ফেসবুক বিপণন শিখে ছাত্রজীবনেই উদ্যোক্তা শাহেদ, মাসে আয় দেড় লাখ টাকা
হাতখরচের টাকা বাঁচিয়ে ব্যবসার জন্য পাঁচ হাজার টাকা মূলধন জোগাড় করেছিলেন শাহেদ সালমান। দুই বছরেরও কম সময়ে সেই ব্যবসায়ে এখন তাঁর মাসিক লাভ প্রায় দেড় লাখ টাকা। ক্রাউন কালেকশন নামের এই প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী শাহেদ সালমান এখনো কিন্তু ছাত্র। ঢাকা কলেজে ব্যবস্থাপনা বিষয়ে স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষে পড়ছেন তিনি। ফেসবুক বিপণনের কোর্স করে নিজের একটি প্রতিষ্ঠান দাঁড় করিয়েছেন। সেখানে ১৭ জন তরুণের কর্মসংস্থানও করেছেন তিনি।
কলেজে উচ্চমাধ্যমিকে পড়ার সময় শাহেদ বাসা থেকে প্রতিদিন ১০০ টাকা করে হাতখরচ পেতেন। শাহেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘সেখান থেকে ৮০ টাকা করে জমাতাম। কলেজে যাওয়া-আসা করতাম হেঁটে হেঁটে। প্রতিদিন ১০-১২ কিলোমিটার হাঁটতে হতো।’ একসময় শাহেদের হাতে প্রায় জমে যায় ৫ হাজার টাকা। সেটা দিয়ে শুরু করেন পাঞ্জাবির ব্যবসা। ৪টি ডিজাইনের ১২টি পাঞ্জাবি দিয়ে ব্যবসায় নামেন শাহেদ। লালবাগের কাছে উর্দু রোডের পাঞ্জাবির মার্কেট দেশের অন্যতম বড় বাজার। সেটা শাহেদের বাসার পাশেই। সেখান থেকে পাঞ্জাবি সংগ্রহ করেন তিনি।
২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে ফেসবুকে একটা পেজ খুলে ব্যবসা শুরু করেন তিনি। ফেব্রুয়ারিতে ৫ ডলার খরচ করে তাঁর পেজের বিজ্ঞাপন (পেজ বুস্ট) দেন ফেসবুকে। সেখান থেকে তিনটা অর্ডার আসে, লাভ হয় ৮০০ টাকা। এরপর আবারও পেজের বিজ্ঞাপন দেন শাহেদ। পরের মাসে গড়ে প্রতিদিন একটা করে অর্ডার আসতে থাকে শাহেদের পেজে। মার্চে লাভ হয় প্রায় ১০ হাজার টাকা। এপ্রিলে রমজান মাস শুরু হলে পাঞ্জাবির চাহিদা বাড়ে এবং শাহেদের ব্যবসাও বাড়তে থাকে। এর আগে যা লাভ হয়েছিল সেই পুরো টাকা আবার ব্যবসায়ে খাটান তিনি। নতুন নতুন নকশার পাঞ্জাবি বিক্রি করতে থাকেন ফেসবুক পেজ থেকে।
অনলাইনে ব্যবসা করতে হলে ভালো ছবির প্রয়োজন। শাহেদ ভালো মানের ক্যামেরাযুক্ত স্মার্টফোন কেনেন। যেহেতু ফেসবুকের বিজ্ঞাপনের কারণে তাঁর বিক্রি দিন দিন বাড়ছিল, শাহেদ সিদ্ধান্ত নেন ফেসবুক বিপণনের ওপর কোর্স করার। এ জন্য তিনি ভর্তি হন এএন আইটি একাডেমিতে। এই কোর্সের শিক্ষা কাজে লাগিয়ে বিক্রি প্রায় দ্বিগুণ করেন শাহেদ।
গত জুন-জুলাই মাসে প্রায় ৫০ হাজার টাকা করে তাঁর মাসিক লাভ হয়। কোর্সটা করার পর মাসিক লাভের পরিমাণ বেড়ে এক লাখ টাকায় দাঁড়ায়। শাহেদের প্রতিষ্ঠান ক্রাউন কালেকশনে এখন পাঞ্জাবির পাশাপাশি শার্ট, টি-শার্ট, ঘড়ি, সুগন্ধি, সানগ্লাস, বেল্ট, চামড়ার ওয়ালেট ইত্যাদি পাওয়া যায়।
শাহেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘ফেসবুক মার্কেটিং শেখা এবং তা সঠিকভাবে কাজে লাগানোই ছিল ক্রাউন কালেকশনের জন্য একটা বড় বাঁক। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। তবে এখন আর কোনো চিন্তাই মাথায় আসে না যে পড়ালেখা শেষ করে কী করব, কোথায় চাকরি করব। এখন আমার আত্মবিশ্বাস বেড়ে গেছে, নিজের প্রতিষ্ঠানে ১০০ জনের কর্মসংস্থান করতে চাই।’
শাহেদের প্রতিষ্ঠানে এখন কাজ করেন ১৭ জন। প্রতিদিন প্রায় ৪০ থেকে ৪৫টি পণ্য সরবরাহ করা হয় প্রতিষ্ঠানটি থেকে। সারা দেশেই পণ্য সরবরাহ করেন শাহেদ। পণ্য দেখে ভালো না লাগলে ফেরত নেওয়ারও ব্যবস্থা রেখেছেন তিনি। প্রতি মাসে এখন তাঁর লাভ থাকে প্রায় দেড় লাখ টাকার বেশি।
শাহেদ প্রথম আলোকে আরও বলেন, ‘মানুষের সততা এবং বিশ্বস্ততা অর্জন করে প্রতিষ্ঠানটি যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, আমি আশা করি ভবিষ্যতে ব্যবসার আরও বিস্তার ঘটবে। ব্যবসার সঙ্গে সঙ্গে প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনাও সমানতালে চালিয়ে যাচ্ছেন শাহেদ। সারা দিন ব্যবসার কাজে থাকলেও সন্ধ্যার পর নিয়মিত পড়ার টেবিলে বসেন তিনি।