সাইবার আক্রমণের মূল শিকার তরুণীরা, বাড়ছে পর্নোগ্রাফি এবং নতুন ধরনের অপরাধ

সাইবার অপরাধের প্রবণতা নিয়ে আজ ঢাকায় প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন সিক্যাফসংগৃহীত

‘সিক্যাফ সাইবার অপরাধপ্রবণতা-২০২৪’ প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০২২ সালে ৩ দশমিক ৬২ শতাংশ অপরাধ নতুন ধরনের ছিল, যাকে ‘অন্যান্য’ শ্রেণিতে রাখা হয়। পরের বছর ২০২৩ সালের প্রায় দ্বিগুণ পরিমাণে বেড়ে এটি ৬ দশমিক ৯১ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। গুণিতক হারে বৃদ্ধির ধারায় এটি চলতি ২০২৪ সালের প্রথম ছয় মাসে ১১ দশমিক ৮৫ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। আজ শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে বাংলাদেশ সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশন (সিক্যাফ) প্রকাশিত ‘বাংলাদেশ সাইবার অপরাধপ্রবণতা-২০২৪’ প্রতিবেদনে এই তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরা হয়। প্রতিবেদন উপস্থাপনার পাশাপাশি ‘স্মার্ট বাংলাদেশ: উদীয়মান প্রযুক্তির চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক আলোচনা সভাও অনুষ্ঠিত হয়েছে।

সিক্যাফের প্রতিবেদন অনুযায়ী সাইবার আক্রমণের মূল শিকার মূলত ১৮ থেকে ৩০ বছর বয়সী তরুণেরা, যা মোট ভুক্তভোগীর ৭৮ দশমিক ৭৮ শতাংশ। তরুণ বয়সীদের মধ্যে মূল আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু নারী। সার্বিকভাবে আক্রান্তদের প্রায় ৬০ শতাংশই তরুণী। চলতি বছর ১৮ বছরের কম বয়সী শিশুদের সাইবার আক্রমণের শিকার হওয়ার হার ১৪ দশমিক ৮২ শতাংশ থেকে কমে হয়েছে ১৩ দশমিক ৬৫ শতাংশ। তবে মোবাইল আর্থিক সেবা (এমএফএস) হ্যাকিংয়ের ক্ষেত্রে শিশু ও তরুণেরা উভয়েই ৫০ শতাংশ অনুপাতে আক্রান্ত হয়েছেন।

অপরাধের ধরনের মধ্যে অনলাইন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম অ্যাকাউন্ট বেদখল ছিল শীর্ষে (২১ দশমিক ৬৫ শতাংশ)। ভুয়া অ্যাকাউন্ট থেকে অপপ্রচার ১৫ দশমিক ৪৬ শতাংশ ও ই-কমার্স প্রতারণা হয়েছে ১৪ দশমিক ৯৬ শতাংশ। ১১ দশমিক ৩৫ শতাংশ আক্রমণ ছিল পর্নোগ্রাফি-সংক্রান্ত। এ ছাড়া অনলাইনে হুমকি (১১ দশমিক ৮৫ শতাংশ), অনলাইনে বিকৃত ছবি প্রকাশ (৫ দশমিক ১৫ শতাংশ), মুঠোফোনে হুমকি (৩ দশমিক ১০ শতাংশ), এমএফএস হ্যাকিং (১ দশমিক ০৫ শতাংশ) এবং এটিএম কার্ড হ্যাকিং (শূন্য দশমিক ৫১ শতাংশ)-এর মতো অপরাধগুলোর বিস্তৃতি বেড়েছে।

সিক্যাফের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে পর্নোগ্রাফিতে ৮০ শতাংশের বেশি শিকার ছিলেন নারীরা। অন্যান্য সব আক্রমণও নারীদের প্রতি বেশি হয়েছে। কেবল অনলাইন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম আইডি বেদখল পুরুষদের ক্ষেত্রে বেশি হয়েছে।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ভুক্তভোগীদের ৭০ শতাংশই দেশের সাইবার আইন সম্পর্কে জানেন না। এই অসচেতনতা গত বছরের তুলনায় বেশি (প্রায় ৫৫ শতাংশ)। আইনের আশ্রয় নেওয়ার প্রবণতাও কমছে এ বছর। গত বছর ২০ দশমিক ৮৩ শতাংশ ভুক্তভোগী আইনি আশ্রয় নিয়েছিলেন, এ বছর এটি আরও কমে দাঁড়িয়েছে ১২ দশমিক ১০ শতাংশে। এদের মধ্যে ৮১ দশমিক ২৫ শতাংশ সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন। আইনি আশ্রয় নিয়ে ১২ দশমিক ৫০ শতাংশ ভুক্তভোগী সুফল পেয়েছেন। অর্থাৎ মোট ভুক্তভোগীর ২ শতাংশের কম আইনি সুফল পেয়েছেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে আইনি আশ্রয় নেওয়ার প্রক্রিয়া না জানা আইনি সাহায্য না চাওয়ার মূল কারণ (৩১ দশমিক ৯৫ শতাংশ) বলে উঠে এসেছে। বিচার না পাওয়া, সামাজিক মর্যাদা ক্ষুণ্ন হওয়া ও হয়রানির ভয়েও অনেকে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া থেকে নিবৃত্ত থাকেন।

ভুক্তভোগীদের ৪৭ দশমিক ৪২ শতাংশ সামাজিক মর্যাদাহানি ও ৪০ দশমিক ১৫ শতাংশ আর্থিক ক্ষতির শিকার হন। প্রায় সবাই মানসিক যন্ত্রণায় কাতর ছিলেন। স্বপ্রণোদিত ১৩২ জন ভুক্তভোগীর অভিজ্ঞতা থেকে এই গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়েছে বলে অনুষ্ঠানে জানানো হয়।  

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিক্যাফের উপদেষ্টা মো. মুশফিকুর রহমান।

গবেষণা প্রতিবেদন পেশ করেন সিক্যাফ গবেষণা দলের প্রধান ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশের সামাজিক বিজ্ঞান ও মানবিক বিভাগের জ্যেষ্ঠ প্রভাষক ওবায়দুল্লাহ আল মারজুক। সেমিনারে প্যানেল আলোচক হিসেবে ছিলেন বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) মহাপরিচালক (প্রকৌশল ও পরিচালন) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কাজী মুস্তাফিজুর রহমান, ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশের গ্লোবাল স্টাডিজ অ্যান্ড গভর্ন্যান্স (জিএসজি) বিভাগের অধ্যাপক ইমতিয়াজ এ. হুসেইন, বিশ্বব্যাংকের পরামর্শক ও প্রধান গবেষক হুসেইন সামাদ, বাংলাদেশ উইমেন ইন টেকনোলজির কোষাধ্যক্ষ ব্যারিস্টার নাজমুস সালিহিন এবং ঢাকা মহানগর পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগের (সিটিটিসি) অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার ইশতিয়াক আহমেদ।

সিক্যাফের সভাপতি কাজী মুস্তাফিজের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক নুরুন আশরাফী। অন্যদের মধ্যে সিক্যাফের সহসভাপতি এস এম ইমদাদুল হক এবং প্রশিক্ষণ ও গবেষণা সম্পাদক আবদুল মুনয়েমসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।