২০২৪ সালে গণিতে আলোচিত ৭ আবিষ্কার
গণিতবিদেরা ২০২৪ সালে অত্যন্ত ব্যস্ত ছিলেন বলা যায়। ২০২৪ সালেই এখন পর্যন্ত জানা সবচেয়ে বড় মৌলিক সংখ্যা আবিষ্কার করেছেন গণিতবিদেরা। পাইয়ের জন্য নতুন সূত্র, জোহান সেবাস্টিয়ান বাখের সংগীতের রহস্যময় নিদর্শন থেকে শুরু করে একটি নতুন ধরনের গাণিতিক কাঠামো তৈরির মতো চমক এ বছরেই তুলে ধরেছেন গণিতবিদেরা। এসব আবিষ্কারের মধ্যে কিছু কাজ ব্যবহারিক আবার কিছু কাজ তাত্ত্বিক।
নতুন আকৃতির কাঠামো
গণিতবিদেরা দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন আকৃতির ফাটল বা ফাঁক ছাড়াই পৃষ্ঠকে আচ্ছাদন করতে পারে, এমন গাণিতিক কাঠামোর সন্ধান করছিলেন। সাধারণত বিভিন্ন কোণ ও সমতল দিক ব্যবহার করে এমন কাঠামো তৈরি করা হয়। এ বছর একটি নতুন শ্রেণির গাণিতিক কাঠামো আবিষ্কার করেছেন গণিতবিদেরা। এদের সফট সেল বলা হচ্ছে, এমন কাঠামোর আকারে একটি ন্যূনতম সংখ্যার ধারালো কোণ থাকে, আর কোনো ছেদ বা ফাটল ছাড়াই বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করে। যদিও প্রকৃতিতে এমন কাঠামো আগে থেকেই দেখা যাচ্ছে। বিভিন্ন নরম মলাক্সের নটিলাস সেল, লোহিত রক্তকণিকাসহ বিভিন্ন প্রকৃতির উপাদানে এই কাঠামো দেখা যায়।
বড় মৌলিক সংখ্যার খোঁজ
মৌলিক সংখ্যা বলতে সেই সব সংখ্যাকে বোঝায় যারা ১ ও নিজের মান দ্বারা বিভাজ্য। দীর্ঘদিন ধরেই গণিতবিদেরা বিভিন্ন মৌলিক সংখ্যা আবিষ্কারের জন্য কাজ করেছেন। ছয় বছর আগে সর্বশেষ নতুন মৌলিক সংখ্যা আবিষ্কৃত হওয়ার পর এ বছর ৪১,০২৪,৩২০ সংখ্যার বৃহত্তম মৌলিক সংখ্যা আবিষ্কার করা হয়েছে।
পাইয়ের মান বের করার নতুন কৌশল
সাধারণভাবে বৃত্তের পরিধি ও ব্যাসের অনুপাত থেকে পাইয়ের মান বের করা হয়। প্রাচীন ব্যাবিলন সভ্যতার চার হাজার বছর ধরে পাইয়ের মান গণিতবিদেরা জানেন। এই অমূলদ সংখ্যার গণনা করা সব সময়ই একটি চ্যালেঞ্জ। সম্প্রতি পদার্থবিদেরা পাই গণনা করার জন্য সম্পূর্ণ নতুন পদ্ধতি জানার জন্য স্ট্রিং তত্ত্ব ব্যবহার করেছেন। অ্যানিমেটেড ডায়াগ্রামের মাধ্যমে দেখা যায়, একটি সমবাহু ত্রিভুজ আকৃতির তারের ট্র্যাক বরাবর বৃত্ত চলমান থাকলে ত্রিভুজের বাহু বৃত্তের ব্যাসার্ধের সঙ্গে মিলে যায়। বৃত্তটি যখন ট্র্যাকের চারপাশে তার ভ্রমণ সম্পন্ন করে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বৃত্তের সমস্ত অবস্থানের মধ্যে সাধারণ ওভারল্যাপের ক্ষেত্রটিতে একটি রিউলক্স ত্রিভুজ গঠন করে। রিউলক্স ত্রিভুজ বলতে একটু বাঁকানো বাহুর ত্রিভুজকে বোঝানো হয়।
