চাঁদের মালিক কে

চাঁদ নিয়ে বিভিন্ন দেশের আগ্রহ বাড়ছেরয়টার্স

চাঁদের মালিক কে? প্রশ্নের উত্তরে দুটি সর্বজনীন উত্তর আছে। চাঁদে এক বুড়ি আছেন, যিনি চরকায় সুতা কাটেন। তিনি যেহেতু চাঁদে থাকেন, তাই চাঁদের মালিক চাঁদের বুড়ি। আবার অনেক কবিতায় চাঁদের উপস্থিতি অনেক বেশি থাকে বলে কবিরাই চাঁদের মালিক বলে দাবি করেন। বাস্তবে চাঁদের মালিকানা নিয়ে আছে অনেক বাতচিৎ। চলতি সপ্তাহে চাঁদের বুকে চীন তার লাল পতাকা উড়িয়েছে। চাঁদ থেকে নমুনা আনার পরীক্ষায় পাস করেছে চীন। এক বছর ধরে চাঁদ নিয়ে ভারত ও জাপানেরও অভিযান দেখা যায়। এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের ইনটুইটিভ মেশিনস প্রথম বেসরকারি কোম্পানি হিসেবে চাঁদে একটি ল্যান্ডার স্থাপন করে। মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (নাসা) চাঁদে আর্টেমিস মহাকাশচারীদের মাধ্যমে ২০২৬ সালে অবতরণ করতে চায়। চীন বলেছে, ২০৩০ সালের মধ্যে চাঁদে মানুষ পাঠাবে তারা। শুধু তা–ই নয়, চাঁদে স্থায়ী ঘাঁটি তৈরি করার পরিকল্পনা রয়েছে চীনের।

ভাস্কো দা গামা বা ক্রিস্টোফার কলম্বাসের আমলে অভিযাত্রীরা যে দ্বীপে পা রাখতেন, তাকেই উপনিবেশ হিসেবে ঘোষণা করতেন। চাঁদের ক্ষেত্রে এমনটা করা যায় না। ১৯৫৯ সালে সোভিয়েত খেয়াযান লুনা-২ প্রথম মানব তৈরি যান হিসেবে চাঁদের বুকে নামে। লুনা-২ অবশ্য নামার সময় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। লুনা-৯ ছিল প্রথম সার্থক যান, যা চাঁদের বুকে অবতরণ করে। চাঁদে প্রথম যুক্তরাষ্ট্রের নভোচারীরা পা রাখেন ১৯৬৯ সালে।

চাঁদের মালিক কোন দেশ, তা নির্ধারণের আগেই ১৯৬৭ সালে জাতিসংঘ একটি চুক্তি তৈরি করে। সেই চুক্তি অনুসারে কেউ চাঁদের মালিক নয়। যুক্তরাষ্ট্রের ক্যানসাস বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী জাস্টিন হলকম বলেন, চাঁদ নিয়ে সবার আগ্রহ বাড়ছে। ‘আউটার স্পেস ট্রিটি’ নামের সেই চুক্তিতে স্বাক্ষরকারীরা মানবজাতির সুবিধার জন্য সব জাতি ও রাষ্ট্রের স্বার্থে চাঁদ নিয়ে গবেষণায় একমত হন। চুক্তিতে শান্তিপূর্ণ ও সহযোগিতামূলক বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল। আসলে তখন স্নায়ুযুদ্ধ চলছিল দুই পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে। মহাকাশ যেন সামরিক যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত না হয়, সে জন্য এ চুক্তি করা হয়। চুক্তির মূল উদ্দেশ্য ছিল কোনো পারমাণবিক অস্ত্র মহাকাশে পাঠানো যাবে না। এরপর পৃথিবী সূর্যকে ৫৭ বার প্রদক্ষিণ করেছে, বদলে গেছে পৃথিবীর রাজনীতি। এখন চাঁদের বুকে নিজেদের পতাকা স্থাপনের প্রচেষ্টা দেখা যাচ্ছে শক্তিশালী দেশগুলোর মধ্যেই।

লন্ডন ইনস্টিটিউট অব স্পেস পলিসি অ্যান্ড ল–এর বিশ্লেষক সাইদ মোস্তেশার বলেন, যেকোনো সংস্থাকে মহাকাশে যাওয়ার জন্য রাষ্ট্রের অনুমোদন নিতে হয়। বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো আগ্রহী হলেও আন্তর্জাতিক চুক্তির কারণে বিভিন্ন রাষ্ট্র এখানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। দূর থেকে চাঁদের ভূখণ্ড অনুর্বর দেখায়। আসলে চাঁদে নানা ধরনের খনিজ রয়েছে। বিভিন্ন মূল্যবান ধাতুসহ লোহা ও টাইটানিয়ামের মতো ধাতু আছে চাঁদে। বড় বড় রাষ্ট্র তা সংগ্রহ করতে চায়।

১৯৭৯ সালে আরেকটি একটি আন্তর্জাতিক চুক্তি ঘোষণা করা হয়। সেই চুক্তি অনুসারে কোনো রাষ্ট্র বা সংস্থা চাঁদে সম্পদের মালিকানা দাবি করতে পারবে না। ১৭টি দেশ সেই চুক্তিতে সই করেছে। যুক্তরাষ্ট্র এতে সই করেনি। যুক্তরাষ্ট্র ২০১৫ সালে আইনের মাধ্যমে তার নাগরিক ও শিল্পকে মহাকাশে ধাতু নিষ্কাশন, ব্যবহার ও বিক্রি করার অনুমতি দিয়েছে। সেই আইন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে চাপে ফেলেছে। যুক্তরাষ্ট্র এখন চাঁদে নিজের অবস্থান শক্ত করে নতুন নিয়ম চালুর চেষ্টা করছে। আর্টেমিস চুক্তির মাধ্যমে চাঁদে সম্পদ আহরণ ও ব্যবহার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে। ৪০টির বেশি দেশের সঙ্গে কাজ করছে যুক্তরাষ্ট্র। অবশ্য সে তালিকায় চীন নেই। লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকসের মহাকাশ নীতি ও আইন–গবেষক জিল স্টুয়ার্ট বলেন, ‘চাঁদের সঙ্গে অ্যান্টার্কটিকার মিল আছে। চাঁদে এমন কোনো গবেষণার ঘাঁটি স্থাপন করা, যেমনটা আমরা অ্যান্টার্কটিকায় দেখতে পাই। চাঁদের জমিতে যেহেতু কারও মালিকানা নেই, তাই সেখানে যে আগে ঘাঁটি তৈরি করবে, তার সুবিধা থাকবে অনেক।’

সূত্র: বিবিসি