সিইওওয়ার্ল্ড ম্যাগাজিনের তালিকা
যেসব দেশের ফ্রিল্যান্সারদের চাহিদা বেশি, বাংলাদেশিরা কোন অবস্থানে?
বিশ্বব্যাপী তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) খাতের পেশাজীবীদের একটি বড় অংশ মুক্ত পেশাজীবী বা ফ্রিল্যান্সার। ফ্রিল্যান্সিং বা ফ্রিল্যান্সার বাংলাদেশেও পরিচিত শব্দ। দেশের অনেক তরুণ আইসিটির বিভিন্ন বিষয়ে দক্ষ হয়ে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে দেশে বসে বিদেশি গ্রাহকের জন্য কাজ করছেন। মার্কিন সাময়িকী সিইওওয়ার্ল্ড গত ১৯ এপ্রিল ফ্রিল্যান্স কাজের জন্য সেরা গন্তব্য ৩০টি দেশের তালিকা প্রকাশ করেছে। এই তালিকায় ২৯তম স্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। বিভিন্ন সংস্থা থেকে প্রকাশিত তথ্য ও প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কোন দেশের কর্মীদের চাহিদা বেশি, তা নিয়ে তালিকা প্রকাশ করেছে সিইওওয়ার্ল্ড।
তালিকায় সেরা যুক্তরাষ্ট্র, বাংলাদেশ কোথায়
যাঁরা ফ্রিল্যান্সারদের কাজ দিচ্ছেন, তাঁদের ভাষ্যে সিইওওয়ার্ল্ড সাময়িকী ২০২৪ সালের সেরা কয়েকটি দেশের ফ্রিল্যান্সারদের তালিকা প্রকাশ করেছে। কাজের ধরন, ফ্রিল্যান্সারদের দক্ষতা, আর্থিক অবস্থানসহ প্রযুক্তিগত সক্ষমতার বিষয় যুক্ত করে বিভিন্ন দেশের জন্য নম্বর দেওয়া হয়েছে। সেই নম্বর বা স্কোর অনুসারে শীর্ষে আছে যুক্তরাষ্ট্র। এই তালিকায় ৯৭ দশমিক ৪৬ নম্বর নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্রিল্যান্সারদের চাহিদা সারা বিশ্বে সবচেয়ে বেশি। তালিকায় ৯৫ দশমিক ৭১ ও ৯৪ দশমিক ৮১ নম্বর নিয়ে ভারত ও যুক্তরাজ্য যথাক্রমে দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে আছে। এরপরের তালিকায় ফিলিপাইন, ইউক্রেন, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, পোল্যান্ড, ব্রাজিল ও পর্তুগালের নাম দেখা যায়। চীনের অবস্থান ২২, পাকিস্তানের অবস্থান ২৮ ও বাংলাদেশের অবস্থান ২৯তম।
তালিকায় বাংলাদেশ কেন পিছিয়ে?
এই তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান নিয়ে বাংলাদেশ ফ্রিল্যান্সার ডেভেলপমেন্ট সোসাইটির চেয়ারম্যান তানজিবা রহমান আজ সোমবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘নানা কারণে এই তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ২৯তম। তালিকাটি করা হয়েছে হায়ারিং মানে কাজ দেওয়ার প্রবণতার ওপর নির্ভর করে। সংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশ পৃথিবীর ফ্রিল্যান্সারদের দ্বিতীয় বৃহত্তম আবাসস্থল। কিন্তু কাজ পাওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের কর্মীরা বেশ পিছিয়ে। এখানকার ফ্রিল্যান্সাররা কম পারিশ্রমিকের কাজ বেশি করেন। গ্রাফিক ডিজাইন, ওয়েব ডিজাইনের মতো কাজের বাজারে আবার প্রতিযোগিতা অনেক বেশি। কারিগরি যেসব ফ্রিল্যান্স কাজ হয়, সেখানে বাংলাদেশের ফ্রিল্যান্সারদের উপস্থিতি কম। এখনো সেই ঘণ্টাপ্রতি পাঁচ থেকে সাত ডলারেরর কাজ নিয়ে প্রতিযোগিতায় নামছেন সবাই।’
