ইলন মাস্কের স্টারলিংক স্যাটেলাইট কি বায়ুমণ্ডলের ওজোনস্তরের ক্ষতি করছে
পৃথিবীর নিম্ন কক্ষপথে স্যাটেলাইট বা কৃত্রিম উপগ্রহ পাঠানোর মাধ্যমে সারা বিশ্বে মোবাইল ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট-সেবা দিয়ে থাকে স্টারলিংক। তবে ইলন মাস্কের মালিকানাধীন স্টারলিংকের পাঠানো বিভিন্ন স্যাটেলাইটের কারণে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে থাকা ওজোনস্তরে চাপ পড়ছে বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। গত জানুয়ারি মাসে প্রায় ১২০টি স্টারলিংক স্যাটেলাইট পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে পুড়ে গেছে। এতে কৃত্রিম উল্কাবৃষ্টির সৃষ্টি হয়েছিল। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এই উল্কাবৃষ্টি দেখা গেছে।
পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে স্যাটেলাইটের পুনঃপ্রবেশ পরিবেশের জন্য গুরুতর হুমকি তৈরি করতে পারে। আর তাই বায়ুমণ্ডলের মেসোস্ফিয়ারে স্যাটেলাইটের পুনঃপ্রবেশ সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, স্যাটেলাইটের কারণে পৃথিবীর প্রতিরক্ষামূলক ওজোনস্তর ধারণকারী স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের ওপর চাপ তৈরি হচ্ছে। এসব স্যাটেলাইটের অ্যালুমিনিয়াম অক্সাইড কণা দীর্ঘমেয়াদে ওজোন স্তরের ক্ষতি করতে পারে। যখন স্যাটেলাইট বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে পুড়ে যায়, তখন স্যাটেলাইটের অনেক ধাতু ছড়িয়ে পড়ে। স্টারলিংকের স্যাটেলাইটেও প্রচুর পরিমাণে অ্যালুমিনিয়াম থাকে এবং স্যাটেলাইটগুলো প্রায় পাঁচ বছর কার্যকর থাকে। এরই মধ্যে ২০১৯ সালের মে মাসে পাঠানো ৬০টি স্যাটেলাইটের প্রায় সবই বায়ুমণ্ডলে পুনঃপ্রবেশ করছে।
ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির (ইএসএ) তথ্যমতে, মহাকাশে ২৮ হাজারের বেশি বস্তু রয়েছে, যার বেশির ভাগের অবস্থান নিম্ন কক্ষপথে। গত কয়েক বছরে প্রায় আট হাজার স্টারলিংক স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করা হয়েছে। আরও ১২ হাজার স্টারলিংক স্যাটেলাইট পাঠানোর কথা রয়েছে। অন্যদিকে অ্যামাজনসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানও ১৩ হাজারের মতো স্যাটেলাইট পাঠানোর পরিকল্পনা করেছে। এসব স্যাটেলাইট সাধারণত পৃথিবী থেকে ৫৫০ থেকে ১২০০ কিলোমিটার ওপরের কক্ষপথে ছুটতে থাকে। সময়কাল শেষ হয়ে গেলে এসব স্যাটেলাইট পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে টেনে আনা হয়। বায়ুমণ্ডলে পুনঃপ্রবেশের সময় এসব স্যাটেলাইট ঘণ্টায় প্রায় ২৭ হাজার কিলোমিটার গতিতে ছুটতে থাকে। এই উচ্চগতিতে ঘন বায়ুমণ্ডলের সঙ্গে স্যাটেলাইটের সংঘর্ষের ফলে প্রচণ্ড তাপ উৎপন্ন হয়। এর ফলে স্যাটেলাইট ধ্বংস হয়ে গেলেও উপাদানগুলো বাষ্পীভূত হয়ে বায়ুমণ্ডলের ওজোনস্তরের ক্ষতি করে।
বায়ুমণ্ডলে প্রবেশের সময় স্যাটেলাইটের বিভিন্ন ধাতু রাসায়নিক রূপান্তরের মধ্য দিয়ে যায়। তখন অ্যালুমিনিয়াম নতুন বিপত্তি তৈরি করে। এই উপাদান সাধারণত একটি স্যাটেলাইটের ভরের প্রায় ৪০ শতাংশ। গবেষণায় দেখা গেছে, একটি সাধারণ স্টারলিংক স্যাটেলাইটের ওজন প্রায় ২৫০ কেজি। সেই হিসাবে স্টারলিংকের একটি স্যাটেলাইটের কারণে বায়ুমণ্ডলে প্রায় ৩০ কেজি অ্যালুমিনিয়াম অক্সাইড কণা জমা হয়।
সূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস