মুঠোফোনে নান্দনিক ছবি
যার হাতে স্মার্টফোন, সে–ই ফটোগ্রাফার। এখন এমনটা বলাই যায়।
ডিজিটাল প্রযুক্তির যুগে এবং দামি স্মার্টফোনের সুবাদে আমরা সবাই ফটোগ্রাফার। তাতে দোষের কিছু নেই। কিন্তু আমি স্মার্টফোনে ছবি তুলেই যাচ্ছি, সেটা ছবি হচ্ছে কি না বা আলো-ছায়া, কম্পোজিশন, ফ্রেমিং, নন্দনতত্ত্ব—এগুলো খেয়াল করছি কি না?
তবে আপনাকে দিয়ে সম্ভব। যদি আপনি ওপরের বিষয়গুলো একটু খেয়াল করে, ছবি কেন তুলছি সে প্রশ্নের উত্তর যদি আপনার জানা থাকে, তবে নিশ্চয়ই আপনিও একজন নানন্দিক ফোন ক্যামেরার আলোকচিত্রী বা ‘মুঠোফোনোগ্রাফার’ হয়ে যাবেন!
আমার দীর্ঘদিন হলো রমনা পার্কে প্রাতর্ভ্রমণে যাই। রমনা পার্কে সকালে আলো–ছায়া, আলোর লুকোচুরি, শিশিরের ঘ্রাণ আমাকে টানে, খালি চোখে আমার প্রাণ জুড়ায়।
বছরখানেক হয় আমি আমার স্মার্টফোনটি সঙ্গে করে নিয়ে যাই, প্রথম দিন গাছের আলো–ছায়ার একটি ছবি তুলে ফোনের পর্দায় দেখে নিজেই মুগ্ধ হই! একি আমাদের শত বছরের পুরোনো রমনা রূপ? আলো একটু গাঢ় করে ফেসবুকে পোস্ট নেই! বন্ধুদের প্রশংসায় আমার উৎসাহ বাড়ে। তারপর থেকে আমি অবিরাম স্মার্টফোনে মোবাইল ফটোগ্রাফি করেই যাচ্ছি।
আমার মোবাইল ফটোগ্রাফি দেখে অনেকেই মন্তব্য করেন যে সত্যিই কি এটা আমাদের রমনা পার্ক?
দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া—মানুষের প্রশংসা পাই। আমি তৃপ্তির হাসি হাসি। আর বলি, জি ভাই, আমাদের সে ঢাকার ‘অক্সিজেন জোন’ রমনাই এটা।
আপনিও পারবেন শুধু আপনার অন্তর্দৃষ্টি বা একটু নন্দনতত্ত্বে মিশিয়ে ব্যবহার যুক্ত করে চেষ্টা করুন। আপনিও হয়ে যাবেন স্মার্ট যুগের স্মার্ট ফটোগ্রাফার।
স্মার্টফোনে ফটোগ্রাফি নিয়ে একটু কারিগরি দিক বা আমার কিছু অভিজ্ঞতার কথা বলি—এখন ছবি তোলার একটি সহজ মাধ্যম স্মার্টফোন ক্যামেরা। সবার কাছেই এটা পৌঁছে গেছে। আপনি ইন্টারনেটে ইউটিউব ঘাঁটলেই অনেক অজানা বিষয়ও জানতে পারবেন।
আমি যখন রমনায় আলো–ছায়ার ছবি তুলি, তখন আমি সূর্যের মুখোমুখি থাকি ঠিকই, কিন্তু কৌশলে গাছের আড়ালে বা অন্য উপায়ে সূর্যের আলো সরাসরি ফোনে পড়তে দিই না।
ফ্রেমিং বা কম্পোজিশন আমার কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। নিখুঁত ফ্রেমিং বা কম্পোজিশনের দিকে নজর রাখতে হবে। আর তা আপনার নান্দনিক বোধ দিয়ে।
আপনার মূল্যবান স্মার্টফোনে জুম রয়েছে। কিন্তু খুব প্রয়োজন না হলে ভুলেও জুমে হাত দেবেন না। কারণ, মোবাইল জুম আপনার ভালো ছবিকে নষ্ট করে দেবে।
ছবি তুলতে আলোর ব্যবহার গুরুত্বপূর্ণ। বেশ আলোতেও ভালো ছবি উঠবে। আবার প্রায় অন্ধকার অর্থাৎ কম আলোতেও ভালো ছবি উঠবে। সে ক্ষেত্রে আপনার হাতের স্মার্টফোনটিতেই এডিট অপশন আছে, তা ব্যবহার করে কম সুন্দর ছবিকেই চমৎকার ছবিতে রূপান্তর করা যায়। তবে এডিট যত কম করবেন, ছবি তত নিখুঁত হবে। স্যাচুরেশন খুব বাড়াবেন না, তাতে সুন্দর ছবিটি অতিরঞ্জিত মনে হবে।
স্মার্টফোনের ক্যামেরায় একটি বিল্ট–ইন ফ্ল্যাশ আছে। খুব প্রয়োজন না হলে ওই ফ্ল্যাশেও হাত দেবেন না। আমি কখনোই রমনা পার্কে ফ্ল্যাশ ব্যবহার করিনি। ভালো ছবি পেতে হলে ফ্ল্যাশ লাইট এড়িয়ে চলুন।
রমনায় এখন অনেকে শুরু করেছেন মোবাইল ফটোগ্রাফি। তাঁদের মধ্যে দু–একজন এখন অসাধারণ মোবাইল ফটোগ্রাফিও করছেন। এখন আমি তাঁদের মোবাইল ফটোগ্রাফির দারুণ ভক্ত হয়ে গেছি।
আপনিও পারবেন তাঁদের একজন হতে, শুধু আপনার দরকার সাহস করে জড়িত করা এবং ছবি তোলায়—মুখ্য বিষয়গুলো যেমন ডকুমেন্টেশন, ফ্রেমিং বা কম্পোজিশন এবং নন্দনতত্ত্বের সঠিক ব্যবহার।
লেখক: ফটোগ্রাফি চর্চার প্রধান নির্বাহী ও আলোকচিত্রী।