তানজিবা জানান, চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের সঙ্গে যুক্ত প্রযুক্তিজ্ঞাননির্ভর কাজের সুযোগ বাড়ছে। এসব কাজে ঘণ্টাপ্রতি ৫০ থেকে ১০০ ডলার আয়ের সুযোগ আছে। তিনি বলেন, ‘ফ্রিল্যান্সিং দুনিয়ার কাজের ধরনে যে মাত্রায় দ্রুত পরিবর্তন আসছে, তা থেকে আমাদের ফ্রিল্যান্সাররা কিছুটা পিছিয়ে বলা যায়। প্রযুক্তিগত যথাযথ প্রশিক্ষণ না থাকার কারণে আমাদের ফ্রিল্যান্সাররা সাধারণ কাজ করেন। আবার আমাদের ফ্রিল্যান্সারদের কাজ ঠিক সময়ে শেষ না করার প্রবণতা আছে। ভাষাগত যোগাযোগের ক্ষেত্রেও দুর্বলতা আছে বলে অনেক কাজে বাংলাদেশের ফ্রিল্যান্সারদের আবেদনই গ্রহণ করা হয় না। দক্ষতা না বাড়ানোর কারণে আমরা তালিকার পেছনে আছি। তরুণ ফ্রিল্যান্সারদের কারিগরি ও মূল বিষয়গুলোয় প্রশিক্ষিত করে আমরা তালিকার ওপরের দিকে যেতে পারি।’
চাহিদা আছে যেসব দেশের
সিইওওয়ার্ল্ডের তালিকায় দেখা যাচ্ছে যে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের ফ্রিল্যান্সারদের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। বিভিন্ন শিল্প খাতে যুক্তরাষ্ট্রের নানা ধরনের দক্ষ ফ্রিল্যান্সারের চাহিদা অনেক। ইংরেজিভাষী পেশাজীবী, পশ্চিমা পেশাদারত্ব, দক্ষতাসহ যুক্তরাষ্ট্র ফ্রিল্যান্সারদের গন্তব্য হিসেবে দৃঢ় অবস্থানে রয়েছে। বিভিন্ন মার্কিন প্রতিষ্ঠানের কর্মীবাহিনীর মধ্যে এক-তৃতীয়াংশের বেশি ফ্রিল্যান্স কর্মী দেখা যায়। অন্যদিকে ভারত সারা বিশ্বের ফ্রিল্যান্সার–বাজারে কর্মী সরবরাহকারী দেশ হিসেবে অন্যতম। প্রতিযোগিতাভিত্তিক বাজার ও ভারতীয়দের ইংরেজিতে দক্ষতার জন্য তাঁদের চাহিদা অনেক। ভারতের দেড় কোটির বেশি ফ্রিল্যান্সার রয়েছেন যাঁরা যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়াসহ এশিয়ার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির কাজ করছেন। এশিয়ার আরেক দেশ ফিলিপাইনের ফ্রিল্যান্সারদেরও সারা বিশ্বে চাহিদা রয়েছে।
ফ্রিল্যান্সিংয়ের ক্ষেত্র বিশ্বব্যাপী বড়
সিইওওয়ার্ল্ডের হিসাবে বিশ্বব্যাপী প্রায় ১৫৭ কোটি ফ্রিল্যান্সার রয়েছেন। ফ্রিল্যান্সিং কাজ দেওয়া–নেওয়ার নানা ধরনের ওয়েবসাইট বা মার্কেটপ্লেসের বাজারমান বিশ্বব্যাপী ৩৩৯ কোটি মার্কিন ডলার। শুধু যুক্তরাষ্ট্রে ফ্রিল্যান্সাররা ২০২৩ সালে অতিরিক্ত ১০ কোটি ডলার উপার্জন করেন। গড়ে বিশ্বব্যাপী ফ্রিল্যান্সাররা প্রতি ঘণ্টায় ২১ ডলার উপার্জন করেন। মজার বিষয় হচ্ছে, অনলাইনে অর্থ লেনদেন সেবা পেওনিয়ারের হিসেবে, এশিয়া অঞ্চলের ৮২ শতাংশ ফ্রিল্যান্সারের বয়স ৩৫ বছর বা তার কম। উত্তর আমেরিকার অর্ধেক ফ্রিল্যান্সারের বয়স ৩৫ বছরের কম। সব মিলিয়ে বিশ্বের প্রায় ৭০ শতাংশ ফ্রিল্যান্সারের বয়স ৩৫ বা তার কম। বিশ্বব্যাংকের হিসাবে বিশ্বব্যাপী প্রায় অর্ধেক পেশাজীবী বা কর্মী এখন ফ্রিল্যান্সিং করছেন। নিউইয়র্ক, লন্ডন কিংবা মুম্বাইয়ের মতো শহরে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে তরুণেরা বেশি কাজ করছেন।