শেষ হচ্ছে কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা অধ্যায়
বন্ধ হয়ে যাচ্ছে ফেসবুকে তথ্য কেলেঙ্কারির কেন্দ্রে থাকা নির্বাচনী পরামর্শক প্রতিষ্ঠান কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা। প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় ফেসবুকের তথ্য হাতিয়ে ট্রাম্পের পক্ষে কাজের অভিযোগ রয়েছে।
গত মার্চ মাসে ‘ফেসবুক কেলেঙ্কারির’ ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর থেকেই চাপে পড়েছিল যুক্তরাজ্যভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটি। বিশ্বজুড়ে কঠোর সমালোচনা ছাড়াও কেমব্রিজ অ্যানালিটিকার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে কয়েকটি দেশ। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল বুধবার কর্তৃপক্ষ এর কার্যক্রম বন্ধ এবং যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে দেউলিয়া ঘোষণা করেছে।
কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা বলেছে, গত মার্চের ঘটনার পর তাদের গ্রাহক শেষ হয়ে গেছে। ব্যবসা চালানো আর ফলপ্রসূ হবে না।
ফেসবুক থেকে অনৈতিকভাবে ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহের অভিযোগ উঠেছিল প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে। চারদিকে নানা সমালোচনায় গ্রাহক নেই। তাই প্রতিষ্ঠানটির এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আর ব্যবসা চালাবে না তারা। অবশ্য ফেসবুকের তথ্য অনৈতিকভাবে সংগ্রহের অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে প্রতিষ্ঠানটি।
ফেসবুকের তথ্য সংগ্রহের বিষয়ে যুক্তি দিয়ে কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা বলেছে, তারা আইনি বাধ্যবাধকতা মেনেই ফেসবুক থেকে তথ্য নিয়েছে। তাদের ব্যবসাপদ্ধতি রাজনৈতিক ও বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে যেসব অনলাইন বিজ্ঞাপনের রীতি প্রচলিত আছে, সে মানেরই ছিল।
যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যমে প্রথম এ বিতর্কের সূচনা হয়। দ্য নিউইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে আমেরিকান নাগরিকদের ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রভাব রেখেছিল তথ্য বিশ্লেষণ করার প্রতিষ্ঠান কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা। এ ক্ষেত্রে ফেসবুকের কোটি কোটি ব্যবহারকারীর প্রোফাইল থেকে পাওয়া তথ্য ব্যবহার করা হয়েছিল।
কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানের অধ্যাপক আলেকজান্ডার কোগানের তৈরি অ্যাপ্লিকেশন ‘দিসইজইওরডিজিটাললাইফ’ ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছিল ফেসবুক। এতে ব্যবহারকারীদের তথ্য জোগাড় করার সুযোগ পান ওই অধ্যাপক। ওই অ্যাপ মূলত একটি ব্যক্তিত্ববিষয়ক পরীক্ষা চালাত। কিন্তু যেসব ফেসবুক ব্যবহারকারী ওই অ্যাপ ডাউনলোড করতেন, তাঁরা আলেকজান্ডার কোগানকে নিজেদের বিভিন্ন তথ্য নেওয়ার অনুমতিও দিতেন। এতে ব্যবহারকারীদের অবস্থান, তাঁদের বন্ধু ও যেসব পোস্টে তাঁরা ‘লাইক’ দিতেন, সে সম্পর্কে জানতে পারতেন মনোবিজ্ঞানের ওই অধ্যাপক।
ওই সময় ফেসবুকের নিয়মনীতির মধ্যেও এ কার্যক্রম অনুমোদিত ছিল। ব্যবহারকারীদের ওই তথ্যাবলি কোগান কেমব্রিজ অ্যানালিটিকার কাছে সরবরাহ করেন। ফেসবুকের নীতিমালা ভঙ্গ করেই এ কাজ করেন তিনি। ফেসবুকের পাঁচ কোটির বেশি ব্যবহারকারীর তথ্য এভাবে বেহাত হয়ে যায়। ওই সময় কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা ভোটারদের প্রভাবিত করা যাবে, এমন প্রযুক্তি উদ্ভাবনের চেষ্টা করছিল। তবে ফেসবুক কর্তৃপক্ষের দাবি, ২০১৫ সালে কেমব্রিজ অ্যানালিটিকাকে ওই সব তথ্য মুছে ফেলতে বলেছিল তারা।
গতকাল বুধবার এক বিবৃতিতে ফেসবুক বলেছে, কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা বন্ধ হয়ে যাওয়া মানে ঠিক কী ঘটেছিল, সে তদন্ত বন্ধ হয়ে যাওয়া নয়। তারা এ ঘটনার সবকিছু জানতে তদন্ত চালিয়ে যাবে।
কেমব্রিজ অ্যানালিটিকার ওই কেলেঙ্কারির ঘটনায় ৮ কোটি ৭০ লাখ ফেসবুক ব্যবহারকারীর তথ্য বেহাত হয়। এ ঘটনায় ফেসবুকের প্রাইভেসি নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে।
বিশ্বজুড়ে ফেসবুক ও কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা ঘিরে তদন্তের দাবি ওঠে। যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে হাজির হতে হয় ফেসবুকের প্রধান নির্বাহী মার্ক জাকারবার্গকে। এ ঘটনা জানাজানি হওয়ার পরপরই কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা তাদের নির্বাহী আলেকজান্ডার নিক্সকে বরখাস্ত করে। রাজনীতিবিদদের ফাঁসাতে ঘুষ দেওয়া, যৌনকর্মী ব্যবহারসহ কেমব্রিজ অ্যানালিটিকার গোপন কৌশল ছদ্মবেশী সাংবাদিকদের কাছে প্রকাশ করেন তিনি। পরে সে তথ্য জনসমক্ষে চলে আসে। কেমব্রিজ অ্যানালিটিকার পক্ষ থেকে অবশ্য এসব অভিযোগ অস্বীকার করা হয়।