মানুষ কি আদৌ মঙ্গল গ্রহের প্রতিকূল পরিবেশে টিকে থাকতে পারবে

মঙ্গল গ্রহ

পৃথিবীর বাইরে অন্যান্য গ্রহে মানুষের বসতি স্থাপনের পরিকল্পনার কথা বিভিন্ন সময়ে জানিয়েছেন স্পেসএক্স, টেসলাসহ খুদে ব্লগ লেখার সাইট এক্সের (সাবেক টুইটার) মালিক ইলন মাস্ক। আগামী কয়েক বছরে মঙ্গল গ্রহে বসতি গড়ার জন্য ১ বা ২ হাজার নয়, ১০ লাখ মানুষকে মঙ্গল গ্রহে নিয়ে যেতে চান তিনি। তবে মানুষ কি আদৌ মঙ্গল গ্রহের প্রতিকূল পরিবেশে টিকে থাকতে পারবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

মঙ্গল গ্রহের প্রতিকূল পরিবেশ নিয়ে একটি বই লিখেছেন যুক্তরাষ্ট্রের রাইস বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞানী কেলি ওয়েইনারস্মিথ ও তাঁর স্বামী কার্টুনিস্ট জ্যাক ওয়েইনারস্মিথ। ‘আ সিটি অন মার্স’ নামের বইটি এ বছর যুক্তরাজ্যের রয়্যাল সোসাইটি ত্রিবেদী সায়েন্স বুক পুরস্কার পেয়েছে। সেই বইয়ে বলা হয়েছে, ইলন মাস্কের মঙ্গল গ্রহ জয়ের স্বপ্নের পেছনে অনেক ত্রুটি রয়েছে। মানুষ আদৌ মঙ্গলের প্রতিকূল পরিবেশে টিকে থাকতে পারবে কি না বা তার জন্য আমরা প্রস্তুত কি না, তার উত্তর এখনো জানা নেই। আমরা কীভাবে মঙ্গল গ্রহের বিষাক্ত মাটি, দুর্বল মাধ্যাকর্ষণ ও উচ্চ বিকিরণের মতো চ্যালেঞ্জ কাটিয়ে উঠব, সে উত্তরও এখনো অজানা।

কেলি ওয়েইনারস্মিথ সিএনএনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, মঙ্গল গ্রহে মানুষের বেঁচে থাকার অনেক বাধা আছে। মঙ্গল গ্রহের পাতলা বায়ুমণ্ডল, বিকিরণের উচ্চ মাত্রা ও পারক্লোরেট রাসায়নিকে ভরা বিষাক্ত মাটি মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি তৈরি করবে। এর ফলে দীর্ঘ সময় মঙ্গলে বসবাস করলে হরমোনের ওপর চাপ তৈরি হওয়ার কারণে মানবদেহে নানা সংকট দেখা দেবে। এ ছাড়া মঙ্গল গ্রহের দুর্বল মাধ্যাকর্ষণ শক্তির কারণে হাড়ক্ষয় ও পেশিক্ষয়ের মতো সমস্যা বাড়বে। মঙ্গল গ্রহে সন্তান জন্মদান ও অন্যান্য মানবিক জৈবিক প্রক্রিয়ায় অনেক বিপর্যয় দেখা যাবে।

মঙ্গল গ্রহের পাতলা বায়ুমণ্ডল মহাজাগতিক ও সৌর বিকিরণের বিরুদ্ধে সামান্য সুরক্ষা প্রদান করে। দীর্ঘ সময় সেখানে থাকলে ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। মঙ্গল গ্রহে ধূলিঝড়, চরম তাপমাত্রা, বিপজ্জনক বায়ুবাহিত কণার উপস্থিতি মানুষের অভিজ্ঞতাকে বেশ কঠিন করে তুলবে। একই সঙ্গে সেখানে নিয়ে যাওয়া বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জামেরও ক্ষতি হবে। মঙ্গল গ্রহ অভিযানের বিষয়ে কেলি বলেন, ‘আমি দেখতে চাই, চাঁদে একটি গবেষণাকেন্দ্র থাকবে। হয়তো আমাদের জীবদ্দশায় মানুষ মঙ্গল গ্রহে অবতরণ করবে, সেখানে অন্বেষণ শেষে আবার পৃথিবীতে ফিরে আসবে। মঙ্গল গ্রহে উপনিবেশ করতে তাড়াহুড়ো করা যাবে না। আপাতত মঙ্গল গ্রহে বসবাসকে স্বপ্ন হিসেবে দেখা যেতে পারে।’

সূত্র: এনডিটিভি