ফেসবুকে কেনাকাটায় ‘ইনবক্সে আসেন’ বার্তায় ক্রেতা বাড়ে না কমে

ফেসবুকে পণ্যের দাম জানতে চাইলেই অনেক বিক্রেতা ‘চেক ইনবক্স’ বা ‘ইনবক্সে আসেন’ বার্তা পাঠানস্ক্রিনশট

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, বিশেষ করে ফেসবুক এখন জীবনযাপনের অনিবার্য অনুষঙ্গ। ফেসবুকের ‘মার্কেটপ্লেস’সহ বিভিন্ন পেজ থেকে সরাসরি পণ্য কেনার সুযোগ থাকায় নিয়মিত খাবার, পোশাক, গয়না-গাটিসহ দৈনন্দিন পণ্য কিনে থাকেন অনেকেই। ফেসবুক পণ্য বিকিকিনির দারুণ জায়গা হলেও পণ্যের দাম জানতে চেয়ে বিড়ম্বনার মুখোমুখি হয়ে থাকেন ক্রেতারা। কারণ, পণ্যের দাম জানতে চাইলেই অনেক বিক্রেতা তা না জানিয়ে ক্রেতাদের ‘চেক ইনবক্স’ বা ‘ইনবক্সে আসেন’ বার্তা পাঠিয়ে থাকেন। ফলে বিরক্ত হন অনেক।

অনলাইনে নিয়মিত কেনাকাটা করেন মিরপুরের সাবিয়া শারমিন। পছন্দের পণ্য কেনার সময় বারবার ইনবক্সে বার্তা আদান-প্রদানের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বিষয়টা খুবই বিরক্তিকর, ক্রেতা বুঝে একই পণ্যের ভিন্ন ভিন্ন দাম বলেন বিক্রেতারা। বিক্রেতারা পণ্য বিক্রির জন্য পণ্যের ছবি ও বর্ণনা দেয়, কিন্তু দাম জানায় না। আমার মনে হয় না যে ইনবক্সে আসলে বিক্রি বেশি হয়। বরং পোস্টের সঙ্গে পণ্যের দাম লিখে দিলে ইনবক্সে ক্রেতা এমনিতেই আসবে।’

আরও পড়ুন

বসুন্ধরার নাতাশা আলি বলেন, ‘ইলিশের দাম কমেছে, সুন্দর ছবি তুলে পোস্ট দিয়েছে। বর্ণনাও বেশ ভালো দিয়েছে। কিন্তু পুরো পোস্টে দাম খুঁজে পেলাম না। যদি বিক্রেতা পোস্টেই লিখে দিতেন যে ১ কেজির ইলিশের দাম এত, তবে ভালো হতো। কিন্তু যখন দাম জিজ্ঞেস করলাম, তখন বলে ইনবক্স দেখেন। দাম আমার সাধ্যের মধ্যে থাকলে আমিই পণ্যটি কেনার জন্য বিক্রেতাকে বার্তা পাঠাব। ফলে পণ্য কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে ইনবক্স দেখার বার্তা পেলে খুব বিরক্ত লাগে।’

বিউটি শপ বিডির উদ্যোক্তা খালিদ সাইফুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, ‘পণ্যের পোস্টে দাম লেখা থাকলে প্রকৃত ক্রেতারা এমনিতেই ইনবক্সে আসবেন অর্ডার দিতে। ইনবক্স পরীক্ষা করেন বা ইনবক্সে আসেন বার্তা দেখলে অনেকে বিরক্ত হওয়ার পাশাপাশি তাঁদের মনে বিক্রেতা ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের প্রতি সন্দেহ তৈরি হয়। আর তাই আমি পণ্যের প্রচারণার সময় সরাসরি দাম উল্লেখ করে দিই।’

আরও পড়ুন

দেশের ই-কর্মাস প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোহাম্মদ সাহাব উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘অনেক ক্ষেত্রে বিক্রেতারা নিজেদের পণ্যের দাম প্রতিযোগী প্রতিষ্ঠানগুলো জানতে না দেওয়ার জন্য এ ধরনের কাজ করে থাকেন। তবে ডিজিটাল কমার্স পরিচালনার নির্দেশিকা ২০২১ অনুযায়ী এটি করা যাবে না। নির্দেশিকার ৩.১.২ ধারার তথ্যমতে, ওয়েবসাইট, মার্কেটপ্লেস বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পণ্য ও সেবা ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য উপস্থাপনের ক্ষেত্রে পণ্য ও সেবাসংশ্লিষ্ট সব বিবরণ ও শর্তাবলি যেমন পণ্য ও মূল্য ফেরতের শর্তাবলি, পরিবর্তন, সরবরাহের সময়সীমা ইত্যাদি বিষয়ে সব শর্তাবলি সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে।’ উদ্যোক্তাদের মধ্যে এই নির্দেশনা বিষয়ে সচেতনতার অভাব রয়েছে।’

একাধিক এফ-কমার্স ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, পোস্টের দর্শকসংখ্যা বৃদ্ধির জন্যই মূলত ইনবক্সে আসার আমন্ত্রণ জানান অনেক বিক্রেতা। তবে এ কৌশলের কারণে  ক্রেতারা বিরক্ত হন, কেনার আগ্রহও হারিয়ে ফেলেন। আবার নামে বেনামে অনেক ফেসবুক পেজ এ কৌশলের মাধ্যমে ক্রেতাদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে পণ্য পাঠায় না। এমনকি স্থায়ীভাবে ফেসবুক পেজও বন্ধ করে দেয়।