বিল গেটসের শৈশব কেমন ছিল

১৯৭০ সালে বন্ধু পল অ্যালেনের (মাইক্রোসফটের আরেক সহপ্রতিষ্ঠাতা) সঙ্গে বিল গেটস (ডানে)উইকিমিডিয়া

মাইক্রোসফটের সহপ্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস কাজ থেকে অবসর নিলেও নিজের প্রতিষ্ঠা করা ‘বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন’-এর মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে উদ্ভাবন ও গবেষণার কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন। শুধু তা-ই নয়, নিজের জীবনের নানা অভিজ্ঞতা নিজের ব্লগ সাইট ‘গেটস নোটস’-এ প্রকাশও করেন তিনি। এবার তিনি ব্লগ সাইটটিতে নিজের শৈশবে ঘটে যাওয়া নানা ঘটনা তুলে ধরেছেন। সেখানে নিজের উদ্যোক্তা হিসেবে সফল হওয়ার পেছনে স্মার্টফোন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমবিহীন শৈশবকে বেশ জোর দিয়েছেন তিনি। পাঠকদের জন্য লেখাটি প্রকাশ করা হলো।

বিল গেটস
রয়টার্স

যখন বড় হচ্ছিলাম, তখন আমি সব বিষয়ে অনুসন্ধান করতাম। যেসব বিষয়ে আমার আগ্রহ বা কৌতূহল হতো, তা জানার চেষ্টা করতাম। যখন অস্থির বা বিরক্ত বোধ করতাম বা ঝামেলায় পড়তাম, তখন ঘরে চলে আসতাম। কোনো বই বা ধারণা নিয়ে নিজেকে সেখানে হারিয়ে ফেলতাম। প্রায় কয়েক ঘণ্টার জন্য কোনো বাধা ছাড়াই বই পড়তাম। অলস সময়কে গভীর চিন্তাভাবনা ও শেখার জন্য ব্যবহার করার এ অভ্যাস পরবর্তী সময়ে আমার সাফল্যের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ ছিল। নব্বইয়ের দশকে মাইক্রোসফটে আমি নিয়মিত প্রতিবছর চিন্তার জন্য একটি সপ্তাহ বরাদ্দ করতে থাকি। তখন আমি ওয়াশিংটনের হুড খালের একটি কেবিনে চলে যেতাম। নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখতাম। শুধু বই ও প্রযুক্তিগত কাগজপত্রের একটি বড় ব্যাগ ছাড়া আমার কাছে কিছুই থাকত না। সাত দিন ধরে আমি ভবিষ্যৎ সম্পর্কে পড়তাম, ভাবতাম ও লিখতাম। তখন শুধু যে আমাকে খাবার দিয়ে যেত, তার সঙ্গে আমি কথা বলতাম। আমি নিজের সঙ্গে ভীষণ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিলাম, আমি আমার ই-মেইলও চেক করতাম না তখন।

আরও পড়ুন

আমার শৈশব অসাধারণ স্বাধীনতায় পূর্ণ ছিল, যা বর্তমানের মানুষদের অবাক করে দিতে পারে। অনেকেই অনুমান করেন, আমি হয়তো সারা দিন কম্পিউটার নিয়ে ঘরের ভেতরে থাকতাম। আমি যেভাবে বেড়ে উঠেছি, সেসব ঘটনা বর্তমানের অভিভাবকদের হয়তো আতঙ্কিত করবে। আমি আশপাশের বন্ধুদের নিয়ে অবিরাম খুঁজে বেড়িয়েছি। সে সময় সিনেট পেজ হিসেবে ওয়াশিংটন ডিসিতে আমি দৌড়াদৌড়ি করতাম। যখন হাইস্কুলে ছিলাম, তখন (মাইক্রোসফটের আরেক সহপ্রতিষ্ঠাতা) পল অ্যালেন ও আমি ভ্যাঙ্কুভার ও ওয়াশিংটনে কয়েক মাস একাই থাকতাম। তখন একটি পাওয়ার কোম্পানিতে প্রোগ্রামার হিসেবে কাজ করতাম। আমার মা–বাবা জানতেন না আমি অর্ধেক সময় কোথায় ছিলাম। আসলে এটি তখন স্বাভাবিক ছিল। যদিও আমি এসব দুঃসাহসিক কাজের জন্য আঘাত পেতাম। অনেকের জন্য সমস্যায় পড়েছি। এসব অভিজ্ঞতা আসলে খারাপের চেয়ে বেশি উপকারী ছিল। এসব অভিজ্ঞতা আমাকে এমনভাবে স্থিতিস্থাপক, স্বাধীন ও বিচার করা শিখিয়েছে, যা আসলে তত্ত্বাবধান করে শেখানো যায় না।

আরও পড়ুন

বর্তমানে ফোননির্ভর শৈশব অনেক বেশি সাধারণ—এই পরিবর্তন (কোভিড) মহামারির আগে থেকেই ছিল। পরিহাসের বিষয় হলো, আজকাল অভিভাবকেরা বাস্তব জগতে অত্যধিক সুরক্ষামূলক আচরণ করেন। তবে তত্ত্বাবধান ছাড়াই শিশুদের অনলাইনে উপস্থিত হতে দিচ্ছেন তাঁরা।

ভাষান্তর: জাহিদ হোসাইন খান

সূত্র: গেটস নোটস

আরও পড়ুন