কম্ব জেলি না স্পঞ্জ, পৃথিবীর প্রথম প্রাণী কোনটি

বার্গেস শেল শিলার নমুনা থেকে পৃথিবীর শুরুতে প্রাণীরা দেখতে কেমন ছিল, তা জানা যায়ছবি: লাইভসায়েন্স

পৃথিবীতে লাখ লাখ প্রজাতির প্রাণী বাস করে। ফলে প্রায় আণুবীক্ষণিক প্রাণী টার্ডিগ্রেড থেকে শুরু করে ২৫ মিটার দৈর্ঘ্যের নীল তিমি দেখা যায় পৃথিবীতে। তবে পৃথিবীর প্রথম প্রাণী কোনটি, তা নিয়ে সঠিক তথ্য বিজ্ঞানীদের কাছে নেই। সম্প্রতি জীবাশ্ম প্রমাণ ও জেনেটিক তথ্য ব্যবহার করে জিনতত্ত্ববিদ ও জীবাশ্মবিদেরা ধারণা করছেন, সামুদ্রিক প্রাণী কম্ব জেলি পৃথিবীর প্রথম প্রাণী হতে পারে।

আমাদের গ্রহের প্রথম প্রাণী কোনটি ছিল, তা নিয়ে বিজ্ঞানীরা এখনো নানা দলে বিভক্ত। তবে ক্রোমোজোমের বিবর্তন বিশ্লেষণ ও প্রাচীন জীবাশ্ম পর্যবেক্ষণ করে স্পঞ্জ ও কম্ব জেলিকে পৃথিবীর সম্ভাব্য প্রথম প্রাণী হিসেবে মনে করেন তাঁরা। প্রাথমিক প্রাণীদের সম্পর্কে কিছু তথ্য পাওয়া যায় ক্যামব্রিয়ান যুগের জীবাশ্ম থেকে। প্রায় ৫৪ কোটি ১০ লাখ বছর আগের সেই যুগে কিছু প্রাণীর বিকাশ ঘটেছিল। সেই সময়ে ক্যামব্রিয়ান আমলে পৃথিবীতে নতুন প্রজাতির প্রাণী দেখা যায়। এরপর মাত্র এক কোটি বছরের মধ্যে আরও কয়েক হাজার প্রাণীর প্রজাতি দেখা যায়, যার মধ্যে আর্থ্রোপড, মোলাস্ক ও কর্ডেটও রয়েছে। ধীরে ধীরে পরবর্তী সময় মেরুদণ্ডী প্রাণীর জন্ম হয়।

ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার বার্গেস শেল নামে পরিচিত শিলার সংরক্ষিত নমুনা থেকে পৃথিবীর শুরুতে প্রাণীরা দেখতে কেমন ছিল, তা জানা যায়। বার্গেস শেল মূলত একটি ট্রিলোবাইট প্রাণীর জীবাশ্ম। ক্যামব্রিয়ান বিস্ফোরণের সময় বিকশিত হওয়া অনেক প্রাণীর মধ্যে ট্রিলোবাইট ছিল অন্যতম। ক্যামব্রিয়ান যুগের প্রাণীগুলো ছিল বেশ শক্ত দেহের। অন্যদিকে এডিয়াকারান যুগের প্রাণীগুলো বেশির ভাগই ছিল নরম দেহের। সে সময় জেলি ফিশ বা সামুদ্রিক অ্যানিমোনের মতো প্রাণী দেখা যেত। নরম টিস্যু সংরক্ষণ করা বেশ কঠিন বলে এডিয়াকারান প্রাণীদের জীবাশ্ম খোঁজ পাওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। ফলে তাদের বিশ্লেষণ করা কঠিন।

কানাডার অন্টারিওর লরেন্টিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী এলিজাবেথ টার্নার বলেন, প্রাচীনতম প্রাণীর জীবাশ্মের সম্ভবত কোনো স্বীকৃত প্যাটার্ন ছিল না। নেচার জার্নালে ২০২১ সালের একটি গবেষণাপত্রে টার্নার সবচেয়ে প্রাচীন পরিচিত প্রাণী হিসেবে একটি গবেষণা প্রকাশ করেন। সেখানে তিনি ৮৯ কোটি বছর আগে থাকা স্পঞ্জকে সবচেয়ে পুরোনো প্রাণী বলে দাবি করেন। যদিও অন্য বিজ্ঞানীরা তাঁর দাবির সঙ্গে একমত নন।

আগে শিলায় পাওয়া জীবাশ্ম থেকে সময় হিসাব করা হতো। সম্প্রতি মলিকুলার ক্লক বা আণবিক ঘড়ি নামে একটি মডেল ব্যবহার করা হচ্ছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে জিন ধ্রুবক হারে পরিবর্তিত হয়—এ ধারণার ওপর ভিত্তি করে বিজ্ঞানীরা আধুনিক প্রাণীর জিনোম বিশ্লেষণ করেছেন। ৬০–৭০ কোটি বছর আছে কম্ব জেলির মতো প্রাণী ছিল, যাকে প্রথম পরিচিত প্রাণী বলা হচ্ছে। অন্যদিকে সংরক্ষিত টিস্যুর চিহ্ন প্রাচীন স্পঞ্জের থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। যার বয়স প্রায় ৮৯ কোটি বছর। তবে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী নিক বাটারফিল্ড এই তত্ত্ব নিয়ে সন্দেহ পোষণ করেছেন। তিনি বলেন, ‘যদি ৮৯ কোটি বছর আগে প্রাণী থাকত, তাহলে আমরা বায়োমিনারলাইজেশনের মতো চিহ্ন দেখতে পেতাম। সেই সময়কার প্রাণীর জৈব পদার্থের অণু থেকে খনিজের স্ফটিক তৈরি হওয়ার কথা।’

বিজ্ঞানী বাটারফিল্ড কম্ব জেলিকে প্রাচীনতম প্রাণী হিসেবে বলতে রাজি নন। এ বিষয়ে তিনি জানান, বছরের পর বছর ধরে বিভিন্ন জিনের গবেষণার ফলাফলকে বিশ্লেষণ করে স্পঞ্জকে প্রথম প্রাণী হিসেবে বলা যাচ্ছে না। সাম্প্রতিক গবেষণার ওপর ভিত্তি করে বলা হচ্ছে, কম্ব জেলির পূর্বপুরুষেরা প্রথম দিককার প্রাণী। তাদের পূর্বপুরুষেরা প্রথম প্রাণী হলেও তারা ভিন্ন রকমের ছিল। আধুনিক কম্ব জেলির পেশি ও স্নায়ুতন্ত্রে জটিল কাঠামো রয়েছে। এসব কাঠামো স্পঞ্জের মতো অন্য প্রাণীদের নেই।

সূত্র: লাইভসায়েন্স