স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট কতটা কাজে লাগে
স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয় বাংলাদেশ সরকারের বেশ বড় ও গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়। স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয় লিখে গুগলে সার্চ করলে এই ওয়েবসাইট সামনে আসে। এটি এই মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট।
গুগল ক্রোম ও মজিলা ওয়েব ব্রাউজার থেকে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট দেখার শুরুতেই সাইটটি নিরাপদ (সিকিউর) নয় বলে একটি বিজ্ঞপ্তি দেখা যায়। এইচটিটিপিএস সমর্থন করে না বলে এই বিজ্ঞপ্তি প্রদর্শিত হয়।
সাইটে যাওয়ার পর আপনার মনে হতে পারে আপনি ২০০৮ সালের কোনো সরকারি ওয়েবসাইটে প্রবেশ করেছেন। সাইটের কপিরাইট অংশ থেকে দেখা যায় সাইটটি ২০০৭-২০০৮ সময়ে তৈরি করা। সাধারণ ব্যবহারকারীদের স্বাস্থ্য সম্পর্কে এই ওয়েবসাইট থেকে কোনো তথ্য পাওয়ার সুযোগ নেই। সাইটের মূল পাতায় (হোমপেজ) বিভিন্ন পুরোনো অফিস আদেশ ও অনেক বছর আগের বিজ্ঞপ্তি (সার্কুলার) দেখা যাচ্ছে। হোমপেজের ডান দিকে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন নেওয়ার জন্য সুরক্ষা ওয়েবসাইটের ঠিকানা স্ক্রল আকারে দেখা যায়। বার্ষিক প্রতিবেদন অংশ থেকে জানা যায়, সাইটটির বিভিন্ন তথ্য ২০১৭ সালে সর্বশেষ হালনাগাদ করা হয়েছিল।
মন্ত্রণালয়ের একটি ওয়েব পোর্টালও পাওয়া যায়। বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়নের অংশ হিসেবে রয়েছে পোর্টালটি। এই পোর্টাল বেশ ধীরগতির। লোড হতে বেশ সময় লাগে। এর প্রথম পৃষ্ঠায় ‘স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ প্রদর্শন করতে এখানে ক্লিক করুন’, ‘স্বাস্থ্যশিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগ প্রদর্শন করতে এখানে ক্লিক করুন’ ও ‘পুরাতন ওয়েব সাইট দেখতে এখানে ক্লিক করুন’ নামে তিনটি বাটন দেখা যায়। এই সাইটে আর কোনো তথ্য দেখা যায় না। ই-স্বাস্থ্য নামে একটি মেন্যু দেখা গেলে সেখানে ক্লিক করলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ওয়েবপেজ খোলে। একই মন্ত্রণালয়ের দুটি ওয়েবসাইট কীভাবে থাকে বা প্রয়োজনীয়তা কী—সে ব্যাখ্যা কোথাও নেই।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অন্যান্য অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে প্রবেশ করলে কর্মকর্তাবৃন্দ, টিকাদান কার্যক্রম, গবেষণা, প্রকাশনাসহ স্বাস্থ্য কর্মসূচি ও অগ্রগতির সম্পর্কিত বিভিন্ন নথিপত্র দেখা যায়। স্বাস্থ্যসংক্রান্ত সরকারের কোনো সতর্কবার্তা আছে কি না কিংবা স্বাস্থ্যসংক্রান্ত দুর্যোগে কীভাবে নাগরিকেরা কী করবেন, সেই তথ্য ওয়েবসাইটে নেই।
স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের একটি ওয়েবসাইট রয়েছে। এতে বিভিন্ন সরকারি আদেশ দেখা যায়। এ ছাড়া সেবা বিভাগের বিভিন্ন প্রকল্পের তথ্য পাওয়া যায়। এ ছাড়া কর্মকর্তাদের অর্জিত ছুটিসহ বিদেশ ভ্রমণের অনুমতির বেশ কিছু নোটিশ দেখা যায়। স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগের ওয়েবসাইটে শুধু বিজ্ঞপ্তি আর নোটিশ দেখা যায়। ওয়েবসাইটটি বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়নের অধীনে পরিচালনা করা হচ্ছে।
অন্যান্য দেশের স্বাস্থ্যের ওয়েবসাইট কেমন?
কয়েকটি দেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট বিশ্লেষণ করা যাক। শ্রীলঙ্কার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে গেলে কোন রোগের জন্য কোন চিকিৎসা নেওয়া যাবে, তার বিস্তারিত পরামর্শ ও ঠিকানা দেখা যায়। ওয়েবসাইটে স্বাস্থ্যসংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য প্রকাশে বেশি মনোযোগ দেখা যায়। অন্যদিকে বিভিন্ন সরকারি নোটিশ ও কার্যক্রম আলাদা সাব-মেনুতে প্রদর্শন করা হয়েছে ওয়েবসাইটে।
ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে সরকারের বিভিন্ন কার্যক্রমকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে সাধারণ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। ভারতের একটি জাতীয় স্বাস্থ্য পোর্টাল আছে বলে জানা যায়, যদিও সেই পোর্টালে বাংলাদেশ থেকে প্রবেশ করা যাচ্ছে না।
পাকিস্তানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে, এই সাইটে সরকারের বিভিন্ন কার্যক্রম ও সাফল্যের চিত্রই বেশি প্রকাশ করতে দেখা যায়। যুক্তরাজ্য সরকারের ওয়েবসাইটের অধীনে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সাইটটি পরিচালনা করা হচ্ছে। সাইটে বিভিন্ন রোগ ও চিকিৎসা সম্পর্কে সরকারের বিভিন্ন তথ্য ও নথিপত্র প্রকাশ করতে দেখা যায় বেশি। সরকারের স্বাস্থ্যসংক্রান্ত বিভিন্ন বার্তা এই সাইটে গুরুত্ব পায়।
ব্যবহারকারীরা যা বলছেন
স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট কতটা কার্যকর, সে বিষয়ে একটি বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা সাব্বির আহমেদ জানান, ‘স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট সরকারের অন্য সব মন্ত্রণালয়ের মতোই দুর্বল। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে সরকারের সব আছে, শুধু স্বাস্থ্যসংক্রান্ত কোনো তথ্য নেই। আমার মেয়ের ডেঙ্গু জ্বর হয়েছিল ৩-৪ মাস আগে, কোন হাসপাতালে যাব, কী করব, সে রকম কোনো তথ্যই নেই মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে।’
ঢাকার মিরপুরের শিক্ষক মিতু তমা জানান, সরকারি ওয়েবসাইট হিসেবে এক জায়গা স্বাস্থ্যসচেতনতাবিষয়ক তথ্য থাকার কথা। কিন্তু ওয়েবসাইটে গেলে মন্ত্রণালয়ের কাগজপত্র ছাড়া আর কিছুই নেই। সাধারণ মানুষের কোনো কাজেই আসে না এসব নথিপত্র।
থাইল্যান্ডের মাহিদল বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি গবেষক হিসেবে যুক্ত আছেন নাদিম রেজা। তিনি বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট মানেই একসময় ছিল সরকারের কার্যক্রমগুলোকে প্রকাশ করা। আমাদের সরকারি ওয়েবসাইটগুলোতে সরকারের সাফল্যের ছবি ও কথাই বেশি দেখা যায়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের অধীনে যত প্রতিষ্ঠান আছে, সব ওয়েবসাইটই সাধারণ মানের। নাগরিকদের জন্য বিস্তারিত সেবা নেওয়ার তথ্য, স্বাস্থ্য তথ্যের বিস্তারিত নেই। পাবলিক হেলথ বা জনস্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন তথ্য বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে, এক জায়গায় সব তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না।’
মন্ত্রণালয়ের অধীনে স্বাস্থ্য বাতায়নের একটি ওয়েবসাইট রয়েছে। এর হেল্পলাইন ১৬২৬৩ নম্বরে কল করে আপনি স্বাস্থ্যসংক্রান্ত যেকোনো বিষয়ে সরাসরি ডাক্তারের পরামর্শ নিতে পারেন। এই হেল্পলাইন দিনরাত ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকে। এ ছাড়া স্বাস্থ্য বাতায়ন থেকে আপনি সরকারি হাসপাতাল, চিকিৎসকের তথ্য কিংবা স্বাস্থ্যসেবাবিষয়ক অন্যান্য তথ্য এবং ফোন নম্বর পেতে পারেন। অথচ মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটগুলো থেকে এসব সেবা পাওয়া যাচ্ছে না।