সমুদ্রের তাপমাত্রা বাড়ছে ৪০০ গুণ হারে
নানা কারণে বিশ্বের তাপমাত্রা বাড়ছে। একই সঙ্গে সমুদ্রের তাপমাত্রাও বাড়ছে। ভবিষ্যতে এই প্রবণতায় সমুদ্রের তাপমাত্রা বেশ বাড়বে বলে আশঙ্কা করছেন বিজ্ঞানীরা। যদিও বিজ্ঞানীদের ধারণার চেয়ে সমুদ্রের তাপমাত্রা দ্রুতগতিতে বাড়ছে বলে এক গবেষণায় জানা গেছে। চল্লিশ বছর ধরে বিভিন্ন সমুদ্রের তাপমাত্রা বেশি গতিতে বাড়ছে বলে যুক্তরাজ্যের রিডিং বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীদের একটি নতুন গবেষণায় বলা হয়েছে।
সমুদ্রের উষ্ণতার প্রমাণ নানাভাবে আমরা দেখছি। সমুদ্রের উষ্ণতার নিয়ে এক গবেষণায় দেখা যায়, ১৯৮০–এর দশকে যে হারের সমুদ্র উষ্ণ হয়েছে, তার থেকে এখন প্রায় ৪০০ গুণ হারে বাড়ছে। এই প্রবণতা বেশ উদ্বেগজনক বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। ১৯৮৫ থেকে স্যাটেলাইট পর্যবেক্ষণ ও জলবায়ু পরিবর্তনের বিভিন্ন তথ্য ও পরিসংখ্যানগত মডেল পর্যালোচনা করে বিজ্ঞানীরা এই মাত্রা খুঁজে বের করেছেন। আশির দশকের শেষ থেকে প্রতি দশকে সমুদ্র প্রায় শূন্য দশমিক শূন্য ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস হারে উষ্ণ হচ্ছিল। এখন প্রতি দশকে এই হার প্রায় শূন্য দশমিক ২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গবেষণার ফলাফল এনভায়রনমেন্টাল রিসার্চ লেটারস জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।
রিডিং বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী ক্রিস মার্চেন্ট বলেন, এখন সমুদ্র অনেক দ্রুত উষ্ণ হচ্ছে। উষ্ণায়নের গতি বেড়েছে। এই উষ্ণায়নের গতি কমানোর জন্য বিশ্বব্যাপী কার্বন নির্গমন কমাতে হবে। বিশ্বের বিভিন্ন সমুদ্রের সামগ্রিক উষ্ণায়নকে বিজ্ঞানীরা বিশ্বব্যাপী গড় সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা নামের একটি সূচকে প্রকাশ করেন। পৃথিবীর শক্তি ভারসাম্যহীনতার কারণে সমুদ্রের তাপমাত্রা বাড়ছে বলে মনে করেন তাঁরা। কার্বন ডাই–অক্সাইড ও অন্যান্য গ্রিনহাউস গ্যাসের ঘনত্ব বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পৃথিবী বেশি শক্তি শোষণ করছে। এতে বিভিন্ন সাগর ও মহাসাগর উষ্ণ হচ্ছে।
গবেষকেরা লক্ষ্য করেছেন, উষ্ণতা বৃদ্ধির হার রৈখিক নয়। গত ৪০ বছরে যে বৃদ্ধি হয়েছে, তা আগামী ২০ বছরের কম সময়ের মধ্যে আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে দেখা যায়, ২০২৩ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে সমুদ্র টানা ৪৫০ দিন ধরে রেকর্ড উচ্চ তাপমাত্রা ধারণ করছে।
যদিও এই তাপপ্রবাহের কারণ ছিল এল নিনো নামের একটি ঘটনা, যা প্রশান্ত মহাসাগরের উষ্ণ পরিস্থিতির সঙ্গে যুক্ত। রেকর্ডমাত্রার উষ্ণতার জন্য ৪৪ শতাংশ দায়ী হচ্ছে সমুদ্রের তাপমাত্রা ক্রমাগত বৃদ্ধি। বিশ্ব উষ্ণায়নের হার আগামী দশকের দ্রুত পরিবর্তনের কোনো সম্ভাবনা নেই বলে মনে করেন বিজ্ঞানীরা। কার্বন নির্গমনের কমানোর বিকল্প নেই বলে মনে করেন তাঁরা।
সূত্র: পপুলার মেকানিকস