২০২৪ সালে বিজ্ঞান–দুনিয়ায় আলোচিত ১০ ঘটনা

২০২৪ সালে বিজ্ঞান–দুনিয়ার বেশ কিছু ঘটনা সাড়া ফেলেছেরয়টার্স

২০২৪ সালে বিজ্ঞান–দুনিয়ায় অনেক চমক দেখা গেছে। আবহাওয়ার পূর্বাভাসে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তির ব্যবহার, বৃহস্পতি গ্রহের চাঁদে উচ্চাভিলাষী অভিযান, মাছির মস্তিষ্কের পূর্ণ মানচিত্র উন্মোচন, মহাকাশের রহস্য উন্মোচন, এইচআইভি রোগের প্রতিষেধক উদ্ভাবনের মতো অনেক চমকানো সংবাদ বিজ্ঞান–দুনিয়ায় আলোচনায় ছিল বছরজুড়ে। বিজ্ঞান সাময়িকী স্মিথসোনিয়ানসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে বিজ্ঞান–দুনিয়ার আলোচিত ১০ ঘটনা জেনে নেওয়া যাক।

১. মাছির মস্তিষ্কের পূর্ণ মানচিত্র উন্মোচন

এ বছর বিজ্ঞানীরা প্রাপ্তবয়স্ক মাছির মস্তিষ্কের নিউরন মানচিত্র তৈরি করেছেন। এই মানচিত্রে মাছির ১ লাখ ৩৯ হাজার ২২৫টি নিউরনের তথ্য রয়েছে, যা প্রায় ৫ কোটি সিন্যাপ্স দ্বারা সংযুক্ত। গত অক্টোবর মাসে মাছির মস্তিষ্কের পূর্ণ মানচিত্র ৯টি গবেষণাপত্রের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়। মাছির মস্তিষ্কে প্রায় সাড়ে ৮ হাজার স্বতন্ত্র নিউরন রয়েছে। আর তাই মাছির মস্তিষ্কের নিউরন বেশ জটিলভাবে কাজ করে। আর তাই মানচিত্রটিকে এখন পর্যন্ত কোনো প্রাণীর মস্তিষ্কের সবচেয়ে জটিল মানচিত্র হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।

২. উষ্ণতম বছর ২০২৪

আবহাওয়ার পূর্বাভাসে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তির ব্যবহার বেড়েছে এ বছর। জলবায়ু পরিবর্তনের ইতিহাসে ২০২৪ সালকে আরেকটি রেকর্ড উষ্ণতম বছর হিসেবে সংজ্ঞায়িত করেছেন বিজ্ঞানীরা। শীর্ষস্থানীয় আবহাওয়া ও জলবায়ু সংস্থার তথ্যমতে, ২০২৩ সালের পর উষ্ণতম তাপমাত্রার জন্য ২০২৪ সাল গুরুত্বপূর্ণ। এ বছরের এপ্রিল, জুন, আগস্টে উষ্ণতম মাস হিসেবে আলোচনায় ছিল ২০২৪ সাল। প্রকৃতপক্ষে ২০২৩ সালের জুন থেকে এ বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত টানা ১৬ মাস বিশ্বের গড় তাপমাত্রা প্রতি মাসে আগের রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার মতে, সব মিলিয়ে ২০২৪ সাল প্রথম বছর যা প্রাক্‌-শিল্প সময়ের তুলনায় ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি গরম ছিল।

আরও পড়ুন

৩. বৃহস্পতি গ্রহের চাঁদে উচ্চাভিলাষী মহাকাশ অভিযান

বৃহস্পতি গ্রহের চাঁদ ইউরোপাতে একটি মহাসাগর রয়েছে, সেখানে প্রাণের অস্তিত্ব থাকতে পারে বলে ধারণা করছেন বিজ্ঞানীরা। সেই প্রাণের সন্ধানে গত ১৪ অক্টোবর নিজেদের তৈরি ইউরোপা ক্লিপার নামের মহাকাশযান পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা। নাসার তৈরি সবচেয়ে বড় মহাকাশযানটিতে স্পেকট্রোমিটার, ধুলা বিশ্লেষক, তাপীয় ক্যামেরা, চৌম্বকক্ষেত্র ও মাধ্যাকর্ষণ পরিমাপের যন্ত্র রয়েছে। ক্লিপার জৈব যৌগ অনুসন্ধান করবে। বর্তমানে মহাকাশযানটি সফলভাবে ইউরোপার দিকে ছুটে চলছে।

৪. গবাদিপশুতে বার্ড ফ্লু শনাক্ত

এ বছর প্রথমবারের মতো গরুর শরীরে বার্ড ফ্লু শনাক্ত হয়েছে। শুধু তা–ই নয়, গরুর সঙ্গে দুগ্ধশিল্পে জড়িত কৃষক ও শ্রমিকেরাও এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার প্রমাণ পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। ১৯৯৬ সালে শনাক্ত হওয়া এভিয়ান ফ্লুর এইচ৫এন১ স্ট্রেন মূলত গৃহপালিত মুরগি ও বন্য পাখির শরীরে ছড়াতে দেখা যায়।

