প্রসাধনী তৈরিতে ব্যবহৃত হবে ব্যাকটেরিয়া
বিজ্ঞানীরা প্রায়ই বড় সমস্যা সমাধানে ক্ষুদ্রতম জীবনধারার দিকে নজর দেন। আর তাই তো বিভিন্ন ধরনের জীবাণুর মাধ্যমে খাদ্য ও পানীয় তৈরির পাশাপাশি রোগ নিরাময়ও করা যাচ্ছে। এমনকি বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও দূষণ রোধেও সহায়তা করছে জীবাণু। ইস্ট ও ব্যাকটেরিয়া উদ্ভিদ শর্করাকে জৈব জ্বালানি ও রাসায়নিক পদার্থে রূপান্তর করতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব উইসকনসিন-ম্যাডিসনের গবেষকেরা ভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া তৈরি করেছেন। এসব ব্যাকটেরিয়া উদ্ভিদ ফাইবার বা আঁশ থেকে একই সময়ে দুটি রাসায়নিক পণ্য তৈরি করতে পারে।
এ বিষয়ে বিজ্ঞানী টিম ডোনোহু বলেন, ‘আমাদের জানামতে প্রথমবারের মতো আমরা এমন জীবাণুর খোঁজ পেয়েছি, যা একই সঙ্গে দুটি মূল্যবান পণ্য তৈরি করতে পারে। অ্যাপ্লাইড অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল মাইক্রোবায়োলজি জার্নালে একটি গবেষণাপত্রে জীবাণু সম্পর্কে বিস্তারিত গবেষণা প্রকাশ করা হয়েছে। এই আবিষ্কার জৈব জ্বালানিকে আরও টেকসই ও বাণিজ্যিকভাবে কার্যকর করতে সাহায্য করতে পারে। নীতিগতভাবে আমরা জীবাণুর মাধ্যমে গ্রিনহাউস গ্যাসের নির্গমন কমাতে পারি। একটি পাত্রে দুটি পণ্য তৈরি করতে কম পরিমাণে শক্তি ও গ্রিনহাউস গ্যাস প্রয়োজন হবে।’
জীবাশ্ম জ্বালানির বিকল্প হিসেবে পুনর্বীকরণযোগ্য জৈব বস্তুর টেকসই বিকল্প নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই গবেষণা করছেন বিজ্ঞানীরা। এ জন্য উদ্ভিদের ফাইবার নিয়ে গবেষণা করছেন তাঁরা। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধা হলো উদ্ভিদের কোষপ্রাচীরে থাকা লিগনিন। লিগনিন হলো নবায়নযোগ্য অ্যারোম্যাটিক কার্বনের বড় একটি প্রাকৃতিক উৎস। এই বস্তুর অনিয়মিত গঠনের কারণে ব্যবহার করা বেশ কঠিন। এই কারণেই বিজ্ঞানীরা নভো নামের ব্যাকটেরিয়ার সহায়তা নিয়েছেন। এই ব্যাকটেরিয়ার পুরো নাম নভোস্পিঙ্গোবিয়াম অ্যারোম্যাটিকাইভোরানস। এই ব্যাকটেরিয়া লিগনিনের কঠিন আবরণকে হজম করে জেনেটিক্যালি পরিবর্তন করতে পারে। ২০১৯ সালে নভোর একটি বিশেষ ধরন তৈরি করা হয়। এটি নাইলন ও পলিউরেথেনের মতো প্লাস্টিকের মূল উপাদান তৈরি করতে পারে। সম্প্রতি ল্যাবে ব্যাকটেরিয়ার আরেকটি ধরনের খোঁজ মিলেছে যার মাধ্যমে সিসিএমএ নামের প্লাস্টিকের উপাদান তৈরি করা যায়।
বিজ্ঞানী বেন হল বলেন, ‘আমরা শুধু দুটি পণ্য তৈরি করে কার্বন নির্গমন সমস্যার সমাধান করতে চাই না। আমরা জিনোমিক মডেলিং ব্যবহার করে সম্ভাব্য পণ্যের একটি তালিকা তৈরি করছি। বায়োমাস অ্যারোমেটিকস থেকে যা যা তৈরি করা যেতে পারে, তার খোঁজ করছি। আমরা জিয়াজানথিন নামের জৈবরঞ্জক তৈরির জন্যও কাজ করছি। এটি ক্যারোটিনয়েড নামে পরিচিত।’
ক্যারোটিনয়েড হলো লিপোফিলিক যৌগ, যা বিভিন্ন জীবের ঝিল্লিতে পাওয়া যায়। ক্যারোটিনয়েড বিভিন্ন শিল্পে, বিশেষ করে ওষুধ ও প্রসাধনী তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। ত্বকের যত্নে যে ক্রিম বা সানস্ক্রিন ব্যবহার করা হয়, তার অন্যতম উপাদান ক্যারোটিনয়েড। বর্তমানে রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় ক্যারোটিনয়েড তৈরি করা হলেও এবার ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে সেই যৌগ উৎপাদনের কাজ চলছে।
সূত্র: ফিজিস ডটঅর্গ