পৃথিবীর শীর্ষ ধনী ইলন মাস্ক। টেসলা, স্পেসএক্স ও পেপ্যাল তাঁর সফল উদ্যোগ। খুদে ব্লগ লেখার সাইট টুইটার কিনে, কর্মী ছাঁটাই করে এই সময়ে তুমুল আলোচিত ইলন মাস্ক। এরপরও ইলন মাস্ক সম্পর্কে অনেক তথ্যই হয়তো আপনার অজানা। তেমন কিছু চমকপ্রদ তথ্যের প্রথম কিস্তি থাকছে এখানে।
১. গুগলের কাছে টেসলা প্রায় বিক্রি হয়ে গিয়েছিল
টেসলার ইতিহাসে যখন বেশ খারাপ সময়, তখন ইলন মাস্ক তাঁর বৈদ্যুতিক গাড়ির এই উদ্যোগ গুগলের কাছে প্রায় বিক্রিই করে দিয়েছিলেন। অ্যাশলি ভ্যান্সের লেখা ‘ইলন মাস্ক: টেসলা, স্পেসএক্স অ্যান্ড দ্য কোয়েস্ট ফর আ ফ্যানটাস্টিক ফিউচার’ বই অনুসারে সে সময় ইলন মাস্ক টেসলাকে ব্যর্থ উদ্যোগ মনে করেছিলেন। তাই গুগলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ল্যারি পেজের কাছে টেসলা বিক্রির প্রস্তাব নিয়ে গিয়েছিলেন। ২০১৩ সালে এই দুজনে ৬০০ কোটি ডলারে টেসলা কেনাবেচার সিদ্ধান্তও নিয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত টেসলা বিক্রি হয়নি।
২. ভর্তি হওয়ার দুই দিন পরই স্ট্যানফোর্ড ছেড়েছিলেন
ইলন মাস্ক স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ঝরে পড়া (ড্রপড আউট) শিক্ষার্থীদের একজন। পদার্থবিজ্ঞানে ডক্টরেট ডিগ্রি করতে ভর্তি হয়েছিলেন। কিন্তু দুই দিন পরই ছেড়ে দেন স্ট্যানফোর্ড। বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে ইলন মাস্ক তাঁর প্রথম কোম্পানি জিপ–২ শুরু করেন। চার বছর পর জিপ–২ বিক্রি করেছিলেন ৩০ কোটি ডলারে।
৩. তাঁর আছে ‘জেমস বন্ড’ গাড়ি
২০১৩ সালে মাস্ক লোটাস এস্প্রিট গাড়ি কেনেন ১০ লাখ ডলারে। এর দাম এত বেশি কেন? কারণ, এটি ১৯৭৬ মডেলের এই গাড়িকে পানির নিচে চলাচলের উপযোগী করে তৈরি করা হয়েছিল। যা জেমস বন্ড সিরিজের ‘দ্য স্পাই হু লাভ মি’ সিনেমায় ব্যবহার করা হয়।
ইলন মাস্ক পরে স্বীকার করেছেন, এই গাড়ি টেসলা সাইবারট্রাক তৈরির অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে।
৪. মাস্কের অনেক বাচ্চা
ইলন মাস্কের সন্তানসংখ্যা সাত। পাঁচজনের মা মাস্কের সাবেক স্ত্রী জাস্টন। বাকি দুই বাচ্চার মান মিউজিশিয়ান গ্রিমস। মাস্কের আরও এক সন্তান ছিল। যে ২০০২ সালে মারা যায়। সে সিডসে (সাডেন ইনফ্যান্ট ডেথ সিনড্রোম) আক্রান্ত হয়েছিল।
২০২১ সালে দ্য ওয়ার্ল্ড স্ট্রিট জার্নালকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ইলন মাস্ক বলেন, ‘সভ্যতা মানুষকে কম সন্তান নেওয়ার কথা শিখিয়েছে। আমি ভালো উদাহরণ তৈরি করতে চাই। যা আমি বিশ্বাস করি, তার চর্চা করতে চাই।’
৫. চলচ্চিত্র ও টিভিতে অভিনয় করেছেন ইলন মাস্ক
হ্যাঁ, আইএমডিবিতে (ইন্টারনেট মুভি ডেটাবেজ) ইলন মাস্কের পেজ আছে। ২০১০ সালে তিনি ‘আয়রন ম্যান–২’ ছবিতে ছোট এক চরিত্রে অভিনয় করেন। একই বছর অভিনয় করেন ‘দ্য বিগ ব্যাং থিওরি’ টেলিভিশন শোতে।
৬. টনি স্টার্কের অনুপ্রেরণা
‘আয়রন ম্যান’ সিনেমার জন্য অভিনেতা রবার্ট ডাউনি জুনিয়র নিজেকে প্রস্তুত করছিলেন, তখন অনুপ্রেরণা নিতে তিনি মাস্কের কাছে যান। দুজনে দেখা করেন। ‘আয়রন ম্যান’ ছবিতে টনি স্টার্ক চরিত্রের ম্যানারিজম ইলন মাস্কই শিখিয়ে দেন রবার্ট ডাউনি জুনিয়রকে।
৭. দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে
ইলন মাস্কের জন্ম দক্ষিণ আফ্রিকায়। ১৭ বছর বয়স পর্যন্ত সেখানেই ছিলেন। এরপর মাস্কের পরিবার কানাডায় চলে আসে। মাস্ক কলেজ পর্যায়ের পড়াশোনা শুরু করেন অন্টারিওর কুইন’স ইউনিভার্সিটি ইন কিংস্টনে।
৮. পে প্যালে কাজ করতেন
মাস্ক অনলাইন ব্যাংক এক্স ডটকমের সহপ্রতিষ্ঠাতা। এটি পরে পে প্যালের সঙ্গে একীভূত হয়। ২০০২ সালে অনলাইন নিলামঘর ই–বে ১৫০ কোটি ডলারে পে প্যাল কিনে নেয়। পে প্যালের বেশির ভাগ শেয়ারের মালিক ইলন মাস্ক তখন এক চুক্তিতে সাড়ে ১৭ কোটি ডলার কামিয়ে নেন।
৯. পৃথিবীর শীর্ষ ধনী
ইলন মাস্কের উদ্যোগগুলো তাঁকে অনেক অনেক ধনী বানিয়ে দেয়। এখন তিনি বিশ্বের ধনকুবেরদের তালিকায় শীর্ষ আসনে বসে আছেন। মাস্কের সম্পদের আনুমানিক পরিমাণ ২০ হাজার কোটি (২০০ বিলিয়ন) ডলারের বেশি।
১০. মাস্ক টেসলার প্রতিষ্ঠাতা নন!
ইলন মাস্কের সবচেয়ে সফল উদ্যোগ বৈদ্যুতিক গাড়ি প্রস্ততকারক প্রতিষ্ঠান টেসলা। কিন্তু এই কোম্পানির ধারণা তাঁর মাথা থেকে আসেনি। ২০০৩ সালে মার্টিন এবারহার্ড ও মার্ক টারপেনিং টেসলা প্রতিষ্ঠা করেন। এক বছর পর মাস্ক এতে বিনিয়োগ করেন। মাস্ক ২০০৪ সালে প্রথম দফায় সাড়ে ৬৩ লাখ ডলার টেসলায় বিনিয়োগ করেন। বর্তমানে তিনি টেসলার প্রধান নির্বাহী।
(চলবে)
সূত্র: ফিন্যান্স বাজ