৫. রঙিন অরোরা দর্শন

গত ২০ বছরের মধ্যে এ বছর সবচেয়ে বেশি সৌরঝড়ের প্রভাব মেরু এলাকায় বেশি দেখা গেছে। মে মাসে পৃথিবীজুড়ে অন্ধকার রাতেও সবুজ ও লাল আলো আকাশে দেখা যায়। সূর্য বর্তমানে তার ১১ বছরের চক্রের শেষ পর্যায়ে রয়েছে বলে অরোরার এমন চমক দেখা গেছে। সৌরশিখার বিকিরণের কারণে রঙিন আভা দেখা যায়।

৬. উদ্ভিদ থেকে তৈরি জ্বালানি

এ বছর যুগান্তকারী একটি আবিষ্কার করেছেন অস্ট্রেলিয়ার একদল বিজ্ঞানী। উদ্ভিদ থেকে তেল উৎপাদন করার বিশেষ এক কৌশল আবিষ্কার করেছেন তাঁরা, যা পরিবেশবান্ধব বিমান জ্বালানিসহ টেকসই জৈব জ্বালানির বিকাশের নতুন পথের সম্ভাবনা দেখাচ্ছে।

৭. এইচআইভি রোগের প্রতিষেধক উদ্ভাবন

২০২৪ সালে চিকিৎসার দুনিয়ায় অন্যতম আলোচনায় ছিল ইনজেকশনযোগ্য এইচআইভি চিকিৎসাপদ্ধতি। লেনকাপাভির নামের এই উদ্ভাবনকে সায়েন্স ম্যাগাজিন ২০২৪ সালের ‘ব্রেকথ্রু অব দ্য ইয়ার’ ঘোষণা দিয়েছে। এই উদ্ভাবনী থেরাপিতে নতুন এইচআইভি সংক্রমণ প্রতিরোধে ওষুধটি ব্যবহারের সুযোগ তৈরি হয়েছে। এইচআইভির কারণে প্রতিবছর বিশ্বজুড়ে ছয় লাখের বেশি মানুষ মারা যাচ্ছে। সেখানে লেনাকাপাভি ওষুধ নতুন আশার আলো দেখাচ্ছে।

৮. বাসযোগ্য অঞ্চলে সুপার-আর্থের খোঁজ

জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের একটি দল এ বছর পৃথিবী থেকে প্রায় ১৩৭ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত পৃথিবীর চেয়ে বড় একটি গ্রহের খোঁজ পেয়েছেন। একটি নক্ষত্রকে প্রদক্ষিণ করছে বিশালাকার সেই গ্রহ। টিওআই-৭১৫ বি নামের সেই গ্রহটিকে ‘সুপার-আর্থ’ বলা হচ্ছে, যার ব্যাস পৃথিবীর চেয়ে প্রায় ১ দশমিক ৫ গুণ। নতুন এ গ্রহটি বাসযোগ্য অঞ্চলের মধ্যে অবস্থান করছে। এখানে প্রাণের উপস্থিতি থাকতে পারে বলে মনে করেন বিজ্ঞানীরা।

৯. স্টেম সেল ব্যবহারে সাফল্য

এ বছর বিলুপ্তি–‍সংকটে থাকা প্রাণীদের সংরক্ষণ প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে স্টেম সেল ব্যবহারে সাফল্য পেয়েছেন জীববিজ্ঞানীরা। পান্ডার ত্বকের কোষ থেকে সফলভাবে স্টেম সেল সংগ্রহের মাধ্যমে পান্ডাকে বিলুপ্তির হাত থেকে বাঁচানো সম্ভব হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। একই পদ্ধতি ব্যবহার করে গন্ডার,  জেব্রা ও ইঁদুরের মতো দেখতে তাসমানিয়ান ডেভিলসহ অন্যান্য বিপন্ন প্রজাতির প্রাণী সংরক্ষণেরও সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

১০. মারমোসেট বানরদের ডাকাডাকির খোঁজ

শুধু মানুষই নয়, মারমোসেট বানর প্রজাতির সদস্যরা একে অপরকে নাম ধরে ডাকেন বলে এ বছরের এক গবেষণায় জানা যায়। ক্ষুদ্র প্রজাতির মারমোসেট বানরেরা অন্য বানরকে নাম ধরে ডাকার পাশাপাশি সম্বোধন করতে বিশেষ ধরনের কণ্ঠস্বর ব্যবহার করে।

সূত্র: স্মিথসোনিয়ান ম্যাগাজিন ও এনডিটিভি