কাল শুরু হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় প্রযুক্তি মেলা

লাস ভেগাস কনভেনশন সেন্টার। কাল থেকে এখানেই শুরু হচ্ছে সিইএস মেলাপ্রথম আলো

যুক্তরাষ্ট্রের লাস ভেগাস হোটেল–মোটেলের শহর। কিন্তু ৫ থেকে ৮ জানুয়ারি এই শহরের কোনো হোটেলের কক্ষ খালি মিলছে না। যাও আছে, ভাড়া আকাশছোঁয়া। কারণ, দুই বছর পর এ শহরে আবার বসছে প্রযুক্তিপণ্যের সবচেয়ে বড় মেলা কনজ্যুমার ইলেকট্রনিক শো (সিইএস)। সিইএস ২০২৩ মেলায় অংশ নিতে লাখখানেক দর্শনার্থী, প্রযুক্তি ব্যবসায়ী, উদ্যোক্তা ও পেশাজীবী এসেছেন পৃথিবীর ১৬৫টি দেশ থেকে। মেলার মূল ভেন্যু লাস ভেগাস কনভেনশন সেন্টার (এলভিসিসি) হলেও ভেনেটিয়ান এক্সপো ও আশপাশের আরও অনেক মিলনায়তন ও হোটেলজুড়ে ছড়িয়ে হচ্ছে বিরাট এই আয়োজন।

লাস ভেগাস কনভেনশন সেন্টার শহরের মূল সড়ক দ্য স্ট্রিপের শেষ মাথায়। মেলা প্রাঙ্গণের বাইরেই বড় কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের প্যাভিলিয়ন। আজ সেখানে গিয়ে আলাদা করে চোখে পড়ল গুগলের চমৎকার দোতলা প্যাভিলিয়ন। স্যামসাংয়ের প্যাভিলিয়ন মনে হলো আরও বড়। হাতে গোনা এমন কয়েকটি বড় প্রতিষ্ঠানের প্যাভিলিয়ন মেলা প্রাঙ্গণের বাইরে থাকলেও প্রায় সব কটিই ভেতরে। সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত তিন হাজারের বেশি স্টল ও প্যাভিলিয়ন তৈরি হচ্ছে বলে জানা গেল মেলার তথ্যকেন্দ্র থেকে।

কী নেই এ প্রযুক্তি আয়োজনে? গাড়ি থেকে খাদ্যপ্রযুক্তি, ব্লকচেইন থেকে বিজ্ঞাপন ও বিপণন, স্মার্টহোম থেকে স্মার্ট সিটি, ভিডিও থেকে মহাকাশ কিংবা স্বাস্থ্যপ্রযুক্তি। তবে ৭১০টি উদ্যোগ নিয়ে সবচেয়ে বেশি স্টল আছে স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠানের। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) ৫৭১টি প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণ দেখে বোঝা যাচ্ছে ভবিষ্যতে এ প্রযুক্তির দাপট কতটা হতে পারে! এ বছরের সিইএসের মূল বিষয় হলো মানবনিরাপত্তা। যে কারণে খাদ্যনিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যসেবার গবেষণানির্ভর প্রতিষ্ঠানগুলো গুরুত্ব পেয়েছে সিইএসে।

ওয়ালটনের স্টল গোছানোর কাজ চলছে
প্রথম আলো

সিইএসে বাংলাদেশি কোনো প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণ এবারই প্রথম। এলভিসিসির কেন্দ্রীয় মিলনায়তনে ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজের স্টলে দেখা গেল শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি চলছে। সিইএসএসে ওয়ালটন কী নিয়ে এসেছে? প্রতিষ্ঠানটির টেলিভিশন বিভাগের প্রধান ব্যবসায় কর্মকর্তা মোস্তফা নাহিদ হোসেন বললেন, ‘আমরা ইন্টারনেট অব থিংস বা আইওটিনির্ভর প্রযুক্তি ও পণ্যগুলো প্রদর্শন করব। এর মধ্যে রেফ্রিজারেটর, এসি, টেলিভিশেনর মতো গৃহস্থালি প্রযুক্তিপণ্যই বেশি থাকবে। যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্ববাজারে আমাদের বিশ্বমানের পণ্য ও প্রযুক্তি প্রদর্শনের বড় সুযোগ এটি।’

মেলা প্রাঙ্গণের বাইরে গুগলের প্যাভিলিয়ন
প্রথম আলো

মেলার প্রতিষ্ঠান ও পণ্যের পাশাপাশি বড় আকর্ষণ থাকবে নানান বিষয়ের ওপর আলোচনা অনুষ্ঠানগুলো। সব মিলিয়ে এই চার দিনে দুই শতাধিক অধিবেশনে উপস্থিত থাকবেন বিশ্বের সেরা ও প্রভাবশালী প্রযুক্তিবিদ, গবেষক ও উদ্যোক্তারা। প্রতিটি অধিবেশনে অংশ নিতে অনলাইনে আগে থেকেই নিবন্ধন করতে হচ্ছে।
কী চমক থাকছে? এবারের সিইএসে সেসবের কিছু জানা যাচ্ছে আগে থেকেই। মেলার তিন দিন আগে থেকে সংবাদ সম্মেলন করছে বড় প্রতিষ্ঠানগুলো। তবে বড় প্রতিষ্ঠানের চেয়ে হয়তো স্টার্টআপগুলোর চমকই বেশি থাকবে এ বছর। স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠানের পাখিকে খাবার খাওয়ানোর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির যন্ত্র, বিদ্যুৎ–চালিত জুতা বা স্কেটিং শু কিংবা ডিজিটাল উল্কির মতো উদ্ভাবন নিয়ে ইতিমধ্যেই আলোচনায় আছে বেশ কিছু স্টার্টআপ।

হুন্দাই এবং অ্যাপটিভের তৈরি চালকবিহীন গাড়ি দেখা যাবে সিইএসে
এএফপি

এত বড় আয়োজনের এত কিছু কীভাবে জানবে দর্শনার্থীরা? কিংবা আগ্রহের বিষয় খুঁজে বের করা নিশ্চয়ই সহজ না! সিইএসে এটাই সহজ। পুরো মেলাকে হাতের মুঠোয় নিয়ে এসেছে সিইএসের মোবাইল অ্যাপ। কোথায় কী হচ্ছে, নিবন্ধন, সরাসরি দেখা, শাটল বাসের সময়সূচি থেকে স্টলের অবস্থান—সবই জানা যাবে এই অ্যাপ থেকেই।