রক্ত পরীক্ষায় এআইয়ের নতুন যুগ, ক্যানসার ও নিউমোনিয়া শনাক্তে অগ্রগতি

ক্যানসার শনাক্ত করতে ড্যানিয়েল হেলার এআইকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছেনছবি: মেমোরিয়াল স্লোন ক্যাটারিং ক্যানসার সেন্টার।

সম্প্রতি রক্ত পরীক্ষার এমন একটি পদ্ধতি উদ্ভাবিত হয়েছে, যা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) সাহায্যে ডিম্বাশয়ের ক্যানসার, নিউমোনিয়ার মতো প্রাণঘাতী রোগগুলো খুব প্রাথমিক পর্যায়েই শনাক্ত করতে সক্ষম। নিউইয়র্কের মেমোরিয়াল স্লোন ক্যাটারিং ক্যানসার সেন্টারের বায়োমেডিকেল প্রকৌশলী ড্যানিয়েল হেলারের দল একধরনের ন্যানোটিউব প্রযুক্তি ব্যবহার করে রক্ত পরীক্ষার এই পদ্ধতি তৈরি করেছে। ন্যানোটিউব হলো কার্বনের এমন ক্ষুদ্র টিউব, যা মানুষের চুলের ব্যাসের প্রায় ৫০ হাজার গুণ ছোট।

২০ বছর আগে বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেন যে ন্যানোটিউব থেকে ফ্লুরোসেন্ট আলো নির্গত হতে পারে। সাম্প্রতিক সময়ে গবেষকেরা ন্যানোটিউবের গুণাগুণ পরিবর্তন করে রক্তে থাকা প্রায় সবকিছুর প্রতিক্রিয়া নির্ণয়ে সক্ষম হয়েছেন। রক্তে ন্যানোটিউব স্থাপন করা হলে, কোনো উপাদান আটকে গেলে নির্দিষ্ট আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য নির্গত হয়। তবে এই সংকেতগুলো এতই সূক্ষ্ম যে সেগুলো বুঝতে মানুষ ব্যর্থ। ড. হেলারের মতে, এটি অনেকটা আঙুলের ছাপ শনাক্ত করার মতো, যেখানে অণু এবং সংবেদকের সংবেদনশীলতার প্যাটার্ন এত সূক্ষ্ম যে শুধু কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা তা বুঝতে পারে। ন্যানোটিউবের তথ্য বিশ্লেষণ করার জন্য একটি মেশিন লার্নিং অ্যালগরিদম ব্যবহার করা হয়। এই অ্যালগরিদমকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় কোন নমুনাগুলো ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীর এবং কোনগুলো নয়।

ওভারিয়ান বা ডিম্বাশয়ের ক্যানসারকে ‘দুর্লভ, তহবিল-সংকটে পিছিয়ে থাকা এবং প্রাণঘাতী’ বলে উল্লেখ করেছেন নিউইয়র্কভিত্তিক দাতব্য সংস্থা ওভারিয়ান ক্যানসার রিসার্চ অ্যালায়েন্সের (ওসিআরএ) প্রধান অড্রা মোরান। তাঁর মতে, অন্যান্য ক্যানসারের মতোই এটি যত দ্রুত শনাক্ত করা যায়, ততই ভালো। ওভারিয়ান ক্যানসার সাধারণত ফ্যালোপিয়ান টিউব থেকে শুরু হয়। ফলে এটি দ্রুত শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি থাকে। মিস মোরানের ভাষায়, লক্ষণ প্রকাশের পাঁচ বছর আগেই যদি ডিম্বাশয়ের ক্যানসার শনাক্ত করা সম্ভব হয়, তবে মৃত্যুহার উল্লেখযোগ্যভাবে কমানো যাবে।

ওভারিয়ান ক্যানসার একটি বিরল রোগ হওয়ায় অ্যালগরিদম প্রশিক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্যের সংকট রয়েছে। গবেষকেরা প্রাথমিকভাবে ক্যানসার রোগীদের শতাধিক নমুনার ওপর ভিত্তি করে এআই প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। এরপরও এই পদ্ধতি ভালো ফলাফল দিয়েছে।

ড. হেলারের মতে, ‘আমাদের লক্ষ্য হলো এমন একটি টুল তৈরি করা, যা গাইনোকোলজিক্যাল রোগগুলোর ক্ষেত্রে ক্যানসার শনাক্তে ডাক্তারদের সহায়তা করবে।’ তিন থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে এই প্রযুক্তি সাধারণ ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত হতে পারে বলে তিনি আশাবাদী।

ক্যানসার শনাক্তের পাশাপাশি নিউমোনিয়ার মতো রোগ নির্ণয়েও এআই ব্যবহারে গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য এসেছে। ক্যালিফোর্নিয়াভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ক্যারিয়াস, এআই ব্যবহার করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই নিউমোনিয়ার সঠিক জীবাণু শনাক্ত করা সম্ভব। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী অ্যালেক ফোর্ড জানান, আগে নিউমোনিয়া রোগীর সংক্রমণ নির্ণয়ে ১৫ থেকে ২০টি পরীক্ষা করতে হতো, যার খরচ প্রায় ২০ হাজার ডলার। ক্যারিয়াসের প্রযুক্তি এই প্রক্রিয়া অনেক সহজ এবং সাশ্রয়ী করেছে।

অ্যাস্ট্রাজেনেকার গবেষক ড. স্লাভে পেট্রভস্কি একটি এআই প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেছেন, যা ১২০টি রোগ শনাক্ত করতে সক্ষম। ড. হেলারের মতো গবেষকেরাও একই ধরনের প্যাটার্ন-ম্যাচিং প্রযুক্তি ব্যবহার করছেন। তবে রোগীর তথ্যপ্রাপ্তির অভাব এখনো একটি বড় বাধা। অবশ্য ওভারিয়ান ক্যানসার রিসার্চ অ্যালায়েন্সের (ওসিআরএ) রোগীদের ইলেকট্রনিক মেডিকেল রেকর্ডের একটি বৃহৎ রেজিস্ট্রি তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে, যাতে এআই প্রশিক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় ডেটা সরবরাহ করা সম্ভব হয়। ওসিআরএ প্রধান অড্রা মোরান বলেন, এখনো আমরা এআই এর শুরুর পর্যায়ে আছি। এটি অনেকটা একধরনের ‘ওয়াইল্ড ওয়েস্ট’।

সূত্র: বিবিসি