ভার্চ্যুয়াল মুদ্রা নিয়ে তোপের মুখে জাকারবার্গ
ভার্চ্যুয়াল মুদ্রা লিবরা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আইনপ্রণেতাদের উদ্বেগ দূর করতে আবারও আশ্বস্ত করার চেষ্টা করলেন ফেসবুকের প্রধান নির্বাহী মার্ক জাকারবার্গ। ফেসবুকের প্রস্তাবিত ডিজিটাল মুদ্রার নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে সংশয় রয়েছে দেশটির নিয়ন্ত্রক সংস্থার। আজ বৃহস্পতিবার বিবিসি অনলাইনের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
ওয়াশিংটনে গতকাল এক বাগ্বিতণ্ডায় ভরা শুনানিতে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস সদস্য ফেসবুকের পেমেন্ট সিস্টেমের পরিকল্পনার ওপর আক্রমণ করেন। তাঁরা সতর্ক করে বলেন, ফেসবুকের এ সিস্টেম অপরাধী ও সন্ত্রাসীরা অপব্যবহারের সুযোগ পাবে।
অতীতে যুক্তরাষ্ট্রের আইনপ্রণেতার কাছে মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বলে জাকারবার্গকে চ্যালেঞ্জ জানানো হয়।
জাকারবার্গ অবশ্য বলেন, সরকারি অনুমোদন ছাড়া তিনি লিবরা চালু করবেন না। তাঁর ভাষ্য, যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রকদের অনুমতি ছাড়া লিবরা অ্যাসোসিয়েশন কনসোর্টিয়াম যদি ক্রিপটোকারেন্সি চালু করার উদ্যোগ নেয়, তবে ফেসবুক ওই কনসোর্টিয়ামে থাকবে না।
লিবরার প্রকল্প নিয়ে গত এক মাসের কঠোর সমালোচনার মধ্যে কংগ্রেসের ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস হাউস কমিটির মুখোমুখি হলেন জাকারবার্গ।
শুরুতে ২৮টি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান মিলে কনসোর্টিয়াম গড়ে লিবরা অ্যাসোসিয়েশন থেকে লিবরা মুদ্রা চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। তবে সেখান থেকে মাস্টারকার্ড, ভিসা, ইবে, পেপ্যালের মতো ৮টি প্রতিষ্ঠান সরে গেছে।
তবে বিশ্বজুড়ে অনেক দেশের সরকার ফেসবুকের মুদ্রা আনার প্রচেষ্টা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। ফেসবুক যদি তাদের মুদ্রা ব্যবস্থা নিরাপদ না করতে পারে, তবে তা বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছে জি৭ গ্রুপের দেশগুলো। মানি লন্ডারিংয়ের মতো কাজে এ মুদ্রার ব্যবহার নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে। এ ছাড়া বৈশ্বিক আর্থিক ব্যবস্থায় বাধা সৃষ্টি, তথ্য বিষয়ে ফেসবুকের অধিক নিয়ন্ত্রণের মতো বিষয়গুলো নিয়ে দুশ্চিন্তা ছড়াচ্ছে।
গত সপ্তাহে নানা ত্রুটিবিচ্যুতি ও রাজনৈতিক চাপ থাকা সত্ত্বেও আনুষ্ঠানিকভাবে লিবরাকে সামনে এগিয়ে নেওয়ার কথা বলে ফেসবুক। গত ১৪ অক্টোবর জেনেভায় লিবরা অ্যাসোসিয়েশন আনুষ্ঠানিকভাবে প্রথম বৈঠক করে।
ক্রস বর্ডার পেমেন্ট সিস্টেমের সুবিধাযুক্ত প্রাইভেট কারেন্সি তৈরিতে ফেসবুকের উদ্যোগ বিভিন্ন দেশে নিয়ন্ত্রণের কথা বলা হচ্ছে। সুইজারল্যান্ডভিত্তিক লিবরা অ্যাসোসিয়েশন অবশ্য বলছে, ফেসবুকের কাছ থেকে এ উদ্যোগ তারা দূরে রাখবে। লিবরা ফেসবুকের মালিকানাধীন থাকবে না।
আইনপ্রণেতারা বলছেন, ফেসবুক যেখানে ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত গোপনীয় বিষয়গুলো রক্ষায় হিমশিম খাচ্ছে, সেখানে লিবরার মতো মুদ্রা চালু হলে তা বিপদ ডেকে আনবে।
লিবরা কী?
ফেসবুকের লিবরা সবাইকে একটি ইলেকট্রনিক ওয়ালেটের সুবিধা দেবে। ফেসবুক বলছে, আন্তর্জাতিক সব মুদ্রার মূল্যমানের সঙ্গে সংগতি রেখে এই মুদ্রার মূল্যমান ধরা হবে। প্রচলিত মুদ্রা দিয়ে লিবরা কেনা যাবে। ফেসবুকের এক শ্বেতপত্রে বলা হয়, লিবরার সঙ্গে ফেসবুক ব্যবহারকারীর তথ্যের যোগসূত্র থাকবে না বলে তাদের লক্ষ্য করে বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করা হবে না। তবে ফেসবুকের পক্ষ থেকে লিবরা পেমেন্টের সঙ্গে তাদের বিভিন্ন পণ্য যুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে ফেসবুকের। ফেসবুকের এসব পণ্য কয়েক শ কোটি ব্যবহারকারী নিয়মিত ব্যবহার করছেন। বিটকয়েনের মতো ক্রিপটোকারেন্সির সঙ্গে এর পার্থক্য হবে সহজলভ্য ও সহজে ব্যবহার করার সুবিধা।
ফেসবুক বলছে, ভার্চ্যুয়াল মুদ্রায় ব্যাংক ডিপোজিট, স্বল্পমেয়াদি সরকারি নিরাপত্তার মতো বিষয় যুক্ত থাকবে। এতে অন্যান্য ক্রিপটোকারেন্সির মতো মুদ্রাস্ফীতি হবে না।
লিবরার উন্নয়নকারী ফেসবুকের ক্যালিব্রা বিভাগের প্রধান ডেভিড মার্কাস বলেন, ভবিষ্যতে ভার্চ্যুয়াল মুদ্রায় তাঁরা নানা আর্থিক সুবিধা দেওয়ার পরিকল্পনা করছেন। এর মধ্যে ঋণদানের মতো বিষয়ও রয়েছে। লক্ষণীয় বিষয় হলো, একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী তাঁর অ্যাকাউন্টে যে লিবরা জমা রাখবেন, তার বিপরীতে ফেসবুক তাঁকে কোনো সুদ দেবে না।