অর্ধেক বরফ, অর্ধেক আগুন এমন পদার্থ খুঁজে পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা

বিজ্ঞানীরা নতুন যৌগ আবিষ্কার করেছেনছবি: পপুলার মেকানিকস

আমরা পদার্থের তিন অবস্থার কথা জানি। কঠিন, তরল ও বায়বীয় অবস্থার কথা প্রাথমিক শ্রেণিতে পড়েছি। বিজ্ঞানীরা সেই ধারণার বাইরে গিয়ে নতুন ধরনের পদার্থ খুঁজে পেয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব অ্যানার্জির ব্রুকহ্যাভেন ন্যাশনাল ল্যাবরেটরির বিজ্ঞানীরা অদ্ভুত এক পদার্থ আবিষ্কারের কথা জানিয়েছেন। অর্ধেক বরফ, অর্ধেক আগুন নামের এই পদার্থের একটি নতুন পর্যায় আবিষ্কার করেছেন তাঁরা।

এই পদার্থে বাহ্যিক চৌম্বক ক্ষেত্রের অধীনে ইলেকট্রনের সুশৃঙ্খল ঠান্ডা ও বিশৃঙ্খল গরম অবস্থা দেখা যায়। এই আবিষ্কারটি পর্যায় পরিবর্তনকে বিট হিসেবে ব্যবহার করে কোয়ান্টাম তথ্য সঞ্চয়কে উন্নত করতে পারে।

যেমনটা বলা হচ্ছে এটি অর্ধেক বরফ, অর্ধেক আগুন আসলে পদার্থটি তেমন নয়। এই পদার্থের কণার অত্যন্ত সুশৃঙ্খল অবস্থাকে ঠান্ডা বলা হচ্ছে। ইলেকট্রন স্পিনকে বর্ণনা করতে সুশৃঙ্খল অবস্থাকে ঠান্ডা ও বিশৃঙ্খল অবস্থাকে গরম হিসেবে বলছেন বিজ্ঞানীরা। পদার্থের এই পর্যায় আগে কখনো দেখা যায়নি। নতুন এই অবস্থান কোয়ান্টাম তথ্য সঞ্চয়ের প্রযুক্তির জন্য বিশেষভাবে সুযোগ তৈরি করতে পারে। ফিজিক্যাল রিভিউ লেটার্স জার্নালে এই আবিষ্কারের বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।

এই ল্যাবে তৈরি হয়েছে নতুন যৌগ
ছবি: পপুলার মেকানিকস

গবেষণার সহ-লেখক ওয়েইগুও ইয়িন বলেন, বাইরের ভৌত বৈশিষ্ট্যসহ নতুন অবস্থা খুঁজে বের করা ও সেই অবস্থার মধ্যে রূপান্তর বোঝার জন্য কাজ করছি আমরা। সেই অবস্থা নিয়ন্ত্রণ করা পদার্থবিদ্যা ও কণাবিজ্ঞানের ক্ষেত্রের কেন্দ্রীয় সমস্যার একটি। সেই সমস্যা সমাধান করার মাধ্যমে কোয়ান্টাম কম্পিউটিং ও স্পিনট্রনিকসের মতো প্রযুক্তিতে বড় অগ্রগতি ঘটবে বলে আশা করছি।

এর আগে বিজ্ঞানী উইন ও তার সহকর্মী অ্যালেক্সি স্বেভলিকের এই পদার্থের ছদ্ম-বিপরীত পর্যায় আবিষ্কার করেন। তখন অর্ধেক আগুন ও অর্ধেক বরফ পর্যায় বের করেন তারা। ২০১৫ সালে সেই অবস্থা আবিষ্কৃত হয়েছিল। নতুন একটি চৌম্বক যৌগ অধ্যয়ন করে এই অবস্থার কথা জানা গেছে। সেই যৌগে স্ট্রনটিয়াম, তামা, ইরিডিয়াম এবং অক্সিজেন রয়েছে। অর্ধেক আগুন ও অর্ধেক বরফ পর্যায়ে যৌগের পারমাণবিক ল্যাটিসে তামা যে অংশ সেখানে ইলেকট্রনের স্পিন গরম ও যেখানে ইরিডিয়াম অংশে ঠান্ডা স্পিন থাকে। বিজ্ঞানী স্বেভলিক বলেন, ‘আমাদের ব্যাপক গবেষণা সত্ত্বেও জানতাম না এই অবস্থা কীভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে। সেই অবস্থা জানতে প্রাথমিক আবিষ্কারের বিপরীত যমজ নিয়ে কাজ করা হয়। যেখানে গরম ও ঠান্ডা স্পিন অবস্থান পরিবর্তন করে।’ বিজ্ঞানীদের ভাষ্যে, এই পরিবর্তন একটি অতিসংক্ষিপ্ত তাপমাত্রা পরিসীমার মধ্যে ঘটে। এই আবিষ্কারের কারণে রেফ্রিজারেশন প্রযুক্তি থেকে শুরু করে কোয়ান্টাম তথ্য সঞ্চয় প্রযুক্তির মতো কাজে পরিবর্তন আসতে পারে।

বিজ্ঞানীরা এখন কোয়ান্টাম স্পিন ও অতিরিক্ত ল্যাটিস, চার্জ এবং অরবিটাল স্বাধীনতার মাত্রাসহ সিস্টেমে আগুন-বরফ ঘটনাটি অন্বেষণ করতে চেষ্টা করছেন।

সূত্র: পপুলার মেকানিকস