দুঃসাহসী সেই ফরাসি মুক্তিযোদ্ধার সন্ধানে
২৮ বছর বয়সী এক ফরাসি তরুণ একাত্ম হয়েছিলেন আমাদের মুক্তিসংগ্রামে। ’৭১ সালে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বিমান ছিনতাই করে শোরগোল ফেলে দিয়েছিলেন বিশ্বজোড়া। প্যারিসে অসম সাহসী সেই ফরাসি তরুণ জঁ ক্যার স্মৃতি খুঁজে ফিরলেন ইফতেখার মাহমুদ
৩ ডিসেম্বর, ২০১৫। প্যারিসের অভিজাত আবাসিক এলাকা রু লুই নিকোলার চার নম্বর বাড়ির তৃতীয় তলা। বাইরে তখন শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি তাপমাত্রা। তৃতীয়তলার কক্ষটির ভেতরে যান্ত্রিক উত্তাপ নিতে নিতে হুইলচেয়ারে বসেছিলেন পৃত্থিন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়। ভারত বর্ষের স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা বাঘা যতিনের নাতি পৃত্থিন্দ্রনাথ। তিনি ফিরিয়ে নিয়ে গেলেন একাত্তর সালের সেই দিনগুলোতে। আরও একবার মনে করিয়ে দিলেন বিস্মৃত প্রায় এক ফরাসি মুক্তিযোদ্ধার দুঃসাহসী অভিযানের কথা।
আবার একাত্তর
কিঞ্চিৎ খোলা জানালার দিকে চেয়ে কী যেন খুঁজতে থাকলেন ৮৪ বছর বয়সী পৃত্থিন্দ্রনাথ। বললেন, ‘হুমম এই তিন ডিসেম্বরেই। ৭১ সালের ঠিক আজকের দিনটিতেই তো জঁ ক্যার সঙ্গে দেখা করতে প্যারিসের অরলি বিমানবন্দরে গিয়ে গ্রেপ্তার হয়েছিলাম।’ জঁ ক্যা সম্পর্কে খুব বেশি কিছু জানি না। সেটা বুঝতে পেরেই পৃত্থিন্দ্রনাথ গড়গড় করে বলা শুরু করলেন, ‘স্বাধীনতার জন্য প্যারিসে বসে আমরা তখন অনেকে অনেক কিছু করেছি। কবিতা-কলাম লিখেছি, বাংলাদেশি কবিদের মুক্তিযুদ্ধের কবিতা ফরাসি ভাষায় অনুবাদ করে ছেপেছি। কিন্তু সবচেয়ে কাজের কাজটি করেছিলেন ২৮ বছর বয়সী জঁ। প্যারিসের সব পুলিশ যেন সেই দিন অরলি বিমানবন্দরে এসে হাজির হয়েছিল। গ্রেপ্তার অবস্থাতেই জানতে পারলাম, দীর্ঘ আট ঘণ্টার অপারেশন শেষে পাকিস্তান এয়ারলাইনসের ( পিআইএ) বিমানটিকে জঁ-এর কাছ থেকে মুক্ত করেছে পুলিশ। জঁকে গ্রেপ্তার করে অরলি পুলিশ ফাঁড়িতে নেওয়া হয়েছে।’
‘বাঙালির মুক্তিসংগ্রামে অস্ত্র হাতে নিতে আমি প্রস্তুত।’ এমন ঘোষণা দিয়ে ফ্রান্সসহ পুরো ইউরোপজুড়ে তখন তোলপাড় ফেলে দিয়েছিলেন ৭০ বছর বয়সী আন্দ্রে মারলো। জঁ গ্রেপ্তার হয়েছেন খবর পেয়ে তিনিও ছুটে গেলেন অরলি পুলিশ স্টেশনে। ফ্রান্স সরকারের সঙ্গে কথা বলে গল-এর মন্ত্রিসভার মানবাধিকারবিষয়ক মন্ত্রী মারলো আমাকে থানা থেকে মুক্ত করলেন। এরপর মারলো নামলেন জঁর মুক্তির লড়াইয়ে।’ এ কথা বলে কিছুক্ষণ দম নিলেন পৃত্থিন্দ্রনাথ।
বিমান ছিনতাইয়ের বিস্তারিত
পৃত্থিন্দ্রনাথের কাছ থেকে জঁর মুক্তিযুদ্ধে বিশ্ব তোলপাড় করা ভূমিকা নিয়ে নতুন অনেক কিছু জানলাম। কিন্তু এ তো শেষ নয়। দুনিয়া কাঁপানো ওই বিদেশি মুক্তিযোদ্ধা সম্পর্কে আরও অনেক কিছু জানার তৃষ্ণা যে আরও বেড়ে গেল। খোঁজ নিয়ে জানলাম, প্যারিসেই থাকেন ফ্রান্সের এক সময়কার প্রভাবশালী দৈনিক লে ফিগারোর সাংবাদিক ফ্রাসোয়া মঁতিয়ে। তিনি তখন তাঁর পত্রিকার হয়ে জঁ ক্যার বিমান ছিনতাইয়ের পুরো ঘটনার সংবাদ সংগ্রহের দায়িত্বে ছিলেন। খুঁজতে খুঁজতে মঁতিয়ের কাছে পৌঁছালাম। জানা গেল সেই উত্তাল সময়ে জঁ-এর ইউরোপ কাঁপানো ঘটনার কথা।
আশি-ঊর্ধ্ব মঁতিয়ে তরুণ তুখোড় সাংবাদিকের মতোই দিন-ক্ষণ-নামসহ পুরো ঘটনা যখন বলছিলেন, তখন চোখের সামনে যেন ৭১-এর রক্তমাখা সেই ডিসেম্বর ভেসে উঠছিল। তিনি জানালেন, ১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বর পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইনসের (পিআইএ) ‘সিটি অব কুমিল্লা’ নামের একটি বোয়িং-৭২০বি বিমান প্যারিস অরলি বিমানবন্দরে অবতরণ করে। ১৭ জন যাত্রী ও ছয়জন ক্রু নিয়ে বিমানটি লন্ডন থেকে প্যারিস, রোম ও কায়রো হয়ে করাচি যাবে। এর মধ্যে পাঁচজন যাত্রী প্যারিস থেকে উঠবে। ওই পাঁচজনের সঙ্গে বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যূহ পেরিয়ে বোয়িংটিতে উঠে বসলেন ২৮ বছর বয়সী যুবক জঁ ক্যা।
বেলা তখন ১১টা ৫০ মিনিট। পাইলট আকাশে ওড়ার প্রস্তুতি হিসেবে বিমানটি চালু করতেই পকেট থেকে পিস্তল বের করে জঁ ইঞ্জিন বন্ধ করার নির্দেশ দিলেন। কেউ তাঁর নির্দেশ অমান্য করলে সঙ্গে থাকা বোমা দিয়ে পুরো বিমানবন্দর উড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিলেন তিনি। ওয়্যারলেসটি কেড়ে নিয়ে নিয়ন্ত্রণ কক্ষের মাধ্যমে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের উদ্দেশ্যে জঁ নির্দেশ দিলেন, বিমানটিতে যাতে ২০ টন ওষুধ ও চিকিত্সা সামগ্রী তুলে তা যুদ্ধাহত ও বাংলাদেশি শরণার্থীদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়। বললেন, ‘আমার এই দাবি নিয়ে কোনো আপস চলবে না (নন নেগোশিয়েবল)।’ দীর্ঘ ছয় ঘণ্টা ধরে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ তাঁকে বোঝানোর চেষ্টা করেও তাঁর সিদ্ধান্ত থেকে একচুলও নাড়ানো গেল না।
ছিনতাইয়ের পর
