ফেসবুকের পদ ছাড়তে জাকারবার্গের ওপর চাপ
মার্কিন নির্বাচনে রুশ হস্তক্ষেপ থেকে শুরু করে ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্য কেলেঙ্কারি-ফেসবুকের বিপত্তির তালিকা লম্বা হচ্ছে তো হচ্ছেই। এতে ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ বেশ বিপদেই আছেন। বিনিয়োগকারীরা তাঁর ওপর চাপ বাড়াচ্ছেন। তাঁকে ফেসবুকের প্রধান নির্বাহী পদ থেকে সরে যাওয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন। ফেসবুকের বড় একটি অংশের শেয়ারের মালিক ট্রিলিয়াম অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট জোনাস ক্রোন আজ শনিবার জাকারবার্গকে সরে যেতে বললেন।
ফেসবুকের সমালোচকদের বিষয়ে নেওয়া সাম্প্রতিক এক পদক্ষেপ ঘিরে নতুন আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে। নিউইয়র্ক টাইমসের একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন সম্প্রতি জাকারবার্গের ওপর চাপ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, একজন রিপাবলিকান রাজনীতিকের মালিকানাধীন রাজনৈতিক পরামর্শক ও পিআর প্রতিষ্ঠানকে ভাড়া করেছে ফেসবুক। ওই প্রতিষ্ঠানকে ফেসবুক তাদের সমালোচকদের দুর্নাম করার দায়িত্ব দিয়েছে বলে নিউইয়র্ক টাইমস দাবি করে। এমন কথা প্রকাশ হওয়ার পর বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অস্বস্তি প্রকাশ পায়। ওই সংবাদ প্রকাশের পরই জাকারবার্গকে ফেসবুকের চেয়ারম্যান পদটি ছেড়ে দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
ফেসবুকের বড় একটি অংশের শেয়ারের মালিক ট্রিলিয়াম অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট জোনাস ক্রোন। শনিবার দ্য গার্ডিয়ানের খবরে জানানো হয়, তিনি নিউইয়র্ক টাইমসের ওই প্রতিবেদনের পর পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান পদ ত্যাগ করার আহ্বান জানিয়েছেন মার্ক জাকারবার্গকে।
জোনাস ক্রন বলেন, ফেসবুক একক ব্যক্তির ওপর নির্ভরশীল একটি প্রতিষ্ঠানের মতো আচরণ করছে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি আসলে তা নয়। এটি একটি কোম্পানি। চেয়ারম্যান ও সিইওর পদ আলাদা থাকাটা কোম্পানির জন্যই প্রয়োজন।
নিউইয়র্ক টাইমসের রিপোর্ট অনুযায়ী ওয়াশিংটন ডিসিভিক্তিক রিপাবলিকানদের প্রতিষ্ঠান ডিফাইনারস পাবলিক অ্যাফেয়ার্সকে ভাড়া করে ফেসবুক, যারা পিআরের পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটির প্রতিদ্বন্দ্বী ও সমালোচকদের দুর্নাম করে। প্রযুক্তিবিষয়ক ওয়েবসাইট টেকক্রাঞ্চ জানিয়েছে, রিপাবলিকান এক নেতার ওই প্রচার প্রতিষ্ঠান নিরপেক্ষ নয়।
জাকারবার্গ অবশ্য এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। নিউইয়র্ক টাইমসে প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর মার্ক জাকারবার্গ জানিয়েছেন, এটি দেখার পর দ্রুততার সঙ্গে তিনি আলোচনা করেছেন এবং ওই প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে ফেসবুকের সব সম্পর্ক ছিন্ন করেছেন। একই দাবি করেছেন ফেসবুকের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা (সিওও) শেরিল স্যান্ডবার্গও।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের তথ্য অনুযায়ী এ ঘটনার আগে থেকেই ফেসবুকের প্রধান নির্বাহীর ওপর সরে যাওয়ার চাপ রয়েছে।
দ্য নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে জানানো হয়, ফেসবুকের নেতৃত্বেই গলদ। গত তিন বছরে অসংখ্য সতর্কবাণী এড়িয়ে গেছেন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মার্ক জাকারবার্গ ও প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা শেরিল স্যান্ডবার্গ। ফেসবুকের পায়ে-পায়ে যখন বিপদ, তখন তাঁরা অন্যান্য প্রকল্পে ব্যস্ত ছিলেন। মূল সমস্যা আমলে নেননি।
প্রায় ৫০ জনের সাক্ষাৎকার নিয়ে পাঁচ হাজার শব্দের সে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফেসবুক ব্যবহারকারীদের তথ্য দিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হস্তক্ষেপে কেমব্রিজ অ্যানালিটিকার ঘটনা যখন মার্ক জাকারবার্গের কানে পৌঁছায়, তখন তিনি এক শব্দে পুরো বিষয় উড়িয়ে দেন। তথ্যের নিরাপত্তার দায়িত্বে যাঁরা ছিলেন, তাঁরা আগেই সম্ভাব্য ঝুঁকি নিয়ে সতর্ক করেছিলেন মার্ককে, তবে আমলে নেননি তিনি।
ফেসবুকের সাবেক নিরাপত্তা প্রধান অ্যালেক্স স্টামোসের সঙ্গে শেরিলের সুসম্পর্ক ছিল না। নির্বাচনে সম্ভাব্য হস্তক্ষেপ নিয়ে শেরিলের অনুমতি ছাড়াই তদন্ত শুরু করেন স্টামোস। ২০১৭ সালে যখন ফেসবুকের পরিচালনা পর্ষদকে ঘটনা সম্পর্কে জানান, রেগে যান শেরিল। আর ফেসবুক ছাড়েন স্টামোস।
নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, অভ্যন্তরীণ সমস্যা নিয়ে ফেসবুক এত ব্যস্ত ছিল যে বাইরের ঝড় টের পায়নি।
এর আগে গত অক্টোবর মাসেও জাকারবার্গকে ফেসবুকের নেতৃত্ব থেকে সরে আসার আহ্বান জানান বিনিয়োগকারীরা। কেলেঙ্কারি ও বিতর্কে জড়িয়ে পড়ায় প্রতিষ্ঠানটির বিনিয়োগকারীরা মার্ক জাকারবার্গের অপসারণ চাইছেন। তাঁকে চেয়ারম্যানের পদ থেকে সরাতে ফেসবুকের পরিচালনা পর্ষদের কাছে প্রস্তাব রাখেন নিউইয়র্ক, রোড আইসল্যান্ড ও পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যের কোষাধ্যক্ষরা।
জাকারবার্গের হাতে কোম্পানির সব ক্ষমতা কুক্ষিগত। তাই তাঁরা মনে করছেন, জাকারবার্গ না থাকলেই বরং ফেসবুকের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে। এর আগেও তাঁকে সরাতে ভোট দেওয়ার ক্ষমতা চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু বরাবরই সে প্রস্তাবগুলো নাকচ হয়েছে।
২০১৭ সালেও স্বাধীন একজন চেয়ারম্যান নিয়োগের বিষয়ে শেয়ারহোল্ডাদের একটি প্রস্তাব বাতিল হয়ে যায়। কেননা, ফেসবুকে জাকারবার্গের সিংহভাগ শেয়ার থাকার কারণে বাইরে থেকে ওঠা কোনো প্রস্তাব কার্যত প্রতীকী। ফেসবুককে বাঁচাতে মরিয়া জাকারবার্গ এখন কী করবেন, সেটাই দেখার বিষয়।