হাজার হাজার পেঙ্গুইন ছানা কেন মারা গেল

পশ্চিম অ্যান্টার্কটিকা অঞ্চলে গত বছর হাজার হাজার এম্পেরর পেঙ্গুইনের ছানা মারা গেছেরয়টার্স

এম্পেরর পেঙ্গুইন বিশাল আকার–আকৃতির জন্য বিখ্যাত। পেঙ্গুইনদের সম্রাট বলা হয় এদের। জীবন্ত পেঙ্গুইন প্রজাতির মধ্যে অ্যান্টার্কটিকার স্থানীয় বাসিন্দা এম্পেরর পেঙ্গুইন লম্বা ও ভারী শারীরিক গড়নের হয়ে থাকে। ১০০ সেন্টিমিটার লম্বা আর ২২ থেকে ৪৫ কেজি ওজনের হয়ে থাকে এসব পেঙ্গুইন। এই পেঙ্গুইনের বৈজ্ঞানিক নাম এপ্টেনোডাইটস ফরস্টারি। পানিতে প্রতি ঘণ্টায় ৬-৯ কিলোমিটার গতিতে সাঁতরাতে পারে এম্পেরর পেঙ্গুইন।

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অনেক বছর ধরে হুমকির মুখে আছে পেঙ্গুইনের নানা প্রজাতি। সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে এম্পেরর পেঙ্গুইন। এই পেঙ্গুইনের ছানাদের ওপর দিয়ে গত বছর বেশ বড় একটা ঝড় গেছে। যে কারণে মারা যায় হাজার হাজার এম্পেরর পেঙ্গুইনের ছানা। সম্রাট পেঙ্গুইন ছানার পানিরোধী পালক থাকে না। যে কারণে সমুদ্রের বরফ তাদের জন্য বেশ ঝুঁকিপূর্ণ।

গবেষকেরা জানাচ্ছেন, পশ্চিম অ্যান্টার্কটিকা অঞ্চলে ২০২২ সালে হাজার হাজার এম্পেরর পেঙ্গুইনের ছানা মারা যায়। মূলত সমুদ্রের বরফ কমে যাওয়ার কারণেই তারা মারা যায়। বিজ্ঞানীরা কৃত্রিম উপগ্রহ (স্যাটেলাইট) থেকে পাওয়া তথ্য–উপাত্ত বিশ্লেষণ করে এমনটা জানিয়েছেন।  

গত দুই বছরে অ্যান্টার্কটিকার সামুদ্রিক বরফ রেকর্ড পরিমাণে কমে গেছে। ২০২২ সালের স্যাটেলাইটের ছবি পরীক্ষা করে বরফ কমে যাওয়ার প্রভাব জানা যাচ্ছে। ভূগোলবিদ পিটার ফ্রেটওয়েল অ্যান্টার্কটিকার বরফ গলে যাওয়ার প্রবণতা নিয়ে গবেষণা করছেন। তিনি ও তাঁর সহকর্মীরা বরফ কমে যাওয়ার ক্ষতির প্রভাব পরিমাপ করে এখনো শেষ করতে পারেননি। তাঁরা পশ্চিম অ্যান্টার্কটিকার কাছে বেলিংশউসেন সাগরের বরফ গলে যাওয়ার ঘটনা নিয়ে গবেষণা করেন। এই অঞ্চলেই বেশি এম্পেরর পেঙ্গুইন বাস করে।

এম্পেরর পেঙ্গুইন
রয়টার্স

গবেষকেরা প্রজনন মৌসুমের সময়কার তথ্য বিশ্লেষণ করেছেন। তাঁরা জানিয়েছেন, পাঁচটি কলোনিতে এম্পেরর পেঙ্গুইনেরা বাস করে। রথসচাইল্ড আইল্যান্ড, ভার্ডি ইনলেট, স্মাইলি আইল্যান্ড, ব্রায়ান পেনিনসুলা এবং ফ্রোগনার পয়েন্টে পাঁচটি কলোনি দেখা যায়। বরফ গলে যাওয়ার কারণে চারটি কলোনি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই চার কলোনির সব এম্পেরর পেঙ্গুইন ছানারা মারা গেছে। সেই প্রভাব নিয়ে এক গবেষণাপত্র নেচার জার্নালের কমিউনিকেশনস আর্থ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট বিভাগে প্রকাশিত হয়েছে।
এম্পেরর পেঙ্গুইনরা প্রজনন মৌসুমে স্থিতিশীল সমুদ্রের বরফের ওপর নির্ভর করে। যুক্তরাজ্যের কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্রিটিশ অ্যান্টার্কটিক জরিপবিদ ফ্রেটওয়েল বলেন, এপ্রিল মাস থেকে জানুয়ারি মাস পর্যন্ত তাদের প্রজনন মৌসুম। ডিম ফুটে নবজাতক বের হলে তাদের পানিরোধী পালক থাকে না। জন্মগত পালক পড়ে যাওয়ার পরেই পালক ওঠে। ২০২২ সালে কিছু কলোনির ছানাদের পালক হওয়ার আগে সমুদ্রের বরফ ভেঙে যায়। পানিরোধী পালক ছাড়া পেঙ্গুইনের মতো প্রাণীরা বা পাখিরা বাঁচতে পারে না। এই অঞ্চলে ১০ হাজার জোড়ার বেশি এম্পেরর পেঙ্গুইন তখন সেখানে অবস্থান করছিল। ধারণা করা হচ্ছে, মাত্র ৮৫০টি ছানা বেঁচে গেছে সেই দুর্যোগে। অ্যান্টার্কটিকা জুড়ে ৬২টি এম্পেরর পেঙ্গুইন কলোনি আছে।

ক্যালিফোর্নিয়ার পেটালুমার পয়েন্ট ব্লু কনজারভেশন সায়েন্সের সামুদ্রিক বাস্তুবিদ অ্যানি শ্মিডিট বলেন, পেঙ্গুইনেরা কোনো কারণে প্রজননে ব্যর্থ হলে তা থেকে দ্রুত পুনরুদ্ধার হতে পারে। কয়েকটি কলোনির পেঙ্গুইন খারাপ সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। অ্যান্টার্কটিকার ব্রান্ট আইস শেল্ফে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম এম্পেরর পেঙ্গুইন কলোনির বাস ছিল।

২০১৬ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত তিন বছর এম্পেরর পেঙ্গুইন প্রজননে সমস্যায় পড়ে। ঝড়ের কারণে সেখানে সমুদ্রের বরফ ভেঙে যায়। দুর্যোগের কারণে পেঙ্গুইনদের সেই কলোনি হারিয়ে যায়। বারবার এমন ঘটনায় পেঙ্গুইনেরা সামগ্রিকভাবে হুমকির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। পৃথিবীর উষ্ণতার বাড়ছে। পরিবর্তিত জলবায়ু ও সমুদ্রের বরফ গললে ২১০০ সালের মধ্যে এম্পেরর পেঙ্গুইনের জনসংখ্যা অর্ধেকেরও বেশি কমে যাবে। বৈশ্বিক উষ্ণায়ন কমাতে না পারলে এম্পেরর পেঙ্গুইনদের ভাগ্য পরিবর্তন করা সম্ভব হবে না।
সূত্র: সায়েন্স নিউজ