চাঁদে হবে রাস্তা, চলবে গাড়ি
১৯৬৯ সালে চাঁদের বুকে প্রথম পা রাখে মানুষ। প্রথম চন্দ্রাভিযানের ৫০ বছরের বেশি সময় পর চাঁদে মানুষের বসতি গড়তে সম্প্রতি বেশ আলোচনা শুরু হয়েছে। আর এ ক্ষেত্রে স্পেসএক্সের মালিক ইলন মাস্ক এবং যুক্তরাষ্ট্র-চীন-ভারতের মতো দেশগুলোর চন্দ্রাভিজান নতুন স্বপ্ন দেখাচ্ছে। মানুষের বসবাসের জন্য চাঁদে শুধু ঘর বানালে হবে না, চলাচলের জন্য রাস্তাও তৈরি করতে হবে। তাই চাঁদের বুকে রাস্তা বানানোর নতুন কৌশল উদ্ভাবনে ব্যস্ত সময় পার করছেন গবেষকেরা। সম্প্রতি চাঁদে থাকা ধুলাবালু বিশাল লেন্সের মাধ্যমে গলিয়ে রাস্তা তৈরির ধারণা প্রকাশ করেছেন একদল গবেষক।
চাঁদে বাতাস নেই, পানি নেই। তাপমাত্রা ২৫০ ডিগ্রি পর্যন্ত ওঠানামা করে। এসব সমস্যার পাশাপাশি চাঁদে মানুষের বসতি স্থাপনের অন্যতম প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে ধুলাবালু। কারণ, ধুলাবালুর কারণে মহাকাশচারীদের বিশেষ পোশাক (স্পেস স্যুট) এবং মাহাকাশযানে থাকা বিভিন্ন যন্ত্রের কার্যকারিতা দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। এই ধুলাবালুর কারণে চাঁদের বুকে চলাফেরা করা বেশ কঠিন। এবার এই ধুলাবালু গলিয়ে কঠিন বস্তু তৈরির কৌশল উদ্ভাবন করেছেন গবেষকেরা। কঠিন বস্তুগুলো দিয়ে সহজে চাঁদের বুকে রাস্তা ও মানুষের জন্য অবতরণ কেন্দ্র তৈরি সম্ভব বলে দাবি করেছেন তাঁরা। জার্মানির বার্লিনের ফেডারেল ইনস্টিটিউট অব ম্যাটেরিয়ালস রিসার্চ অ্যান্ড টেস্টিংয়ের বিজ্ঞানী জেনস গুনস্টার বলেন, ‘আপনি ভাবতে পারেন চাঁদে কেন রাস্তা প্রয়োজন? চাঁদে কোনো বায়ুমণ্ডল নেই, মাধ্যাকর্ষণ শক্তিও দুর্বল। ফলে ধুলাবালু সব জায়গায় ছড়িয়ে থাকে। আপনি যখন চাঁদে বসবাস করবেন তখন কোনো মহাকাশযান সেখানে নামলে সবাই ধুলাবালুতে ঢেকে যাবেন। আমরা চাঁদের এই ধুলাবালু ব্যবহারের চেষ্টা করছি।’
চাঁদের বুকে রাস্তা বানানোর নতুন কৌশলের বিষয়ে জেনস গুনস্টার বলেন, ‘৫০ মিলিমিটার ব্যাসের লেজার রশ্মি ব্যবহার করে চাঁদের ধুলাবালুকে প্রায় ১ হাজার ৬০০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় গলিয়ে ফেলা সম্ভব। গলিত ধুলাবালুর মাধ্যমে তৈরি ত্রিভুজ আকৃতির শক্ত কাঠামো দিয়ে চাঁদে রাস্তা ও অবতরণ কেন্দ্র তৈরি করা যাবে। একটি ত্রিভুজ আকৃতির শক্ত কাঠামো তৈরি করতে প্রায় এক ঘণ্টা সময় লাগে। ১০০ বর্গমিটারের অবতরণ কেন্দ্র তৈরি করতে প্রায় ১০০ দিন লেগে যেতে পারে। ভবিষ্যতে নতুন কোনো পদ্ধতিতে দ্রুত কাঠামো তৈরির সুযোগ পাওয়া যেতে পারে।’
চাঁদে রাস্তা তৈরির সম্ভাব্যতা নিয়ে সায়েন্টিফিক রিপোর্ট জার্নালে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে। গবেষণাপত্রের তথ্যমতে, চাঁদে থাকা ধুলাবালু বিশাল লেন্সের মাধ্যমে গলিয়ে রাস্তা তৈরির জন্য ২.৩৭ বর্গমিটারের একটি লেন্স পৃথিবী থেকে পাঠানো হবে। লেন্সটি একটি পলিমার ফয়েল দিয়ে তৈরি করা হবে, যা কাগজের মতো ভাঁজ করে রাখার পাশাপাশি সহজে বহন করা যাবে। চাঁদের ধুলাবালু থেকে লেন্স নিরাপদ রাখতে ভাইব্রেটর যন্ত্র যুক্তের পরিকল্পনা রয়েছে গবেষকদের।
সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান ও নিউ সায়েন্টিস্ট