অনেকেই ফ্রিল্যান্স কাজ শেখার জন্য অন্যদের দেখাদেখি বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ নেন। কেউ আবার কি শিখব, কীভাবে শুরু করলে ভালো হবে—ভাবতে ভাবতেই ফ্রিল্যান্সিং কাজ আর শুরু করতে পারেন না। ফ্রিল্যান্স কাজ করার জন্য প্রথমেই নিজের ভালো লাগার বিষয় নির্বাচন করতে হবে। এরপর সে বিষয়ে ঘরে বসে বা বিভিন্ন প্রশিক্ষণকেন্দ্র থেকে প্রশিক্ষণ নিতে হবে।
মনে রাখতে হবে, নিজের আগ্রহ বুঝে কাজ না করলে আপনি বেশি পরিশ্রম করতে পারবেন না, আর পরিশ্রম না করলে কোনো কাজ ভালোভাবে সম্পন্নও করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। ফলে সফল ফ্রিল্যান্সার হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলা যায় না। ফ্রিল্যান্সিং কাজের জন্য বর্তমানে বেশ কিছু পেশার বেশ চাহিদা রয়েছে বিশ্ববাজারে। আপনার আগ্রহ এবং পছন্দ বুঝে বেছে নিতে পারেন পেশাগুলো।
গ্রাফিক ডিজাইন
আপনি যদি সৃজনশীল হন বা নতুন কিছু চিন্তা করতে পছন্দ করেন, তবে গ্রাফিক ডিজাইনের কাজকে পেশা হিসেবে বেছে নিতে পারেন। সৃজনশীল কাজে পারদর্শী এবং পরিশ্রমী ব্যক্তিরা সচরাচর এ পেশায় ভালো করেন। আপনি যদি নিজেকে সৃজনশীল এবং পরিশ্রমী মনে করেন, তবে প্রফেশনাল গ্রাফিক ডিজাইন প্রশিক্ষণ নিয়ে এ পেশায় নিজেকে যুক্ত করতে পারেন। বিশ্বব্যাপী এ কাজের চাহিদা অনেক বেশি থাকায় দক্ষ ব্যক্তিরা সহজেই এ পেশায় সফল হতে পারেন।
ওয়েব ডিজাইন
ওয়েবসাইট তৈরি করতে চাইলেও কোডিং করতে ভালো লাগে না অনেকের। চিন্তার কিছু নেই, কোডিং না শিখেও সফল ওয়েব ডিজাইনার হিসেবে ক্যারিয়ার গড়া যায়। আর তাই ওয়েবসাইট তৈরির ইচ্ছা মনে থাকলে ওয়ার্ডপ্রেস শিখতে পারেন। বর্তমানে বিশ্বের শতকরা ৬০ ভাগ ওয়েবসাইটই ওয়ার্ডপ্রেস প্ল্যাটফর্মে তৈরি করা হয়েছে, যা ভবিষ্যতে আরও বৃদ্ধি পাবে। ফলে ওয়েব ডিজাইনার হিসেবে কাজের অনেক সুবিধা পাওয়া যাবে।
ডিজিটাল মার্কেটিং
যারা নিজের চিন্তাভাবনা সুন্দরভাবে উপস্থাপন করতে পছন্দ করেন, তাঁরা বেছে নিতে পারেন ডিজিটাল মার্কেটিং পেশা। নিজের সৃজনশীলতা কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রচারণা চালানোর কৌশল শেখার জন্য আপনাকে অবশ্যই ডিজিটাল মার্কেটিং বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিতে হবে।
ভিডিও সম্পাদনা
সুন্দর মুহূর্ত ও স্মৃতি সংরক্ষণে ভিডিও তৈরি করেন অনেকেই। কেউ আবার নিজের পছন্দের ভিডিও কনটেন্ট তৈরি করে সামাজিক যোগাযোগের সাইট বা ইউটিউবে পোস্ট করেন নিয়মিত। আর তাই যাঁরা শখের বসে ভিডিও তৈরি করতে পছন্দ করেন, তাঁরা সহজেই ভিডিও সম্পাদনাকে পেশা হিসেবে নিতে পারেন। ভালোভাবে ভিডিও সম্পাদনা শিখতে পারলে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রচারণার কাজ করার পাশাপাশি সরাসরি অর্থও আয় করা সম্ভব।
ওয়েব ডিজাইন ও ডেভেলপমেন্ট
ওয়েব ডেভেলপার হতে হলে খুব বেশি কারিগরি বিশেষজ্ঞ হতে হয় না। তবে এ বিষয়ে আগ্রহ থাকতে হবে। আর তাই যাঁরা কোডিং বা প্রোগ্রামিং ভালোবাসেন, তাঁরা শিখতে পারেন ওয়েব ডিজাইন এবং ডেভেলপমেন্ট।
মোশন গ্রাফিকস
মোশন গ্রাফিকস বা ডিজিটাল অ্যানিমেশনের কাজ অনেকটা গ্রাফিক ডিজাইনের মতোই। তবে গ্রাফিক ডিজাইনে থাকে স্থির চিত্র এবং মোশন গ্রাফিকসে স্থির চিত্রকে অ্যানিমেশনের মাধ্যমে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা হয়। টেলিভিশনের বিভিন্ন বিজ্ঞাপন থেকে শুরু করে সিনেমার সূচনা দৃশ্য বা টাইটেল অ্যানিমেশনগুলো সবই মোশন গ্রাফিকসের মাধ্যমে তৈরি করা হয়ে থাকে। ফলে এ পেশায় কাজের বেশ চাহিদা রয়েছে দেশ–বিদেশে। আর তাই আপনি যদি সৃজনশীল হন, তবে মোশন গ্রাফিকস শিখতে পারেন।
অ্যাকাউন্টস ম্যানেজমেন্ট
যারা হিসাবরক্ষণের কাজ করতে পছন্দ করেন, তাঁরা অ্যাকাউন্টস ম্যানেজমেন্ট প্রশিক্ষণ নিয়ে অনলাইনে বিভিন্ন বিদেশি প্রতিষ্ঠানের কাজ ঘরে বসে করতে পারবেন। এ কাজের জন্য আপনাকে অবশ্যই কুইকবুক এবং জেরক্স বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিতে হবে।
অ্যাপ তৈরি
মুঠোফোনের বিভিন্ন অ্যাপ তৈরি করেও অর্থ আয় করা যায়। তবে এ ক্ষেত্রে আগ্রহ থাকতে হবে কোডিং ও প্রোগ্রামিং বিষয়ে। অ্যাপ তৈরির কাজ করতে চাইলে জাভা প্রোগ্রামিং বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিতে হবে।
গেম তৈরি
বর্তমানে তরুণ প্রজন্মের বেশির ভাগই নিয়মিত গেম খেলেন। নিজের ভালো লাগাকে কাজে লাগিয়ে গেমও তৈরি করেছেন অনেকে। গেম তৈরি করে আয় করতে চাইলে জাভা এবং পাইথন প্রোগ্রামিং শিখতে হবে।
ফ্রিল্যান্সিং একটি মুক্ত পেশা। ফ্রিল্যান্সিংয়ে সফল হতে হলে এক বা একাধিক বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করতে হয়। একই সঙ্গে প্রয়োজন ইংরেজি ভাষায় পারদর্শিতা। আর তাই ফ্রিল্যান্স কাজে সফল হওয়ার জন্য দক্ষতা ও পরিশ্রমের পাশাপাশি ইংরেজি ভাষাও ভালোভাবে শিখতে হবে।
লেখক: সফল ফ্রিল্যান্সার