একাধিক মাত্রায় একটি চাকার অবস্থান
৪০ বছর ধরে গণিতবিদেরা যেকোনো মাত্রায় ন্যূনতম আয়তনের ধ্রুবক-প্রস্থের আকার খুঁজে পেতে কাজ করছিলেন। সম্প্রতি এই প্রশ্নের উত্তর মিলেছে। এ জন্য গণিতবিদেরা একটি নতুন ধরনের বহুমাত্রিক চাকা কল্পনা করেছেন। বৃত্ত বা গোলকের মতো প্রচলিত ঘূর্ণমান আকারের ভগ্নাংশ মাত্রায় নতুন এই চাকা তৈরি করা যায়। গণিতবিদেরা এমনভাবে চাকাটি তৈরি করেছেন, যা দুটি পৃষ্ঠের মধ্যে চলার সময় মসৃণভাবে ঘুরতে পারে। অর্থাৎ চার, পাঁচ বা যেকোনো উচ্চসংখ্যক স্থানিক মাত্রার মধ্যেও সহজেই ঘুরতে পারে চাকাটি।
অসম্ভব মাত্রাকে গণনা
সবকিছু তো গণনা করা যায় না। যতই চেষ্টা করা হোক না কেন, সবকিছু কি আসলেই গণনা করা সম্ভব? একটি নির্দিষ্ট অগণনাযোগ্য অভিব্যক্তিকে বিজি বিভার ফাংশন বলা হয়। বিভার একধরনের ধারালো দাঁতওয়ালা লোমশ উভচর প্রাণী। এসব প্রাণীর ব্যস্ততাকে রূপক অর্থে গণিতে বিজি বিভার ফাংশন নামকরণ করা হয়েছে। এই ফাংশনের মান কখনোই n সংখ্যক পরিমাণের জন্য জানা যাবে না। বিজি বিভার চ্যালেঞ্জ নামে একটি আন্তর্জাতিক সহযোগিতামূলক কর্মসূচির মাধ্যমে সম্প্রতি এই ফাংশনের পঞ্চম মান নির্ধারণে সফলতা পেয়েছেন গণিতবিদেরা। তাঁরা প্রথম দিকে এমন আবিষ্কারকে বেশ অসম্ভব ভেবেছিলেন।
জোহান সেবাস্টিয়ান বাখের লুকানো বার্তার খোঁজ
একদল পদার্থবিদ আঠারো শতকের জনপ্রিয় সুরকার জোহান সেবাস্টিয়ান বাখের লেখা মিউজিক্যাল স্কোরকে গাণিতিক নেটওয়ার্কে রূপান্তরে সাফল্য পেয়েছেন এ বছর। তাঁরা বিশ্লেষণ করে বাখের রচনার মধ্যে বিভিন্ন শৈলী বের করেছেন। বিভিন্ন সংগীতের নিদর্শন খুঁজে বের করার জন্য ইনফরমেশন থিওরি তত্ত্ব ব্যবহার করেন বিজ্ঞানীরা। বাখ কীভাবে সংগীত, গাণিতিক ও মানসিক তথ্য কাজে প্রকাশ করেন, তা জানার পথ বের করেছেন তাঁরা। যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ সুমন কুলকার্কিনি এই গবেষণার নেতৃত্ব দেন।
আইনস্টাইনের হারানো টালির খোঁজে
গণিতবিদদের ধারণা, কোনো পুনরাবৃত্তির প্যাটার্ন তৈরি না করে একটি একক আকৃতির পৃষ্ঠকে টালি বা টাইল দিয়ে আবৃত করা যায়। এমন কাঠামোকে আইনস্টাইন টাইল বা টালি বলা হয়। অনেকেই মনে করতেন, এ ধরনের আকৃতি হয়তো থাকতে পারে। গবেষকেরা অবশেষে এ ধরনের একটি টালি আবিষ্কার করেছেন। মাথার আকৃতির এই টালি দিয়ে পৃষ্ঠকে আচ্ছাদন করা যাবে, যেখানে কোনো প্যাটার্নের পুনরাবৃত্তি ঘটবে না। টালিটি ২০২৩ সালে তৈরির ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল।
সূত্র: সায়েন্টিফিক আমেরিকান