দীপিকা পাড়ুকোন

দীপিকা পাড়ুকোন ১৯৮৬ সালের ৫ জানুয়ারি ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা সাবেক ব্যাডমিন্টন তারকা প্রকাশ পাড়ুকোন। মা উজ্জ্বলা। দীপিকার ছোটবেলা কেটেছে ভারতের বেঙ্গালুরুতে। দীপিকা একসময় জাতীয় পর্যায়ের ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড় ছিলেন। বর্তমানে তিনি বলিউডের সবচেয়ে বেশি পারিশ্রমিক পাওয়া শীর্ষস্থানীয় অভিনেত্রী। সাবলীল অভিনয়, অনন্য সৌন্দর্য, ফ্যাশন সচেতনতা—সব মিলিয়ে দীপিকা পাড়ুকোন নিজেকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। ক্যারিয়ারের শুরু থেকে বক্স অফিসে ঝড় তোলা এই লাস্যময়ী অভিনেত্রী শুধু বলিউডেই নয়, হলিউডেও দুর্দান্ত অভিনয়শৈলীর পরিচয় দিয়েছেন।

দশম শ্রেণিতে পড়ার সময় তিনি ব্যাডমিন্টন ছেড়ে মডেলিংকে নিজের ক্যারিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন। বলিউডে পা রাখার আগে তিনি কিংফিশার ক্যালেন্ডারের বিখ্যাত মডেল ছিলেন। ২০০৬ সালে কানাড়া ছবি ‘ঐশ্বরিয়া’ দিয়ে অভিনয়জীবন শুরু করা দীপিকার বলিউডে প্রথম সিনেমা ‘ওম শান্তি ওম’। ছবিটি মুক্তি পায় ২০০৭ সালে। প্রথম সিনেমা দিয়েই দীপিকা কোটি ভক্তকে নিজের করে নিয়েছেন। পেয়েছেন শ্রেষ্ঠ নারী অভিষেক ফিল্মফেয়ার পুরস্কার। এরপর ‘বাচনা এয় হাসিনো’, ‘লাভ আজ কাল’, ‘ককটেল’, ‘চেন্নাই এক্সপ্রেস’-এর মতো একের পর এক ব্যবসাসফল ছবিতে অভিনয় করেছেন। ২০১৭ সালে সঞ্জয় লীলা বানসালির ‘পদ্মাবত’ সিনেমায় অভিনয় করে দুনিয়াজুড়ে বিপুলসংখ্যক মানুষের মন জয় করেন। ২০০৯, ২০১২, ২০১৩ সালে তিনি যথাক্রমে ‘লাভ আজ কাল’, ‘ককটেল’ ও ‘চেন্নাই এক্সপ্রেস’ সিনেমার জন্য ফিল্মফেয়ার পুরস্কারের শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী হিসেবে মনোনীত হয়েছিলেন। ২০১৩ সালে ‘গোলিও কি রাসলীলা রামলীলা’ ও ২০১৫ সালে ‘পিকু’র জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী হিসেবে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার পান। এরপর ২০১৫ সালে ‘বাজিরা মাস্তানি’ সিনেমার জন্য ফিল্মফেয়ার পুরস্কারের জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী হিসেবে মনোনয়ন পান।

বলিউড সিনেমার বাইরে দীপিকা পাড়ুকোন এযাবৎ তিনটি মিউজিক ভিডিওতে কাজ করেছেন। ২০১৪ সালে তামিল ফিকশন ‘কোচাদাইয়ান’-এ রজনীকান্তের বিপরীতে অভিনয় করে দক্ষিণে তোলপাড় সৃষ্টি করেন দীপিকা। একই বছর তিনি ‘ফাইন্ডিং ফ্যানি’ নামে ইংরেজি ভাষার একটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। ২০১৫ সালে ‘মাই চয়েজ’ নামের একটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন তিনি। এরপর ২০১৭ সালে তাঁর হলিউডের প্রথম ছবি ‘ট্রিপল এক্স: রিটার্ন অব জেন্ডার কেইজ’ মুক্তি পায়। কয়েক বছর ধরে বলিউডের আরেক জনপ্রিয় অভিনেত্রী প্রিয়াঙ্কা চোপড়ার সঙ্গে বেশ ভালোই লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন দীপিকা পাড়ুকোন। এই যেমন ২০১৬ সালে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সাপ্তাহিক ‘ইস্টার্ন আই’য়ের জরিপে ‘এশিয়ার সেরা আবেদনময়ী নারী’র তালিকায় প্রিয়াঙ্কা চোপড়াকে পেছনে ফেলে প্রথম স্থান দখল করেন। আর এর পরের বছরই আয়ের হিসাবেও প্রিয়াঙ্কাকে পেছনে ফেলে প্রথম স্থান অধিকার করেছেন দীপিকা পাড়ুকোন। ফোর্বস ম্যাগাজিনের মতে, ২০১৭ সালে তিনি আয় করেছেন ১১ মিলিয়ন ডলার। প্রিয়াঙ্কার আয় যেখানে ১০ মিলিয়ন ডলার। দীপিকা-প্রিয়াঙ্কার এ লড়াই শুধু দেশেই আটকে নেই, পৌঁছে গেছে হলিউডেও। এ ছাড়া ফেসবুক, টুইটার ও ইনস্টাগ্রাম—তিন মাধ্যমেই প্রিয়াঙ্কাকে পেছনে ফেলেছেন দীপিকা। ২০১৭ সালে একাডেমি অব মোশন পিকচার অব আর্টস অ্যান্ড সায়েন্সেসের সদস্য হয়েছেন দীপিকা পাড়ুকোন।

তাঁর এই সাফল্যমণ্ডিত ক্যারিয়ার এখন যতটা সহজ মনে হয়, ততটা সহজ কিন্তু নয়। কিছুদিন আগেই যেমন তাঁকে ‘পদ্মাবত’ ছবিটির জন্য প্রাণনাশের হুমকি, গলা-নাক কাটার হুমকি সহ্য করতে হয়েছে। এ ছাড়া প্রেমসংক্রান্ত বিভিন্ন বিতর্ক তো দীপিকার নিত্যসঙ্গীই বলা যায়। প্রথম প্রেম নিহার পান্ডিয়া থেকে বর্তমানে রণবীর সিং, দীপিকার প্রেমিকদের তালিকাটা বেশ দীর্ঘই। দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন দীপিকা। শুরুতে শোবিজের মোহময় জগতে এসে পড়াশোনায় আর এগোতে পারেননি। রান্নাবান্নায় বেশ ঝোঁক আছে দীপিকার। তিনি পাকা রাঁধুনিও। দীপিকা নিজের ক্যারিয়ারের প্রতি যেমন যত্নশীল, সমাজের প্রতিও তেমনটাই। সুযোগ পেলেই বিভিন্ন দাতব্য সংস্থার জন্য নিজের উপার্জিত অর্থ দান করেন। ম্যারাথন দৌড়ে আয় করা অর্থ দান করেছেন এনজিওতে। মহারাষ্ট্রের এক গ্রামে ক্যাম্পেইন করেছেন নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য। নারীদের জন্য শুরু করেছেন নিজের ফ্যাশন লাইন। তিনি ভারতীয় এনজিও ইন্ডিয়ান সাইকিয়াট্রিক সোসাইটির শুভেচ্ছাদূত।

 

আরও