পপকর্ন ‘খেতে খেতে’ সেলফি তুলছে এই রোবট
অল্টার–৩ নামের একটি রোবট সম্প্রতি তৈরি করা হয়েছে। এই রোবটের শরীর ৪৩টি অক্ষের ওপরে নিয়ন্ত্রিত হয়। আমাদের পৃথিবী একটি অক্ষের ওপরে ঘোরে, তাহলে ভাবুন ৪৩টি অক্ষ মানে রোবটটি কতভাবে ঘুরতে পারে, নড়াচড়া করতে পারে। রোবটের প্রতিটি চোখে আছে শক্তিশালী ক্যামেরা। কন্ট্রোল সিস্টেমের মাধ্যমে রোবটের শরীরকে নিয়ন্ত্রণ করতে সিরিয়াল পোর্টের মাধ্যমে নির্দেশ বা কমান্ড পাঠাতে হয়।
জাপানের টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক রোবটটি তৈরি করেছেন। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তিনির্ভর লার্জ ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল (এলএলএম) ও রোবটের মধ্যে একটি সেতু তৈরি করতে একে দারুণ এক উদাহরণ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। প্রচলিত যন্ত্রাংশ বা হার্ডওয়্যারনির্ভর নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে মানবিক অঙ্গভঙ্গি করতে বেশ পারদর্শী এই রোবট।
অল্টার–৩ একটি হিউম্যানয়েড বা মানবাকৃতির রোবট। ২০১৬ সালে এ ধরনের রোবট তৈরি করা হয়। গবেষকেরা এখন জিপিটি-৪ ব্যবহার করছেন রোবটকে বিভিন্ন সিমুলেশনের মাধ্যমে নির্দেশনা দেওয়ার জন্য। এখন বার্তা পেয়েই রোবটটি সেলফি তুলতে পারে। টেনিস বল দূরে ছুড়তে পারে। পপকর্ন খাওয়ার মতো কাজ আর এয়ার গিটার বাজানো এখন এক মুহূর্তের ব্যাপার রোবটটির জন্য।
আগে রোবটদের এই ধরনের কাজের জন্য ভিন্ন ও নির্দিষ্ট প্রোগ্রামিং সংকেত (কোডিং) প্রয়োজন হতো। জিপিটি-৪–এর মধ্যে থাকায় আর কোডিং লাগছে না। সাধারণ ভাষার নির্দেশনা থেকে রোবট শিখে নিচ্ছে নিজের মতো করে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাচালিত রোবটেরা প্রাথমিকভাবে কম্পিউটারের সঙ্গে জীবন ও রোবটের মধ্যে মৌলিক যোগাযোগ সহজ করছে। এলএলএম ব্যবহার করে রোবটদের মানুষের মতো প্রতিক্রিয়া বোঝার চেষ্টা করা হচ্ছে।
প্রোগ্রামিং সংকেত ব্যবহারের মাধ্যমে রোবটের মধ্যে শরীরে মানুষের ক্রিয়াকলাপ স্থাপন করা হচ্ছে। মানুষের মতো রোবটকে এখন সরাসরি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। রোবটটি একটি ভিত্তির ওপর স্থির থাকে, হাঁটতে পারে না। যদিও হাঁটার মতো শারীরিক নড়াচড়া অনুকরণ করতে পারে। শব্দ নিয়ে নির্দেশনা দিলেই রোবটটি গান বাজানোর মতো কাজ করতে পারে।
এলএলএম ব্যবহার না করলে সাধারণভাবে ৪৩টি অক্ষযুক্ত রোবটকে নিয়ন্ত্রণ করতে অনেক কোডিংয়ের প্রয়োজন হতো। এখন সহজে কাঙ্ক্ষিত গতিবিধি বর্ণনা করে মৌখিক নির্দেশনা দিলেই রোবটটি সাড়া দেয়। বাক্য বা প্রম্পটের মাধ্যমে এলএলএমকে পাইথন কোড তৈরি করার নিদের্শনা দিলেই সেই কোড অ্যান্ড্রয়েড ইঞ্জিনের মাধ্যমে বাস্তবে দেখা যায়।
অল্টার–৩ তার মেমোরিতে বিভিন্ন ক্রিয়াকলাপ ধরে রাখে। গবেষকেরা পরবর্তী সময়ে ক্রিয়ার ইতিহাস সামঞ্জস্য করতে পারেন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে রোবটটির নড়াচড়া দ্রুত, মসৃণ ও আরও সঠিক হতে থাকে।
গবেষকেরা সেলফি তোলার জন্য সাধারণ ভাষায় নির্দেশ দিলে রোবটটি চেহারায় আনন্দময় হাসি এনে চোখ-মুখ আলোড়িত করে ছবি তোলার অভিব্যক্তি দিতে পারে। গতিশীল ভঙ্গি অবলম্বন করে দ্রুত শরীরের ওপরের অংশকে সামান্য বাঁ দিকে ঘুরিয়ে ফোন ধরার মতো অনুকরণ করে ডান হাত উঁচু করতে পারে।
রোবটবিজ্ঞানের গবেষণায় এলএলএম ব্যবহার করার মাধ্যমে মানুষ ও রোবটের মধ্যে সংযোগে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে বলে গবেষকেরা দাবি করছেন। অল্টার–৩ পপকর্নের প্যাকেট হাতে নিয়ে খাওয়ার ভঙ্গি করতে পারে। অতিরঞ্জিত মুখের অভিব্যক্তি আর অঙ্গভঙ্গি দেখে বিস্মিত হতে হয়। ক্যামেরা-সজ্জিত অল্টার–৩ মানুষকে দেখতে পারে। গবেষকেরা দেখেছেন, রোবটটি মানুষের প্রতিক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করে তার আচরণ অনুকরণ করতে পারে। এই রোবট ভূত দেখার মতো অভিব্যক্তিসহ বিভিন্ন প্রাণীকে অনুকরণ করতে পারে। এমনকি মানুষের কথা শুনতে শুনতে চোখ-মুখে নিজের অভিব্যক্তি প্রকাশ করতে পারে অল্টার–৩। আর্কাইভ নামের জার্নালে অল্টার–৩–এর ওপরে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে।
সূত্র: টেক এক্সপ্লোর ডটকম