জঁ ক্যার ওই বিমান ছিনতাইয়ের ঘটনা মুহূর্তে পুরো ফ্রান্স ছাড়িয়ে ইউরোপ হয়ে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ল। ফ্রান্সসহ বিশ্বের প্রভাবশালী টেলিভিশন চ্যানেলগুলো কিছুক্ষণ পরপর ঘটনার হালনাগাদ সংবাদ দিতে থাকল। বিশ্বজুড়ে চলা যুদ্ধবিরোধী ও মানবতার পক্ষের আন্দোলনকারীদের কাছে জঁ নামের ওই বাবরি দোলানো যুবক রীতিমতো হিরো বনে গেলেন। তাঁর সঙ্গে দেখা করতে ফ্রান্সের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম ও মানবাধিকার সংগঠনের নেতারা অরলি বিমানবন্দরে এসে জড়ো হতে থাকলেন। তাঁদের কেউ কেউ গ্রেপ্তারও হলেন।
পিআইএর বিমানটিকে মুক্ত করতে ফরাসি সরকার তখন নতুন এক ফাঁদ আটল। তারা জঁ ক্যার দাবি অনুযায়ী ওষুধ আনতে ফরাসি রেডক্রসকে খবর দিল। রেডক্রস আরেক ফরাসি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘অর্ডি দ্য মানতে’র সহায়তায় বিমানবন্দরে দুটি ওষুধভর্তি গাড়ি নিয়ে হাজির হলো। ওই গাড়ির চালক ও স্বেচ্ছাসেবকের পোশাক পরে বিমানটিতে প্রবেশ করলেন ফরাসি পুলিশের বিশেষ শাখার চারজন সদস্য। তাঁরা বিমানে তোলা ওষুধের বাক্সে পেনিসিলিন রয়েছে, এ কথা বলে বিমানের ভেতরে বিভিন্ন জায়গায় সেগুলো সাজিয়ে রাখার ভান করে সময়ক্ষেপণ করতে থাকলেন। একপর্যায়ে পুলিশ সদস্যরা ওষুধের বাক্স নামানোতে সহায়তার নাম করে জঁ ক্যার হাতে একটি বাক্স তুলে দিলেন। এরপরই তাঁর ওপর আক্রমণ শুরু করলেন পুলিশের সদস্যরা।
পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে রাত আটটায় জঁ পুলিশের হাতে আটক হলেন। তাঁকে নিয়ে যাওয়া হলো অরলি পুলিশ স্টেশনে। সেখানে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে জঁ জানালেন, তিনি ইচ্ছা করেই ৩ ডিসেম্বর বিমান ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করেন। কারণ ওই দিন পশ্চিম জার্মানির চ্যান্সেলর উইলি ব্র্যান্ডট ওই বিমানবন্দরে এসে নেমেছিলেন। নিরাপত্তাকর্মীরা তখন তাঁকে নিয়েই বেশি ব্যস্ত ছিলেন।
কে এই তরুণ?
আলজেরীয় সৈনিক বাবার একমাত্র সন্তান জঁ ক্যা। বাবা-মা দুজনই গত হয়েছিলেন। জঁ বিমান ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করেছিলেন ’৭১-এ জুনের মাঝামাঝি কোনো এক দিনে। তিনি তখন সবে ফরাসি সেনাবাহিনীর হয়ে বিদ্যুৎ প্রযুক্তিবিদ হিসেবে ইয়েমেনে চাকরি শেষে দেশে ফিরেছেন। যুদ্ধে আহত শিশু ও শরণার্থীদের কষ্টের স্মৃতি তখন তাঁকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছিল। পশ্চিম পাকিস্তান সেনাবাহিনী পূর্ব পাকিস্তানের নিরীহ মানুষদের ওপর হামলা শুরু করার পর থেকে জঁ ঘটনাপ্রবাহ খেয়াল রাখছিলেন। ফরাসি পত্রিকায় বাঙালিদের ওপর হামলা ও নির্যাতনের ঘটনা তাঁকে ব্যাপকভাবে পীড়িত করে। বাঙালিদের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কিছু একটা করার উপায় খুঁজতে গিয়েই বিমান ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা আঁটেন তিনি। এ বিষয়ে তিনি অনুপ্রেরণা পান আন্দ্রে মারলোর বাংলাদেশ নিয়ে লেখা ও বক্তৃতা থেকে।
