করোনা ঠেকাতে যক্ষ্মা ও পোলিও ভ্যাকসিন নিয়ে পরীক্ষা
কোভিড-১৯–এর সম্ভাব্য সুরক্ষা পদ্ধতি হিসেবে যক্ষ্মা ও পোলিও ভ্যাকসিন নিয়ে পরীক্ষা শুরু করেছেন গবেষকেরা। ওয়াশিংটন পোস্টকে গতকাল বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের গবেষকেরা বলেছেন, যক্ষ্মা ও পোলিও ভ্যাকসিন কোভিড-১৯ থেকে রোগীদের সুরক্ষা দিতে পারে কি না, এর পরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা।
টেক্সাস এ অ্যান্ড এম হেলথ সায়েন্স সেন্টারের অধ্যাপক জেফ্রি ডি. সিরিলো বলেছেন, এটি বিশ্বের একমাত্র ভ্যাকসিন, যা এখনই কোভিড-১৯–এর বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য দেওয়া যেতে পারে।
ওয়াশিংটন পোস্টকে সিরিলো বলেন, তাঁরা পরামর্শ দিচ্ছেন না যে ভ্যাকসিনগুলো লোকজনকে কোভিড-১৯ সংক্রমণ থেকে সুরক্ষিত রাখবে। তবে তাঁরা এর সংস্পর্শে এলেও কম উপসর্গ দেখবে বলে মনে করা হচ্ছে।
গবেষকেরা এ ক্ষেত্রে পাকিস্তানের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেছেন। এখানে বেশির ভাগ মানুষকে যক্ষ্মার টিকা দেওয়া হয়েছিল বলে কোভিড-১৯–এ সংক্রমিত হয়ে মৃত্যুহার কম।
কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটি মেডিকেল সেন্টারের মেডিসিনের অধ্যাপক আজরা রাজা বলেছেন, ‘তারা যে সংক্রমিত হচ্ছে না, তা নয়। পজিটিভ সংক্রমণে হার অনেক বেশি। তবে তারা মারা যাচ্ছে কম। এটি ক্রমবর্ধমান, কিন্তু তারা এতে মারা যাচ্ছে না।’
সিরিলো উল্লেখ করেন, যক্ষ্মার ভ্যাকসিনটি ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন (এফডিএ) দ্বারা অনুমোদিত, সুতরাং এটি কার্যকর হলে বিতরণ করা আরও সহজ হবে।
বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস মোকাবিলায় নানা ভ্যাকসিন তৈরির প্রকল্প নিয়ে কাজ চলছে। তাঁদের গবেষণাটিও করোনা মোকাবিলার ক্ষেত্রে সম্ভাব্য একটি উপায় হিসেবে দেখা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের গবেষকেরা বলছেন, এ বছরের শেষ নাগাদ ভ্যাকসিনের দেখা মিলতে পারে।
বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসের বিস্তার মোকাবিলায় ভ্যাকসিন তৈরির তোড়জোড় চলছে। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি সম্ভাব্য ভ্যাকসিনের পরীক্ষা চলছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, তাঁরা ইতিমধ্যে ২০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন তৈরি করে রেখেছেন, যা নিরাপদ প্রমাণিত হলেই ছাড়া হবে। এর পরপরই চীনের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, তাদের হাতেও শরতের আগেই আসার মতো ভ্যাকসিন আছে।
দাতব্য সংস্থা কোয়ালিশন ফর এপিডেমিক প্রিপেয়ার্ডনেস ইনোভেশনসের (সিইপিআই) তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বজুড়ে এখন পর্যন্ত ২২৪টি ভ্যাকসিন উন্নয়নে কাজ চলছে। এর মধ্যে উত্তর আমেরিকাতেই চলছে ৪৯ শতাংশ প্রকল্প। তবে মানবশরীরের দ্বিতীয় ধাপের পরীক্ষায় ৫টি ভ্যাকসিন নিয়ে এগিয়ে রয়েছে চীন।
চীনের এগিয়ে থাকা পাঁচটি ভ্যাকসিনের মধ্যে গতকাল রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সিনোফার্ম প্রাণিদেহে তাদের ভ্যাকসিন পরীক্ষা থেকে ইতিবাচক ফলের খবর প্রকাশ করেছে। চীনা গবেষকেরা সেল সাময়িকীতে গবেষণাসংক্রান্ত নিবন্ধ প্রকাশ করেছেন। তাঁরা দাবি করেছেন, নিষ্ক্রিয় ভাইরাস থেকে তৈরি ভ্যাকসিন প্রার্থী বিবিআইবিপি-করভি সার্স-কোভ-২–এর বিরুদ্ধে উচ্চ মাত্রার নিরপেক্ষ অ্যান্টিবডিকে প্ররোচিত করতে পারে।
যুক্তরাজ্যের ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনের বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি আত্মপরিবর্ধনকারী আরএনএ প্রযুক্তির ওপর ভিত্তি করে করোনাভাইরাস প্রতিরোধী ভ্যাকসিন তৈরি কথা জানিয়েছেন।
আশার কথা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে বলা হচ্ছে, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের তৈরি পরীক্ষামূলক ‘এজেডডি১২২’ ভ্যাকসিনটির ব্যাপক উৎপাদন শুরু করেছে ব্রিটিশ ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান অ্যাস্ট্রাজেনেকা। আগামী আগস্ট বা সেপ্টেম্বর নাগাদ কার্যকর ভ্যাকসিন আছে কি নেই, তা জেনে যাবেন বলে মনে করছেন প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা প্যাসকল সারিওট।