গুগল থেকে ক্রোম ব্রাউজারকে আলাদা করতে চায় মার্কিন সরকার
যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ আনুষ্ঠানিকভাবে গুগলের আংশিক বিভক্তির প্রস্তাব দিয়েছে। এ প্রস্তাবে ক্রোম ব্রাউজারকে আলাদা প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিক্রি করতে গুগলকে বাধ্য করার কথা বলা হয়েছে। গুগল তার সার্চ ইঞ্জিন ব্যবসার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের অ্যান্টি ট্রাস্ট আইন লঙ্ঘন করেছে বলে এ প্রস্তাব দিয়েছে বিচার বিভাগ। যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ ও বেশ কিছু অঙ্গরাজ্যের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে অ্যান্টি ট্রাস্ট আইনের মাধ্যমে এমন শাস্তির মুখোমুখি হতে পারে গুগল। বিচার বিভাগের প্রস্তাব অনুমোদিত হলে গুগল একই সঙ্গে বিশাল অঙ্কের জরিমানার মুখোমুখি হবে। এ ছাড়া গুগলের অনেক পণ্য ও সেবার ওপর চাপ তৈরি হবে। গুগল নতুন প্রস্তাবের বিরুদ্ধে আপিল করবে বলে জানা গেছে।
দীর্ঘদিন ধরে গুগল ক্রোম ব্রাউজারকে ডিফল্ট সার্চ ইঞ্জিন হিসেবে ব্যবহার করছে। এতে অন্য সব সার্চ ইঞ্জিন প্রতিযোগিতার মুখে পড়ে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ অভিযোগের ভিত্তিতেই গুগলের একচেটিয়া ব্যবসা বন্ধ করতে চান আদালত। যুক্তরাষ্ট্রের এক সরকারি আইনজীবী বলেন, নতুন প্রস্তাবের মাধ্যমে বাজারের প্রতিযোগিতার ব্যবধান বন্ধ করা যাবে। গুগলকে বিশেষ সুবিধা নেওয়া থেকে আটকানো যাবে। অ্যাপল, স্যামসাং ও অন্যান্য প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে গুগলের বহু বছর ধরে যেসব চুক্তি করেছে, সেসব একচেটিয়া চুক্তি বাতিল ও নিষিদ্ধ করতে চাচ্ছেন অভিযোগকারীরা। গুগলকে আগামী এক দশকের মধ্যে অন্য সব প্রতিদ্বন্দ্বী সার্চ ইঞ্জিনের সঙ্গে অনুসন্ধান ফলাফল ভাগাভাগির জন্যও চাপ দিচ্ছেন সরকারি কর্মকর্তারা। এ পদক্ষেপ কার্যকর হলে বিকল্প সার্চ ইঞ্জিন ব্যবহারের সমান সুযোগ বাড়বে।
অভিযোগকারী আইনজীবীরা আদালতকে গুগলকে নিয়ন্ত্রণের জন্য আরও কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করার আহ্বান জানিয়েছেন। সার্চসংক্রান্ত ভবিষ্যতের সম্ভাব্য ক্ষতি রোধ করতে এসব বিধিনিষেধ গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন তাঁরা। গুগল যেসব ওয়েবসাইট থেকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসংক্রান্ত প্রশিক্ষণের জন্য তথ্য সংগ্রহ করে, তার নিয়ন্ত্রণ করার কথা বলা হচ্ছে। গত বছর এ মামলায় সাক্ষ্য দেন মাইক্রোসফটের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সত্য নাদেলা। গুগল এআই মডেলকে প্রশিক্ষণের জন্য ক্রোম থেকে বিভিন্ন তথ্য প্রতিদিন ব্যবহার করছে। তখন বিষয়টিকে তিনি এআইয়ে জন্য এমন আচরণ দুঃস্বপ্নের ভবিষ্যৎ তৈরি করছে বলে মন্তব্য করেন। মাইক্রোসফট তার নিজস্ব সার্চ ইঞ্জিন বিং ব্যবহার করে গুগলের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। ২০২০ সাল থেকে চলছে গুগলের এই অনুসন্ধান–বিষয়ক মামলা। মামলার অভিযোগে আরও বলা হয়, গুগল অন্য সব সার্চ ইঞ্জিনের মধ্যে বিং ও ডাকডাকগো সার্চকে আটকাতে চায়। গুগলের কারণে সার্চ ইঞ্জিন দুনিয়ায় কম উদ্ভাবন হচ্ছে।
অভিযোগের শুনানির সময় অ্যাপল, মাইক্রোসফট, ভেরিজনসহ প্রযুক্তি খাতসংশ্লিষ্ট অনেক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের মতামত নেওয়া হয়। আদালত গুগলের আচরণের কারণে সার্চ ইঞ্জিনের ক্ষেত্রে অন্যরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কি না, তা পরীক্ষা করেন। দীর্ঘদিনের বিশ্লেষণে জানা যাচ্ছে, গুগল শেরম্যান আইনের ২ নম্বর ধারা লঙ্ঘন করেছে। কোনো প্রতিষ্ঠানের একচেটিয়া আচরণ বন্ধ করতে এই আইন ব্যবহৃত হয়। বিচারক মেহতা মতামতে লিখেছেন, গুগলের আচরণ একচেটিয়াবাদী। গুগল বাজারে একচেটিয়া বজায় রাখার জন্য কাজ করছে।
আরও কয়েক মাসের তথ্য অনুসন্ধানপ্রক্রিয়া শেষ করে শুনানি চলতে থাকবে। আশা করা হচ্ছে, ২০২৫ সালের পর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ গুগল সার্চ ইঞ্জিনকে অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল অপারেটিং সিস্টেম ও অ্যাপ স্টোর থেকে আলাদা করার জন্য আহ্বান জানিয়েছে। এর আগেও এমন ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রে দেখা যায়। ১৯৯০ দশকে মাইক্রোসফট তার ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার ব্রাউজারকে উইন্ডোজ কম্পিউটারে সঙ্গে বাধ্যতামূলক ব্যবহার করার চেষ্টা করে। তখন মাইক্রোসফটের এমন ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়। গুগল বা মজিলাসহ আরও বড় প্রতিষ্ঠানের উত্থান সেই নিষিদ্ধ করার কারণে বিকশিত হয়। সেই সময় মার্কিন অ্যান্টি ট্রাস্ট কর্মকর্তারা মাইক্রোসফটকে অভিযুক্ত করেন।
সূত্র: সিএনএন