নতুন জরিপ: ৬৫ শতাংশ কর্মী সাইবার নিরাপত্তা নীতিমালা মানছেন না

দ্রুত কাজ শেষ করতে সাইবার নীতিমালা মানতে চান না কর্মীরাছবি: রয়টার্স

ডিজিটাল প্রযুক্তি ও অনলাইন ক্লাউডভিত্তিক কাজের ওপর নির্ভরশীলতা বাড়ছে। তবে কর্মক্ষেত্রে সাইবার নিরাপত্তা নীতিমালা লঙ্ঘন করার প্রবণতাও উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে। কর্মীদের অনেকেই উৎপাদনশীলতার লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা নীতিমালা অমান্য করছেন, যা অজান্তেই বড় ধরনের সাইবার ঝুঁকির পথ খুলে দিচ্ছে। সম্প্রতি সাইবারআর্ক পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, ৬৫ শতাংশ অফিস কর্মী স্বীকার করেছেন যে কাজের গতি ধরে রাখতে তাঁরা প্রায়ই সুরক্ষার বিধি লঙ্ঘন করেন। নিরাপত্তা ও উৎপাদনশীলতার এই টানাপোড়েন দ্রুতগতির ব্যবসায়িক পরিবেশে একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে।

সাইবার নিরাপত্তায় কর্মীদের অনীহা

আধুনিক প্রতিষ্ঠানগুলো সংবেদনশীল তথ্য সুরক্ষায় বহু স্তর নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ বা মাল্টি-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন থেকে শুরু করে রিয়েলটাইম থ্রেট ডিটেকশন পর্যন্ত উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে। কিন্তু কর্মীদের অসতর্ক আচরণ, যেমন বারবার একই পাসওয়ার্ড ব্যবহার, পরিচয় শেয়ার করা কিংবা ব্যক্তিগত যন্ত্র থেকে অফিসের অ্যাপ্লিকেশনে প্রবেশ করার ফলে সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে ঝুঁকি তৈরি করে, যা সর্বোচ্চ সুরক্ষাব্যবস্থাও রুখতে পারে না।

সাইবারআর্ক এ নিয়ে গবেষণা করেছে। তাদের গবেষণা ফলাফলের কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিসংখ্যান নিচে তুলে ধরা হলো:

পাসওয়ার্ড ব্যবহারের পুনরাবৃত্তি: ৪৯ শতাংশ কর্মী একাধিক অফিস অ্যাপ্লিকেশন বা সফটওয়্যারে একই পাসওয়ার্ড ব্যবহার করেন। ৩৬ শতাংশ কর্মী তাঁদের ব্যক্তিগত ও পেশাগত অ্যাকাউন্টেও একই পাসওয়ার্ড ব্যবহার করেন।

পাসওয়ার্ড শেয়ারিং: ৩০ শতাংশ কর্মী তাঁদের প্রাতিষ্ঠানিক পাসওয়ার্ড সহকর্মীদের সঙ্গে আদান-প্রদান করেন, যা মাল্টি-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন ব্যবস্থার কার্যকারিতা নষ্ট করে।

যন্ত্রে সুরক্ষার ঘাটতি: ৩৬ শতাংশ কর্মী তাঁদের ব্যক্তিগত যন্ত্রে নিরাপত্তা হালনাগাদ ইনস্টল করতে দেরি করেন। ফলে গুরুত্বপূর্ণ অফিস অ্যাপ্লিকেশন হ্যাকিংয়ের ঝুঁকিতে পড়ে।

এআই টুল ব্যবহারের ঝুঁকি: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) সফটওয়্যার ব্যবহারে ৭২ শতাংশ কর্মী অংশ নেন। কিন্তু ৩৮ শতাংশ কর্মী প্রতিষ্ঠান নির্ধারিত নীতিমালা লঙ্ঘন করে সংবেদনশীল তথ্য ব্যবহার করেন বা তাঁদের প্রতিষ্ঠানে এ ধরনের নীতিমালাই নেই বলে জানান।

ব্যক্তিগত যন্ত্র থেকে অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার: ৮০ শতাংশ কর্মী নিরাপত্তাহীন ব্যক্তিগত যন্ত্র ব্যবহার করে অফিস অ্যাপ্লিকেশনে প্রবেশ করেন।

গোপন তথ্য প্রকাশ: ৫২ শতাংশ কর্মী তাঁদের কর্মস্থলের গোপন তথ্য বাইরের মানুষের সঙ্গে শেয়ার করেন, যা ডেটা লিকের ঝুঁকি বাড়ায়।

কর্মীরা কেন নিরাপত্তাব্যবস্থা লঙ্ঘন করেন?

কর্মীদের নিরাপত্তা নীতিমালা লঙ্ঘনের বেশ কিছু কারণও গবেষণায় উঠে এসেছে। কর্মক্ষেত্রে কাজের চাপ ও সময়মতো কাজ শেষ করার তাগিদে অনেকেই তাৎক্ষণিক প্রয়োজনকে দীর্ঘমেয়াদি নিরাপত্তার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন।

বাড়তি সুবিধায় নজর: অনেক কর্মী নিরাপত্তার বিধিকে ঝামেলাপূর্ণ মনে করেন। দীর্ঘ ও জটিল পাসওয়ার্ড মনে রাখা, বারবার লগইন ও একাধিক ধাপে পরিচয় যাচাই তাঁদের কাজের গতির অন্তরায় বলে মনে হয়।

কাজের চাপ: দ্রুত কাজ শেষ করার তাগিদে অনেকেই মনে করেন, নিরাপত্তা নীতিমালা মানা বিলাসিতা ছাড়া কিছু নয়।

সচেতনতার অভাব: অনেক কর্মী বুঝতে পারেন না যে তাঁদের একটি ছোট ভুল কীভাবে পুরো প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তাব্যবস্থা হুমকির মুখে ফেলতে পারে। নিরাপত্তা বিষয়ে সঠিক প্রশিক্ষণের অভাবেই এই সমস্যা তৈরি হয়।

সমাধানের পথ কী?

‘কোনো সত্তার শক্তি তার দুর্বলতম অংশের শক্তির মতোই’ সাইবার নিরাপত্তার ক্ষেত্রে এই প্রবাদ প্রাসঙ্গিক। একটি দুর্বল পাসওয়ার্ড, একটি অনিরাপদ যন্ত্র বা একটি ফিশিং ই-মেইলে ক্লিক করা পুরো প্রতিষ্ঠানের সুরক্ষাব্যবস্থাকে ভেঙে দিতে পারে।

প্রতিষ্ঠানগুলোকে বুঝতে হবে, কর্মীরা একদিকে যেমন তাদের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ, তেমনি সবচেয়ে বড় ঝুঁকির উৎস। দ্রুত পরিবর্তনশীল সাইবার হুমকির এই যুগে ভালো সাইবার নিরাপত্তা কেবল উন্নত প্রযুক্তি কেনাতেই সীমাবদ্ধ নয়; বরং প্রত্যেক কর্মীর কাছে এই বার্তা পৌঁছাতে হবে যে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তাঁর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সাইবার নিরাপত্তার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ এখনো মানব আচরণ এবং এই সমস্যার সমাধানও রয়েছে সচেতনতা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে।

সূত্র: ফোর্বস ডটকম