দৃশ্যপটে আন্দ্রে মারলো
আন্দ্রে মারলো অবশ্য তাঁর ওই খ্যাপাটে অনুরাগীকে মুক্ত করতে সব চেষ্টাই করেন। মারলোর আইনজীবী বন্ধু বিনা পারিশ্রমিকে জঁ ক্যারের পক্ষে লড়াইয়ে নামেন। আইনজীবী ছিনতাই হওয়া ওই পাকিস্তানি বিমানের সব যাত্রী ও বিমানের ক্রুদের সাক্ষ্য নেন। তাঁরা সবাই একবাক্যে বললেন, জঁ ক্যা তাঁদের সঙ্গে কোনো খারাপ ব্যবহার করেননি। এমনকি কারও দিকে সরাসরি পিস্তল তাক করেননি। তিনি উল্টো যাত্রীদের উদ্দেশে বলেছেন, আমি বাংলাদেশের যুদ্ধাহত শিশু ও শরণার্থীদের ওষুধ পাঠানোর জন্য বিমানটি ছিনতাই করেছি। তাঁরা যাতে বাংলাদেশের ওই মানুষদের জীবন বাঁচাতে তাঁকে সহযোগিতা করেন। সেই আহ্বানই তিনি যাত্রী ও ক্রুদের উদ্দেশে জানিয়েছিলেন।
এত সব চেষ্টা করেও অবশ্য জঁ-এর শেষ রক্ষা হয়নি। তাঁকে ফরাসি আদালত পাঁচ বছরের জন্য জেল দেয়। জঁ কারাগারে থাকা অবস্থাতেই তাঁর পক্ষে আন্দ্রে মারলোর নেতৃত্বে ফ্রান্স ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানবাধিকারকর্মীরা সোচ্চার হয়ে ওঠেন। অনেক আইনি লড়াইয়ের পর আদালত জঁ-এর শাস্তির মেয়াদ তিন বছর কমিয়ে তাঁকে ১৯৭৩ সালে মুক্তি দেন।
জঁ ক্যার বাকি জীবন
জঁ যখন জেল থেকে মুক্ত হলেন বাংলাদেশ তো তত দিনে স্বাধীন। এরপর জঁ কী করলেন, কোথায় গেলেন। সে খোঁজ না পৃত্থিন্দ্রনাথ, না মঁতিয়ে কেউই দিতে পারলেন না। এবার খোঁজ শুরু করলাম জঁ-এর কোনো আত্মীয়স্বজনকে খুঁজে পাওয়া যায় কি না। আরেক প্রবীণ ফরাসি সাংবাদিকদের সাহায্য নিয়ে জঁ-এর নাতি ফ্রাঙ্কো পাভেলের খোঁজ পাওয়া গেল। কিন্তু প্যারিসের ববিনি আবাসিক এলাকায় তাঁর বাসায় গিয়ে তাঁকে পাওয়া গেল না।
তবে শেষ পর্যন্ত দাদা জঁ ক্যাকে নিয়ে ফ্রাঙ্কোর একটি লেখা পাওয়া গেল। ফরাসি ভাষায় দৈনিক নভেল্লিয়েস ডি ফ্রান্স-এ ২০১২ সালে প্রকাশিত ওই লেখা জঁ-এর ৭২-পরবর্তী জীবনের এক নতুন অধ্যায়ের দিকে চোখ খুলে দিল। ওই লেখা থেকে জানা যায়, জেল থেকে মুক্ত হয়ে ওই ফরাসি তরুণ চলে যান লেবাবনে। সেখানে গিয়ে তিনি নানা ধরনের সামাজিক অন্যায় ও অনিয়মের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেমে পড়েন। এরপর স্পেন, অস্ট্রেলিয়া হয়ে তিনি ভারতের দিল্লিতে এসে আস্তানা গাড়েন। সেখানে এক মার্কিন নারীকে বিয়ে করে সংসার পাতেন।
