প্রযুক্তিবিশ্বে আলোচিত ৫ প্রতিযোগিতার গল্প
কম্পিউটার আবিষ্কারের পর থেকেই বিভিন্ন প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে নানা বিষয়ে প্রতিযোগিতা চলছে। বিশেষ করে নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও বাজার দখল নিয়ে প্রযুক্তিবিশ্বে একে অপরের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘটনা চলে আসছে বহু বছর ধরে। এমনই কিছু আলোচিত প্রতিযোগিতার তথ্য জেনে নেওয়া যাক।
অ্যাপল বনাম মাইক্রোসফট
প্রযুক্তিবিশ্বে সর্বকালের সেরা প্রতিযোগী হিসেবে মাইক্রোসফট ও অ্যাপলের নাম সবার আগে বলা হয়ে থাকে। এই প্রতিযোগিতা ১৯৮০ দশকের মাঝামাঝি সময়ে শুরু হয়েছে। প্রথম দিকে শুধু দুই প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা স্টিভ জবস ও বিল গেটসের মধ্যে প্রতিযোগিতা সীমাবদ্ধ থাকলেও বর্তমানে তা দুটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। মাইক্রোসফটের কম্পিউটার বনাম অ্যাপলের ম্যাক, উইন্ডোজ বনাম ম্যাকওএস, আইফোন বনাম উইন্ডোজ মুঠোফোনের মতো বিভিন্ন বিভাগে এ প্রতিযোগিতা চলছে। দুটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে তীব্র প্রতিযোগিতা থাকলেও শুরুর গল্পটা ছিল অন্য রকম। ১৯৮০ দশকের শুরুর দিকে মাইক্রোসফট অ্যাপল ২ কম্পিউটারের জন্য সফটওয়্যার তৈরির কাজ পায়। তবে মাইক্রোসফট গ্রাফিক্যাল ইন্টারফেস ব্যবহার করে অপারেটিং সিস্টেম চালুর পর সেটি নকলের অভিযোগ করেন জবস। ফলে জবসের সঙ্গে গেটসের সম্পর্ক নষ্ট হয়।
এএমডি বনাম ইন্টেল
চিপশিল্পের বাজারে এগিয়ে থাকতে কয়েক দশক ধরেই প্রতিযোগিতা করছে ইন্টেল ও এএমডি। ১৯৬০–এর দশকের শেষের দিকে দুটি প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত হলেও ১৯৯০ দশকের পরে দুই প্রতিষ্ঠানের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা দেখা যায়। ইন্টেল ১৯৭৬ সালে এএমডির সঙ্গে চুক্তি করে। শুধু তা–ই নয়, ১৯৮২ সালে নিজেদের মধ্যে প্রযুক্তি বিনিময়ের চুক্তিও করেছিল প্রতিষ্ঠান দুটি। কিন্তু সে সময় প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠান আইবিএম শুধু ইন্টেল থেকে চিপ নেওয়ার পক্ষে ছিল না। ফলে তারা মাইক্রোপ্রসেসরের জন্য এএমডির সঙ্গে চুক্তি করে। ইন্টেল সে সময় এএমডির কাছে মাইক্রোপ্রসেসরের লাইসেন্স দিতে অস্বীকার করলে প্রতিষ্ঠান দুটির মধ্যে বৈরী সম্পর্ক তৈরি হয়। ফলে দুটি প্রতিষ্ঠানই একে অপরের বিরুদ্ধে মামলা করে।
অ্যাপল বনাম স্যামসাং
দামি ব্যান্ডের স্মার্টফোন ব্যবহার করেন অনেকেই। আর এ ক্ষেত্রে এগিয়ে রয়েছে স্যামসাংয়ের তৈরি গ্যালাক্সি ও অ্যাপলের তৈরি আইফোন। তবে মজার বিষয় হচ্ছে, অ্যাপল বা আইফোন ব্যবহারকারীরা কেউই স্যামসাংকে প্রতিযোগী মনে করেন না। যদিও আদালতের তথ্য বলছে অন্য কথা। গত দুই দশকে একে অপরের বিরুদ্ধে ৪৮টি মেধাস্বত্ব ভঙ্গের মামলা করেছে প্রতিষ্ঠান দুটি। ২০১৮ সালে অ্যাপলকে ৫৩ কোটি ৯০ লাখ ডলার দিতেও বাধ্য হয় স্যামসাং।
নিনটেন্ডো বনাম সেগা
এখন তো ভিডিও গেম মানেই ল্যাপটপ বা গেমিং কনসোল। নিনটেন্ডো ১৮৮৯ সালে একটি প্লেয়িং কার্ড কোম্পানি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। ঠিকই পড়েছেন! ১৮৮৯ মানে ১০০ বছরের বেশি আগে। আর হাওয়াই–ভিত্তিক স্লট মেশিন ফার্ম হিসেবে ১৯৪০ দশকে যাত্রা শুরু করে সেগা। ভিডিও গেম ইতিহাসের শুরুর দিকে আর্কেড মেশিন, হ্যান্ডহেল্ড গেমিং ডিভাইস ও কনসোলের জগতে প্রতিযোগিতা দেখা যায় দুটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে। সেগার তৈরি বিভিন্ন আর্কেড গেম ১৯৭৮ থেকে ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত ভিডিও গেমের দুনিয়ায় আলোড়ন তৈরি করে। অপর দিকে ১৯৮০ দশকের শেষ দিকে ভিডিও গেমের বাজারের ৯০ ভাগ দখল করে নেয় নিনটেন্ডো।
নেটফ্লিক্স বনাম অ্যামাজনের প্রাইম ভিডিও
অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ওটিটির যুদ্ধে কয়েক বছর ধরেই নেটফ্লিক্স ও অ্যামাজনের প্রাইম ভিডিওর মধ্যে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা দেখা যাচ্ছে। ২০২৩ সালের হিসাবে সারা বিশ্বে নেটফ্লিক্স ব্যবহারকারী ২৬ কোটির বেশি। অপর দিকে অ্যামাজন প্রাইম ভিডিওর রয়েছে ১১ কোটি ব্যবহারকারী। ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়াতে দুটি প্রতিষ্ঠানই একে অপরের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করছে। নেটফ্লিক্স যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ায় ভীষণ জনপ্রিয়। অন্যদিকে অ্যামাজনের প্রাইম ভিডিও ভারত, জাপান ও জার্মানিতে জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
সূত্র: ভিসি বে ও টেকস্পট