ব্যাকটেরিয়া খাবে মিথেন গ্যাস, কমবে বৈশ্বিক তাপমাত্রা
বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের নানা সংকট দেখা যাচ্ছে। তাপমাত্রার পরিবর্তন, সমুদ্রের উচ্চতা বৃদ্ধি, বায়ুদূষণসহ নানা সংকটে দিশাহারা পৃথিবী। বৈশ্বিক তাপমাত্রা কীভাবে কমানো যায়, তা নিয়ে চলছে রাতদিন আলোচনা। সেই আলোচনায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে বিশেষ ধরনের ব্যাকটেরিয়া। এক গবেষণায় দাবি করা হয়েছে, বিশেষ ধরনের এই ব্যাকটেরিয়া মিথেন গ্যাসকে খাবার হিসেবে গ্রহণ করে। আর তাই এই ব্যাকটেরিয়াকে বৈশ্বিক তাপমাত্রা কমানোর হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করার চেষ্টা শুরু হয়েছে।
প্রাকৃতিক গ্যাসের মধ্যে অন্যতম মিথেন। রাজধানী ঢাকার বায়ুমণ্ডলেও বিপজ্জনক মিথেন গ্যাসের একটি স্তর তৈরি হয়েছে। বিশ্বের ৬১টি শহরের ওপর করা গবেষণা অনুযায়ী সবচেয়ে বেশি মিথেন গ্যাস নির্গত হয় এমন শহরের শীর্ষে রয়েছে পাকিস্তানের করাচি; এরপরই ঢাকার অবস্থান। আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান সাময়িকী এনভায়রনমেন্টাল রিসার্চ লেটারসে এমন তথ্য প্রকাশ করা হয়। সাধারণভাবে বিশ্বে মিথেন গ্যাসের প্রধান উৎস হিসেবে কৃষিকাজ ও গ্রামীণ জলাভূমিকে দায়ী করা হয়। এখন শিল্প খাত, কৃষি কিংবা বর্জ্য ও বর্জ্যমিশ্রিত পানির মাধ্যমেও মিথেন গ্যাস তৈরি হয়। মিথেন গ্যাস গ্রাম ও শহরের বাতাসকে বিপজ্জনক করে তুলছে। একই সঙ্গে তা বিশ্বের তাপমাত্রাও বাড়াচ্ছে।
ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটি লং বিচের গবেষকেরা ব্যাকটেরিয়া নিয়ে গবেষণা করছেন। তাঁরা মিথেনোট্রপস নামের ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে মিথেন গ্যাস কমানোর কাজ করছেন। গবেষক দলের প্রধান ম্যারি ই লিডস্ট্রম জানান,এই ব্যাকটেরিয়া প্রাকৃতিকভাবে মিথেন গ্যাসকে কার্বন ডাই–অক্সাইড ও বায়োগ্যাসে পরিণত করে। মিথেন গ্যাস খাওয়ার মাধ্যমে বাতাস পরিশোধনের পাশাপাশি নিজের কোষকে টেকসই প্রোটিনে রূপান্তর করছে ব্যাকটেরিয়াটি। ‘মিশাইলোটুভিমাইক্রোবিয়াম ব্যারিয়াটেন্স ফাইভজিবিওয়ান’ নামের ব্যাকটেরিয়াটি বাতাসে সামান্য পরিমাণ মিথেন গ্যাস থাকলেও তা শোষণ করতে পারে। বৈশ্বিকভাবে এই ব্যাকটেরিয়া উৎপাদনের মাধ্যমে তাপমাত্রা কমানোর উপায় খুঁজছে গবেষক দল।
লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ইউয়ান নিসবেট জানান, যেসব ব্যাকটেরিয়া মিথেন গ্যাস খায়, তাদের সাধারণত গবাদি পশু রাখার স্থানে পাওয়া যায়। এসব ব্যাকটেরিয়া মিথেন গ্যাসের পরিমাণ কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। মিথেনোট্রপস নামের ব্যাকটেরিয়া উচ্চ মাত্রায় মিথেন গ্যাস গ্রহণ করতে পারে। অন্য সব সাধারণ ব্যাকটেরিয়ার চেয়ে এই ব্যাকটেরিয়া পাঁচ গুণ বেশি মিথেন গ্যাস খেতে পারে। এই ব্যাকটেরিয়া অক্সিডাইজ প্রক্রিয়ায় মিথেন গ্যাস থেকে কার্বন ডাই–অক্সাইড উৎপাদন করে। এই কার্বন ডাই–অক্সাইড সংগ্রহ করে গ্রিনহাউস বাগানে টমেটো চাষ করা যাবে। তবে এ ক্ষেত্রে কারিগরি কিছু সমস্যা রয়েছে। আমাদের এখন মিথেন গ্যাস শোধনাগারগুলো ২০ গুণ বড় করতে হবে। এ জন্য প্রয়োজন বিনিয়োগ। আগামী তিন থেকে চার বছরে আমরা পরীক্ষামূলকভাবে বড় আকারে কাজ শুরু করব, কিন্তু বড় আকারে কাজ করতে হলে বিপুল বিনিয়োগ প্রয়োজন।
গবেষকেরা জানাচ্ছেন, কৃষি খাত থেকে সবচেয়ে বেশি মিথেন গ্যাস নির্গত হচ্ছে। কার্বন ডাই–অক্সাইডের চেয়ে মিথেন গ্যাস ৮৫ ভাগ বেশি ক্ষমতার। গত ১৫ বছরের বিভিন্ন তথ্য বলছে, বায়ুমণ্ডলে মিথেন গ্যাসের পরিমাণ বেড়েছে অনেক। বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে ৩০ ভাগ দায়ী এই মিথেন গ্যাস।
পেনসিলভানিয়া স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ম্যারি অ্যান বার্নস জানান, মিথেন গ্যাস খাওয়া এই ব্যাকটেরিয়া উৎপাদনে উচ্চ শক্তির রিঅ্যাক্টর তৈরি করতে হবে। ব্যাকটেরিয়া উৎপাদনের মাধ্যমে মিথেন গ্যাস কমানো গেলে জলবায়ু পরিবর্তনে নতুন গবেষণার সুযোগ তৈরি হবে। তবে গবেষক দল কিছু সতর্কতার কথাও প্রকাশ করেছেন। এসব কারণে পরিবেশে ব্যাকটেরিয়ার কার্যক্রম বেড়ে নাইট্রাস অক্সাইডের নির্গমন বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।
সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান