আপওয়ার্কে পরিশ্রম করে সফল ফ্রিল্যান্সার আমিনুর
অনলাইনে ফ্রিল্যান্সারদের মার্কেটপ্লেস আপওয়ার্কে বেশ কিছু রদবদল হয়েছে। এখন আর চাইলেই এ সাইটে সহজে কাজের জন্য আবেদন করা যায় না। বাংলাদেশের ফ্রিল্যান্সারদের জন্য কাজ করা এখন অনেক কঠিন হয়ে গেছে। আপওয়ার্ক প্ল্যাটফর্মের অভিজ্ঞ ওয়েব ডেভেলপার ফ্রিল্যান্সার আমিনুর রহমানের মতে, বর্তমান প্রেক্ষাপটে নতুন ফ্রিল্যান্সাদের জন্য যথেষ্ট দক্ষ না হয়ে কাজ করা কঠিন হয়ে গেছে। তবে তাঁর মতো পরিশ্রম করলে এখনো সফল হওয়া সম্ভব।
আমিনুর রহমানের বাড়ি হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার নয়াপাড়ায়। তিনি ২০০৯ সালের শেষের দিকে সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটারবিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগ থেকে পাস করেন। ২০১০ সালের জুলাই মাসে ওডেস্কে (বর্তমান নাম আপওয়ার্ক) অ্যাকাউন্ট খোলেন। প্রোফাইল তৈরির পর বিভিন্ন বিষয়ে স্কিল টেস্ট পরীক্ষা দেন। তিনি ছিলেন ডেস্কটপ অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপার। সি শার্প (C#) ল্যাংগুয়েজ দিয়ে ডক্টর প্রেসক্রিপশন, এসএমএসে টিকিট কাটার সফটওয়্যার ইত্যাদি তৈরি করেন। ওডেস্কে কাজ করার জন্য ডেস্কটপ অ্যাপ্লিকেশন থেকে ওয়েব অ্যাপ্লিকেশনের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করেন। কারণ, তিনি দেখেন, ওডেস্কে ওয়েবসাইটের কাজ বেশি। পরে ওয়ার্ডপ্রেস শেখেন। এরপর থেকে ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস ওডেস্কে দক্ষতার সঙ্গে কাজ করছেন। তিনি ফ্রিল্যান্সিং বিষয়ে বেশ কয়েকটি বইও লিখেছেন।
শুরুতে তিনি ঘণ্টায় এক ডলার রেটে কাজ শুরু করলেও এখন তিনি ঘণ্টায় ৫০ ডলার রেটে কাজ করেন। বর্তমানে তিনি মাসে প্রায় পাঁচ হাজার ডলার আয় করছেন। এবার আপওয়ার্ক বাংলাদেশ ‘বেস্ট ফ্রিল্যান্সার ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড-২০১৯’ পেয়েছেন।
আমিনুর বলেন, ‘আমি ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস ওডেস্কে কাজের সময় অনেক উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে গেছি। কিন্তু হতাশ হইনি। এখন যাঁরা এ পেশায় আসতে চান, তাঁদের মনস্থির করে আসা উচিত।’
নতুন ফ্রিল্যান্সারদের উদ্দেশে আমিনুর বলেন, অনেকে বলে, ফ্রিল্যান্সিং এখন অনেক কঠিন। কথাটি অনেকটাই সত্য। আগে মার্কেটপ্লেসগুলোয় প্রতিযোগিতা অনেক কম ছিল। তাই মোটামুটি মানের কাজ শিখেই মার্কেটপ্লেসে কাজ শুরু করা যেত। কিন্তু এখন প্রতিযোগিতা অনেক বেশি। দক্ষ হয়েই কাজ শুরু করতে হয়। স্কিল ডেভেলপের জন্য ইউটিউবের কোনো বিকল্প নেই। অনেকে দেখা যায় ফ্রিল্যান্সিংকে পার্টটাইম হিসেবে নেয় বা নিতে চায়। এখন অনেক প্রতিযোগী বলে সে সুযোগ কম।
আমিনুর বলেন, বিশ্বে সবচেয়ে জনপ্রিয় অনলাইন কাজের মার্কেটপ্লেস আপওয়ার্কে এখন আর বাংলাদেশ থেকে সহজে অ্যাকাউন্ট খুলতে দিচ্ছে না। অ্যাকাউন্ট খোলা যায় কিন্তু অ্যাকাউন্ট খোলার পর প্রোফাইল সাবমিট করতে হয় রিভিউয়ের জন্য। আপওয়ার্ক প্রোফাইল রিভিউ করে অনুমোদন দিলে তারপর থেকে জবে আবেদন করা যায়।
বাংলাদেশ থেকে অ্যাকাউন্ট খুলে রিভিউয়ের জন্য প্রোফাইল সাবমিট করলে এখন আপওয়ার্কে আর সহজে অনুমোদন দেয় না। একবার বলে, এই ক্যাটাগরিতে ফ্রিল্যান্সার বেশি হয়ে গেছে। নতুন ফ্রিল্যান্সার আপাতত আর লাগবে না। আবার বলে, প্রোফাইল ভালোভাবে তৈরি করা হয়নি। এভাবে ইত্যাদি বিভিন্ন অজুহাতে তা বাতিল করে দেওয়া হয়। তবে এটাও ঠিক, বাংলাদেশিরা মিস ইউজও কম করে না।
এখন আপওয়ার্ক আবার নতুন করে পেইড কানেক্ট সিস্টেম চালু করেছে। অর্থাৎ, আগে জবে আবেদন করতে ফ্রিল্যান্সারদের কোনো পে করতে হতো না। ফ্রিল্যান্সাররা প্রতি মাসে ৩০টি জবে বিনা মূল্যে আবেদন করতে পারত। কিন্তু এখন থেকে ফ্রিল্যান্সাররা আর বিনা মূল্যে জবে আবেদন করতে পারবে না। একটি জবে আবেদন করতে কমপক্ষে শূন্য দশমিক ১৫ ডলার খরচ হবে। অর্থাৎ বলা যায়, নতুন ফ্রিল্যান্সারদের জন্য আপওয়ার্কে অ্যাকাউন্ট খুলে কাজ করা অনেকটা কঠিন হয়ে গেছে। আর আপওয়ার্ক যেহেতু একটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, তাই তারা সর্বোচ্চ লাভের চেষ্টা করবে—এটাই স্বাভাবিক।
নতুন ফ্রিল্যান্সাররা এখন ফাইবার, পিপল-পার-আওয়ার, গুরু ইত্যাদি মার্কেটপ্লেসে অ্যাকাউন্ট খুলে কাজ করতে পারে। আর এখন যেহেতু কমপিটিশনের যুগ, তাই দিন দিন কমপিটিশন বাড়বে—এটাই স্বাভাবিক। কমপিটিশনের বাজারে টিকে থাকতে হলে নিজেকে সব সময় আপডেট রাখতে হবে।
অনেকেই বলেন, কাজ করতে গেলে অ্যাকাউন্ট বন্ধ (সাসপেন্ড) হয়ে যায়। কিন্তু মার্কেটপ্লেসের নিয়মকানুন মেনে চললে অ্যাকাউন্ট সাসপেন্ড হয় না। অনেকে দেখা যায় নিয়মকানুন না জেনেই কাজ শুরু করে দিতে। পরে যখন কোনো নিয়মভঙ্গ হয়, তখন অ্যাকাউন্ট সাসপেন্ড করে দেয়। তাই আগে মার্কেটপ্লেসের সব নিয়মকানুন জেনে তারপর কাজ শুরু করা উচিত। মার্কেটপ্লেসসংক্রান্ত কোনো সমস্যায় পড়লে তাদের কাস্টমার সাপোর্টে কথা বলুন। স্কিল রিলেটেড বা অন্য কোনো সমস্যায় পড়লে গুগল/ইউটিউবে সার্চ করুন। একজন এক্সপার্ট ফ্রিল্যান্সার আর একজন নতুন ফ্রিল্যান্সারের মধ্যে পার্থক্য হলো এক্সপার্ট ফ্রিল্যান্সার যখন কোনো সমস্যা পড়ে, তখনই গুগল/ইউটিউবে সার্চ করে। আপনাকে এ বিষয়ে দক্ষ হতে হবে।