দিল্লিতে নানা সামাজিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ায় ভারত সরকারের তোপের মুখে পড়েন জঁ। চলে আসেন কলকাতায়। সেখানে দরিদ্র ও বস্তিবাসী শিশুদের জন্য বিনা মূল্যে মুরগির স্যুপ বিলি করতেন তিনি। জঁ-কে নিয়ে একাধিক ফরাসি পত্রিকায় লেখা সংবাদে জানা যায়, ১৯৮২ থেকে ’৮৬-এর মধ্যে কলকাতা থেকে একাধিকবার বাংলাদেশেও এসেছিলেন তিনি। স্বাধীন বাংলাদেশে সামরিক শাসন দেখে ক্ষুব্ধ হন জঁ। ’৮৫ সালে কলকাতা ত্যাগ করে হিমালয়ের পাদদেশে একটি গুহায় ধ্যানে মগ্ন হন বলে তাঁর বন্ধুরা জানিয়েছিল। ধ্যানে দেড় বছরের মতো কাটিয়ে কলকাতা ফিরে সেখানকার বিভিন্ন গোপন রাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে সখ্য গড়ে ওঠে তাঁর। খবর পেয়ে ভারত সরকার তাঁকে ১৯৮৬ সালে ভারত ত্যাগের নির্দেশ দেয়।
ভারত থেকে বিতাড়িত হয়ে জঁ ক্যারিবিয়ান দ্বীপে একটি নৌকায় তাঁর সংসার পাতেন। ওই নৌকাতেই তাঁর চতুর্থ সন্তানের জন্ম হয়। সেখান থেকে আবারও কোথায় যেন ডুব দেন তিনি। এর অনেক বছর পর ২০১২ সালের ২৪ ডিসেম্বর ফ্রান্সের জনপ্রিয় দৈনিক লা ফিগারোতে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি ছাপা হয়। বলা হয়, সামাজিক আন্দোলনের কর্মী ও লেখক জঁ ক্যা ৬৯ বছর বয়সে মারা গেছেন। ২৭ ডিসেম্বর প্যারিসের নিম্ন মধ্যবিত্তদের আবাসিক এলাকা ‘লজে টার্ন-এট-গারোন্নে’তে পারিবারিকভাবে তাঁর স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হবে। লা ফিগারো পত্রিকায় জঁ-এর পরিচিতি দেওয়ার ক্ষেত্রে তাঁর অনেক দেশে অনেক কাজে যুক্ত হওয়ার বর্ণনা আছে। তবে তাতে বলা আছে, তাঁর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছিল ’৭১-এর ৩ ডিসেম্বরে বাংলাদেশের শরণার্থীদের জন্য বিমান ছিনতাই করা।
বিস্মৃত একজন
জঁ ক্যার ওই তিরোধান—না প্যারিস, না বাংলাদেশ কেউই স্মরণে রাখেনি। ’৭১-এ বিশ্ব কাঁপানো জঁ-এর জীবনের শেষ কটা বছর কেটেছে একান্ত পারিবারিক পরিসরে। তবে ’৭১-এর ৩ ডিসেম্বর প্যারিস বিমানবন্দরে তিনি যে দুঃসাহসী ঘটনা ঘটিয়েছিলেন, তা কিন্তু বৃথা যায়নি। ডিসেম্বরের ৮ তারিখে জঁ ক্যা জেলে থাকা অবস্থাতেই ফরাসি রেডক্রস ও নাইটস হাসপাতাল বাংলাদেশের শরণার্থীদের জন্য ২০ টন ওষুধ ও শিশু খাদ্য পাঠায়। পাকিস্তানি বাহিনীর বাংলাদেশের মানুষের ওপর নির্মম গণহত্যা ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে বিশ্বজুড়ে জনমত তীব্র হয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে বিশ্বজুড়ে সাধারণ মানুষের সমর্থন বাড়ে। বিস্ময়করভাবে জঁর মৃত্যুও হয়েছিল আমাদের বিজয়ের মাস ডিসেম্বরেই। দিনটি ছিল ২৩ ডিসেম্বর।
জঁ ক্যার বিমান ছিনতাইয়ের খবরের ভিডিও দেখুন :