিলা সেখ। এ ছাড়া শহরের বিভিন্ন এলাকায় একাধিক শোভাযাত্রা বের হয়। এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রায় ছিল হাতি, কাঠের ঘোড়া, প্যাঁচা, বাঘ, সিংহ, পুরুলিয়া ও দক্ষিণ দিনাজপুরের বসুমারির মুখোশ, পটচিত্র, পাখা, দাঁড়কাক, বাংলার সরা, কুলা প্রভৃতি। গত বছর বাংলাদেশের শিল্পীরা উপস্থিত থাকলেও এবারের বর্ষবরণ আয়োজনে তাঁরা অনুপস্থিত ছিলেন।