অনলাইনে হয়রানির শিকার হলে পুলিশের সহযোগিতা নেওয়ার ৭ উপায়
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় ফেসবুক। কিন্তু এর অপব্যবহারও কম নয়। ফেসবুকে অনেকেই নানা ধরনের হয়রানি ও ব্ল্যাকমেলিংয়ের শিকার হয়ে থাকেন। শুধু ফেসবুক কেন, অনলাইনে হয়রানি হওয়ার ঘটনা নানা মাধ্যমেই হতে পারে। এসবের জন্য দায়ী প্রতারক বা সাইবার অপরাধীরাই। তারা মূলত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে প্রতারণার উদ্দেশ্যে। সাধারণ ব্যবহারকারীরা নিজের অজান্তেই হয়রানির শিকার হন।
আপনি বা আপনার পরিচিত কেউ অনলাইনে হয়রানির শিকার হলে কীভাবে অপরাধীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন? আমাদের দেশে সাইবার অপরাধের শিকার ভুক্তভোগীদের বেশির ভাগ মানুষই জানেন না অনলাইনে হয়রানির শিকার হলে কীভাবে আইনি সহায়তা নেওয়া যায়। ফলে অপরাধীরা পার পেয়ে যায় এবং নতুন করে এ ধরনের অপরাধ করতে থাকে। তাই অপরাধ সংঘটনের পরপরই এ বিষয়ে পুলিশের কাছে অভিযোগ জানানো দরকার। সাইবার অপরাধবিষয়ক বাংলাদেশ পুলিশের বিশেষ ইউনিট ও বিভাগ রয়েছে। তারা বিষয়টি দেখবে।
কী ধরনের হয়রানির শিকার হতে পারেন
ফেসবুক বা ই-মেইল অ্যাকাউন্ট হ্যাক হওয়া, ভুয়া বা ফেক আইডি খুলে আপত্তিকর ছবি/ভিডিও শেয়ার, উগ্র ধর্মীয়-সন্ত্রাসবাদী আধেয় (কনটেন্ট) শেয়ার, অন্যকে ফাঁসানোর উদ্দেশ্যে তথ্য বিকৃতি ও ছবি ব্যবহার, হুমকি দিয়ে টাকা আদায়, সাইবার হয়রানি, ফিশিং, স্প্যামিং, অনলাইনে প্রশ্নপত্র ফাঁস ইত্যাদি।
কোথায় অভিযোগ করবেন?
অভিযোগ জানানোর জন্য যেভাবে পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে—
১. প্রাথমিকভাবে কাছের থানায় অভিযোগ করতে পারেন।
২. যেকোনো নারী বা শিশু হয়রানির শিকার হলে ফেসবুকে ‘পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেন’ (পিসিএসডব্লিউ) (https://www.facebook.com/PCSW.PHQ) পেজে গিয়ে মেসেঞ্জারে অভিযোগ জানানো যায়। তা ছাড়া ই-মেইল ও হটলাইন নম্বরে যোগাযোগ করেও সহযোগিতা নিতে পারবেন। ই-মেইল ঠিকানা [email protected]। ওয়েব ঠিকানা: (https://www.police.gov.bd/en/police_cyber_support_for_women)। হটলাইন নম্বর ০১৩২০০০০৮৮৮। এই ইউনিট পরিচালনার দায়িত্বে থাকেন নারী পুলিশ কর্মকর্তারা। তাঁদের কাজ, ঘটনার শিকার নারী ও শিশুদের বিচার পেতে সহযোগিতা করা।
৩. হটলাইন নম্বর ৯৯৯–এ ফোন করেও অভিযোগ করা যাবে।
৪. ই-মেইলে অভিযোগ জানাতে পারেন [email protected] এই ঠিকানায় ।
৫. যদি পরিচয় গোপন রেখে অভিযোগ করতে চান, তাহলে গুগল প্লেস্টোর থেকে ডিএমপির কাউন্টার টেররিজম ডিভিশনের ‘হ্যালো সিটি’ বা ‘বিডি পুলিশ হেল্পলাইন’ অ্যাপ নামিয়ে নিতে হবে। এই অ্যাপ ব্যবহার করে পাঠাতে পারবেন আপনার ব্যক্তিগত তথ্য। এ ছাড়া ‘রিপোর্ট টু র্যাব’ অ্যাপ থেকেও সমস্যার কথা জানানো যায়।
৬. সাইবার পুলিশ সেন্টার, সিআইডি, ফোন: ০১৩২০০১০১৪৮। ওয়েব পেজ ঠিকানা https://cid.gov.bd/ ই-মেইল: [email protected]
৭. সরাসরি কথা বলার প্রয়োজন হলে ডিএমপির কাউন্টার টেররিজম ডিভিশনের সাইবার ক্রাইম ইউনিট অফিসে যেতে হবে। ঠিকানা : ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স, ৩৬, শহীদ ক্যাপ্টেন মনসুর আলী সরণি, রমনা, ঢাকা-১০০০।
এ ছাড়া ফেসবুকে সাইবারসিটিডিএমপি, ডিএমপিঢাকা, সিপিসিসিআইডিবিডিপুলিশ পেজ থেকেও সহায়তা পাওয়া যায়।
কীভাবে অভিযোগ করবেন
পুলিশের পরামর্শ অনুযায়ী সাইবার অপরাধের শিকার হলে যত দ্রুত সম্ভব অভিযোগ জানানো উচিত। সঠিক তথ্য ও প্রমাণসহ অভিযোগ করা বেশি উপযোগী। আপনি অভিযোগ করার জন্য একটি অভিযোগপত্র লিখতে পারেন, যা সঠিক তথ্যসহ জমা দিতে হবে।
অভিযোগপত্রে যে বিষয়গুলো উল্লেখ করবেন
সাইবার অপরাধ ঘটার বিস্তারিত বর্ণনা।
ঘটনার তারিখ ও সময়।
আপনি যে সফটওয়্যার, ওয়েবসাইট বা পরিষেবা ব্যবহার করছিলেন সেটি উল্লেখ করুন।
কোন ধরনের আক্রমণ (হ্যাকিং, ফিশিং বা অন্য কিছু) ঘটেছে, তা উল্লেখ করুন।
যদি আপনার কোনো আইডি বা পাসওয়ার্ড চুরি হয়ে যায়, সেটি উল্লেখ করুন।
সংশ্লিষ্ট স্ক্রিনশট, লিংক, অডিও/ভিডিও ফাইল অথবা কাগজপত্র।
স্ত্রিনশট সংগ্রহের ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে যেন ব্রাউজারের অ্যাড্রেসবারে ওয়েব ঠিকানা (ইউআরএল) দেখা যায়। এ ছাড়া পুলিশের ‘হ্যালো সিটি’ অ্যাপ ও ই-মেইলের মাধ্যমে অভিযোগ জানাতে চাইলে এসব তথ্য–প্রমাণাদি সংযুক্তি করে আপলোড করা যাবে। সরাসরি দেখা করে অভিযোগ জানানোর ক্ষেত্রে সফট কপি দেওয়া যেতে পারে। পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে সাইবার ক্রাইম ইউনিটের দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের কাছ থেকে।
প্রতিরোধ আপনার হাতেই
বাংলাদেশ পুলিশের সহকারী মহাপরিদর্শক (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) মো. মনজুর রহমান বলেন, ‘অনলাইন ব্যবহারের ক্ষেত্রে একটু সচেতন হলে যে কেউ এমন বিব্রতকর ঘটনা এড়াতে পারে। এ ধরনের হয়রানির শিকার হলে তাৎক্ষণিক পুলিশের সহযোগিতা নেওয়ার পাশাপাশি কিছু কৌশল বা সতর্কতামূলক পন্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন।’
এ ছাড়া, ফেসবুক প্রোফাইলের প্রাইভেসি সেটিংস লক্ষ করুন এবং নিজের ব্যক্তিগত তথ্যসহ যেকোনো পোস্ট উম্মুক্ত (পাবলিক) করে না রাখা। অজানা ব্যক্তির ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট গ্রহণ করা একটি ঝামেলা সৃষ্টি করতে পারে, যা আপনার সমস্যাগুলো বাড়াতে পারে।
অন্য কারও পোস্টে আপনাকে ট্যাগ করার অপশন খোলা না রাখাই ভালো। এ ছাড়া সন্দেহজনক কোনো লিংকে ক্লিক করা উচিত নয়। কারণ, এটি আপনাকে ভাইরাস বা ফিশিং মেইল হ্যাকারদের সাইটে নিয়ে যেতে পারে।
পরিচিতজনের বিপদের কথা জানিয়ে বা সন্দেহজনক ই-মেইল বা মেসেজের উত্তর দেওয়ার আগে যাচাই করুন এবং যোগাযোগের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকুন।
বিপুল অর্থ লটারিতে জিতেছেন—এমন তথ্যসহ পাঠানো ই–মেইল বা মেসেজের উত্তর দেবেন না।